নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্বাচনী আইনে নতুন বিধান যোগ করার সুপারিশ করেছে, যা বিদ্যমান আইনে উল্লেখ নেই। শনিবার কমিশন তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব প্রকাশ করে।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। বিভিন্ন খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে, যার মধ্যে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশন ইতিমধ্যে তাদের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছে। গত শনিবার এসব প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
উল্লিখিত ছয় সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে আগামীকাল শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে অন্তর্বর্তী সরকার। এই আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন ও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একটি পথনকশা আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পোলিং এজেন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করতে হবে, যা অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশের মাধ্যমে করতে পারে। এছাড়া কমিশন আরপিওতে আরও কিছু সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে।
নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন,নির্বাচনের সময় পোলিং এজেন্টরা প্রার্থীদের পক্ষে ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তবে গত দেড় দশকের জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের এজেন্টরা নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করলেও অন্য প্রার্থীদের এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখানো, কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া ও বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।
অন্তর্বর্তী সরকার আগামীকাল ছয় সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে, যাতে জাতীয় নির্বাচন ও সংস্কার বাস্তবায়নের পথনকশা নির্ধারিত হতে পারে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও তাদের প্রার্থীরা হুমকি, মামলা ও পুলিশের ধরপাকড়ের ভয়ে পোলিং এজেন্ট দিতে পারেননি।
জাতীয় নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট দেওয়ার বিষয়ে বলা আছে। এতে বলা হয়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট (প্রধান এজেন্ট) ভোট শুরুর আগে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের প্রতিটি ভোটকক্ষের জন্য একজন করে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দিতে পারবেন। তাঁরা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে লিখিতভাবে নোটিশ দেবেন। তবে পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে আইনে কিছু বলা নেই।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন বিদ্যমান আইনে সংশোধন আনার প্রস্তাব দিয়েছে, যার মধ্যে পোলিং এজেন্টদের নামের তালিকা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সভা করে পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন এবং যেকোনো ধরনের হয়রানি বা ভয়ভীতি জানাতে হবে নির্বাচন কমিশনকে, যা অনুসন্ধান ও ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে।
এ ছাড়া আইনে একটি উপধারা যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে সংস্কার কমিশন। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পোলিং এজেন্ট কোনোভাবেই প্রিসাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া ভোটকক্ষ বা ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করতে পারবেন না। যদি অনুমতি ছাড়া কোনো পোলিং এজেন্ট ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করেন, তাৎক্ষণিকভাবে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানাবেন।
বিগত সময়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভোটের ফলাফল তৈরির আগেই ফলাফলের বিবরণীতে (রেজাল্ট শিট) পোলিং এজেন্টদের সই নিয়ে রাখার ঘটনা দেখা গেছে। সংস্কার কমিশন প্রস্তাবে বলেছে, ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগে কোনো প্রার্থী বা তাঁর এজেন্ট বা পোলিং এজেন্টকে দিয়ে ফলাফলের বিবরণীতে সই করিয়ে নেওয়া যাবে না। এভাবে আগাম সই নিয়ে রাখা হলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট থাকাটা জরুরি, কারণ তারা প্রার্থীর প্রতিনিধি হিসেবে ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেন। এজেন্ট না থাকলে প্রার্থী জানতে পারেন না যে ভোটে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা। তিনি দাবি করেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দায়িত্ব পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যদি কোনো পোলিং এজেন্টকে ভয়ভীতি, বাধা বা হয়রানি করা হয়, তবে তাৎক্ষণিকভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা বা নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে।