পেঁয়াজ মজুদে একজোট ফড়িয়া-কৃষক-ব্যবসায়ী

পেঁয়াজের মৌসুম এখনো শেষ হয়নি, কিন্তু এর মধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে দাম। বাজারে আরও বাড়ার আশায় কৃষক, ফড়িয়া ও ব্যবসায়ীরা যার যার মতো করে মজুত করে রাখছেন পেঁয়াজ—ছাড়ছেনও সামান্য পরিমাণে। ফলে মোকামে দাম বাড়ছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে।

রাজধানীর মানিকনগর বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা ইউসুফ আলী ১২ এপ্রিল দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেন ৪৫ টাকা কেজিতে। বাছাই করা ভালো মানের পেঁয়াজ তখন ছিল ৫০ টাকা। (২০ এপ্রিল) রবিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, তিনি ৭০ টাকায় বিক্রি করছেন। অবশ্য এই বাজারে কোনো কোনো দোকানি ৬৫ টাকায়ও পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। ইউসুফ বলেন, হঠাৎ করে কী হলো, ঘাটে (পাইকারি বাজারে) পেঁয়াজের দাম হু হু করে বেড়ে গেল। কাস্টমারকে এর জবাব দিতে দিতে হয়রান হয়ে যাচ্ছি।

শুধু এই বাজারেই নয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা প্রায় সব বাজারে।রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০-৫২ টাকা কেজি। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, এদিন বিভিন্ন পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০-৫৩ টাকায়, যা ঠিক এক সপ্তাহ আগে ছিল ২৭ থেকে ৪৬ টাকা।

পেঁয়াজের বাজারে এমন হঠাৎ দাম বাড়ার কারণ জানতে (২০ এপ্রিল) রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ছয়টি টিম রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি বাজারে অনুসন্ধান চালায়। তারা বলছে, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহে কোনো সমস্যা নেই। দাম যেটা বেড়েছে, সেটা পেঁয়াজের উৎস বাজার ফরিদপুর, পাবনাসহ বিভিন্ন মোকামে বাড়ার কারণে। সেখানকার কিছু ফড়িয়া, ব্যবসায়ী ও কৃষক পেঁয়াজ সংরক্ষণের পর সুবিধামতো সময়ে বিক্রি করছেন।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ছয়টি টিমের একটির নেতৃত্বে ছিলেন অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, ‘আমি মিরপুর শাহ আলী বাজারে গিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেছি। পেঁয়াজের বাজারে অস্বাভাবিক কিছু দেখা যায়নি। শুধু একজনকে মূল্যতালিকা না থাকায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’

পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে পেঁয়াজচাষি, ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরাও প্রায় একই রকম তথ্য দিয়েছেন। তাঁরা জানান, জমিতে এখন আর কোনো পেঁয়াজ নেই। সব পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে উঠে গেছে। এসব পেঁয়াজের বেশির ভাগই কৃষক নিজেরা ও মজুতদারেরা কিনে সংরক্ষণ করছেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতে দাম আরও বাড়বে, এমন আশায় তাঁরা বাজারে কম পরিমাণে পেঁয়াজ আনছেন। এসব কারণে পেঁয়াজের মৌসুম হওয়া সত্ত্বেও বাজারে পণ্যটির দাম বেড়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৫ দিনের ব্যবধানে ফরিদপুরের পাইকারি বাজারে মণপ্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৫০০ টাকা। গত শনিবার ফরিদপুরের অন্যতম বড় পেঁয়াজের বাজার বোয়ালমারী উপজেলার ময়েনদিয়া বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৮৫০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকায় (কেজি ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা)। পেঁয়াজের আরেক উৎপাদনস্থল মানিকগঞ্জে গত শনিবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

অবশ্য পেঁয়াজের দাম বাড়ায় খুশি অনেক কৃষক। ফরিদপুর বোয়ালমারীর পেঁয়াজচাষি ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমি মোট ১০০ শতক জমিতে চাষ করেছিলাম। মৌসুমের শুরুতে আমাকে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়েছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ (৪২ কেজি)। অর্থাৎ ২৬-২৭ টাকা কেজি। এই দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে কৃষকের লোকসান হয়। এখন দাম বাড়ায় কৃষক লাভের মুখ দেখছে। যদিও কৃষকের হাতে এখন খুবটা পেঁয়াজ নেই। নগদ টাকার জন্য উৎপাদিত পেঁয়াজের বড় অংশই বিক্রি করে দিয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, দেশীয় কৃষকের কথা চিন্তা করে বর্তমানে পেঁয়াজের আমদানি অনুমোদন (ইমপোর্ট পারমিশন—আইপি) দেওয়া বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত আইপি দেওয়া হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে প্রতিবছর ৩৫ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়; যার ৮০-৮৫ শতাংশই মার্চ-এপ্রিল মৌসুমে। তবে ২৫ শতাংশ নানাভাবে নষ্ট হওয়ায় দেশে বছর শেষে ৬-৭ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!