জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ পুলিশের গাড়িগুলোর পরিবর্তে নতুন যানবাহন কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এবার পুলিশের জন্য ২০০টি ডাবল কেবিন পিকআপ (জিপ) কেনা হচ্ছে। সরাসরি ক্রয়পদ্ধতির মাধ্যমে রাষ্ট্রমালিকানাধীন প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে এসব গাড়ি সংগ্রহ করা হবে। প্রতিটি গাড়ির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৬ লাখ টাকা, যার ফলে মোট ব্যয় হবে ১৭২ কোটি টাকা।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ৪ জুন (বুধবার) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় পুলিশের জন্য গাড়ি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। পুলিশের অপারেশনাল কাজের প্রয়োজন মেটাতে এই গাড়িগুলো কেনার প্রস্তাব দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা জানান, প্রস্তাবটি অনুমোদন পেয়েছে।
অনুমোদনের কারণ ব্যাখ্যা করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘পুলিশের বহু গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাই নতুন গাড়ি কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, ঢাকার আশপাশে পুলিশের জন্য একটি হাউজিং কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে।
সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে গাড়ি কেনার এই প্রস্তাব গত ২৯ এপ্রিল অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে নীতিগতভাবে অনুমোদন পায়। জননিরাপত্তা বিভাগ ওই বৈঠকে জানায়, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থান ও পরবর্তী সহিংসতায় ৪৬০টি থানা ও পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে পুলিশের বহু যানবাহন পুড়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা বজায় রাখতে জরুরি ভিত্তিতে এসব গাড়ি কেনা প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
বর্তমানে দেশে ৬৬৪টি থানা, ২১৫টি তদন্তকেন্দ্র, ৪৫৯টি ফাঁড়ি ও ১৬৭টি ক্যাম্প রয়েছে। সম্প্রতি একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে পুলিশ সদর দপ্তর সরকারের শীর্ষ পর্যায়কে জানিয়েছে, জুলাইয়ের আন্দোলনে পুলিশের কিছু অপেশাদার, দুর্নীতিপরায়ণ, ক্ষমতালোভী ও উচ্ছৃঙ্খল কর্মকর্তার কারণে জনগণের মধ্যে পুরো পুলিশ বাহিনী নিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বিস্ফোরণে কিছু দুষ্কৃতকারী পুলিশের স্থাপনা ও যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ৫২৬টি গাড়ি পুড়ে যায় এবং ৫৩৩টি ভাঙচুর করা হয়। সব মিলিয়ে ১ হাজার ৫৯টি যানবাহন ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা।
সূত্রগুলো জানায়, গত বছরের শেষ দিকে পুলিশ সদর দপ্তর নতুন যানবাহন কেনার প্রস্তাব জননিরাপত্তা বিভাগে পাঠায়। এতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত সময়কালে দেশের ১০৫টি থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে যানবাহন আগুনে পুড়ে যায়। পুলিশের কার্যক্রম সচল রাখা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সদর দপ্তর শুরুতে ৩৬০ কোটি টাকার বরাদ্দ চেয়ে জননিরাপত্তা বিভাগে প্রস্তাব জমা দেয়। পরে, ৮ জানুয়ারি জননিরাপত্তা বিভাগ যানবাহন কেনার যৌক্তিকতা তুলে ধরে অর্থ বিভাগে একটি চিঠি পাঠায়।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা পূরণে শুরুতে ৩৮টি জিপ, ২৫০টি ডাবল কেবিন পিকআপ, ৫৬টি সিঙ্গেল কেবিন পিকআপ, ২টি করে প্যাট্রল কার ও মাইক্রোবাস, ২টি অ্যাম্বুলেন্স, ২০টি ট্রাক, ২টি বাস, ১২টি প্রিজন ভ্যান, ২৮৫টি মোটরসাইকেল, ৮টি রেকার, ৪টি এপিসি (আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার) ও ১টি জলকামানসহ মোট ৭২২টি যানবাহন কেনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। তবে পরবর্তী সময়ে যাচাই-বাছাই শেষে প্রস্তাবিত যানবাহনের সংখ্যা কিছুটা কমিয়ে আনা হয়।