** অর্থ মন্ত্রণালয় ভুল করেছে, এনবিআর থেকে বারবার বলা হলেও আমলে নেয়া হয়নি
** কর্মচারীদের ক্ষোভের মুখে এনবিআর থেকে ২৬ নভেম্বর সচিবকে চিঠি দেওয়া হয়
** ১৫ ডিসেম্বর অর্থ বিভাগ পুরাতন অর্গানোগ্রামে পদোন্নতি হবে জানিয়ে চিঠি দিয়েছে
অবশেষে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) পদে পদোন্নতির নতুন শর্ত থাকছে না। অর্থাৎ নতুন অর্গানোগ্রামে নয়, পুরাতন অর্গানোগ্রামে এই পদে পদোন্নতি পাবেন কর্মচারীরা। অর্থ বিভাগ থেকে রোববার (১৫ ডিসেম্বর) অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগকে এই সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে। নতুন শর্তারোপের ফলে কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এই নিয়ে কর্মচারীরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন। এ নিয়ে “ফিডার পদ পূরণে আজগুবি শর্ত, হতাশ কর্মচারীরা”’-শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিউজ হয়। পরে বিষয়টি সংশোধন করতে এনবিআর থেকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিবকে চিঠি দেয়া হয়। সচিব অর্থ বিভাগকে সংশোধনের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন। এরই প্রেক্ষিতে অর্থ বিভাগ এই সংশোধনী দিয়েছে। শর্ত বাতিল ও পুরাতন অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী পদোন্নতির এই সিদ্ধান্ত নেয়ায় কর্মচারীরা এনবিআর ও এনবিআর চেয়ারম্যানকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
এনবিআর সূত্রমতে, ১৫ ডিসেম্বর অর্থ বিভাগের সহকারী সচিব মো. মোশাররফ হোসেন সই করা একটি চিঠি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও এনবিআর চেয়ারম্যানকে পাঠানো হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, ক্যাডার বর্হিভূত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা (শুল্ক, আবগারি ও ভ্যাট) নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী আইন, ২০০০ (২০১০ সনে সংশোধিত)-এর তফসিলে ক্রমিক নং ২-এর বিপরীতে ৫নং কলামে উল্লেখকৃত প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অনুযায়ী পূরণযোগ্য।’ অর্থাৎ ক্যাডার বর্হিভূত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদোন্নতির ক্ষেত্রে আগের নিয়ম মানা হবে। কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সম্প্রসারণে এই পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে যে শর্তারোপ করা হয়েছে—তা সংশোধন করা হয়েছে।
সূত্রমতে, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে আগের শর্ত ও বিধিমালা বহাল রাখতে ২৮ নভেম্বর এনবিআর সদস্য (শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসন) ফারজানা আফরোজ অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানকে চিঠি দেয়। ৯ ডিসেম্বর অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব বিষয়টি নিয়ে অর্থ বিভাগের সচিবকে চিঠি দেয়। এরই প্রেক্ষিতে ১৫ ডিসেম্বর আগের শর্তে পদোন্নতি হবে জানিয়ে অর্থ বিভাগ থেকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগকে চিঠিতে জানানো হয়েছে।
অপরদিকে, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে আর্গের শর্ত ও বিধিমালার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এনবিআর চেয়ারম্যান ও অর্থ বিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ভ্যাট ও কাস্টমস বিভাগের কর্মচারীরা। তারা বলছেন, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগ এবং এনবিআর চেয়ারম্যান উদ্যোগ নেয়ায় শত শত কর্মচারী পদোন্নতির হয়রানি থেকে বেঁচে গেছেন। কর্মচারীরা জানিয়েছেন, সঠিক সময়ে এবং আগের নিয়মে পদোন্নতি দেওয়া হলে কর্মচারীরা রাজস্ব আদায়ে আরো বেশি মনোযোগী হতে পারবেন।
এনবিআর সূত্রমতে, নবসৃষ্ট ভ্যাট কমিশনারেট ও কাস্টম হাউজগুলোর অর্গানোগ্রাম (সাংগঠনিক কাঠামো) চূড়ান্ত করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। ১২ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় অর্গানোগ্রাম চূড়ান্ত করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে পাঠিয়েছে। তবে এসব দপ্তরে কর্মচারী পদায়নের ক্ষেত্রে বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি ও নতুন নিয়োগ দেওয়া হবে। সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে যে শর্ত রাখা হয়েছে—তা নিয়ে সারা দেশে কর্মরত উচ্চমান সহকারী, সাঁটলিপিকার, সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক ও সিপাহি পদমর্যাদার কর্মচারীদের মাঝে চরম অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এসব পদে এনবিআরে মাঠ পর্যায়ের সব অফিসে ৩ হাজারের বেশি কর্মচারী কাজ করছেন। নতুন অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী, ৩ ধাপে নবসৃষ্ট ভ্যাট কমিশনারেট ও কাস্টম হাউজগুলোয় ৩ হাজার ৫৯৭টি (প্রথম পর্যায়ে ৩ হাজার ৬৬টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৩৮টি এবং তৃতীয় পর্যায়ে ২৯৩টি) পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। নবম গ্রেড (প্রথম শ্রেণি) তদূর্ধ্ব পদ সরকারি চাকরি (কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ) নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী পূরণ করা হবে। বাকি পদগুলোয় বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতির বিধান রাখা হয়েছে।
সূত্রমতে, ক্যাডারবহির্ভূত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা (শুল্ক, আবগারি ও ভ্যাট) নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলি আইনে বলা আছে— দ্বিতীয় শ্রেণির সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে শূন্য পদের বিপরীতে ৫০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ ও ৫০ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত অফিস সুপারিনটেনডেন্ট, প্রধান সহকারী, সাঁটলিপিকার, উচ্চমান সহকারী, সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক, কম্পিউটার অপারেটর, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, পরিসংখ্যান অনুসন্ধায়ক, ক্যাশিয়ার পদে ৫ বছর; অফিস সহকারী, নকশাবিদ, পাঞ্চকার্ড অপারেটর, পেশকার ও রেকর্ড কিপার পদে ৭ বছর; সাব-ইন্সপেক্টর পদে ৪ বছর অথবা সিপাহি পদে ১০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা লাগবে। একই সঙ্গে স্নাতক ডিগ্রিসহ বিভাগীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
অপরদিকে, নতুন অর্গানোগ্রামে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন নিয়োগের পাশাপাশি তৃতীয় শ্রেণির পদ থেকে পদোন্নতির বিধান রাখা হয়। অর্গানোগ্রামে উল্লেখ করা হয়েছে—সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হিসাবে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ১২তম গ্রেডের (কম্পিউটার অপারেটর, সাঁটলিপিকার) কর্মচারীদের ৬ বছরের, ১৩-১৪তম গ্রেডের (উচ্চমান সহকারী ও সাঁটলিপিকার) কর্মচারীদের ৮ বছরের, ১৫-১৬তম বেতন গ্রেডের (গাড়িচালক) কর্মচারীদের এবং ১৭-১৮তম বেতন গ্রেডের (সিপাহি) কর্মচারীদের ১৬ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা লাগবে। গ্রেড-১১ এর কম্পিউটার অপারেটর ও হিসাবরক্ষক পদ নতুন অর্গানোগ্রামে উল্লেখ নেই। অর্থাৎ নতুন অর্গানোগ্রামে প্রতি পদে চাকরির অভিজ্ঞতার সীমা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই নতুন শর্তারোপ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে এসব পদে কর্মরতদের মাঝে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়।