পুঁজিবাজারে করপোরেট কর ছাড়ের প্রস্তাব

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করপোরেট করহারের বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনের শর্তে করহারে কিছুটা পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। সোমবার (২ জুন) বাজেট উপস্থাপনকালে তিনি এ কথা বলেন। অন্যান্য কোম্পানির করহার অপরিবর্তিত থাকবে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি উৎসাহিত করতে করহারে পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি লাভজনক ও খ্যাতনামা কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি বাড়াতে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে।

প্রস্তাব অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়, ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করলে করহার চলতি অর্থবছরের মতোই অপরিবর্তিত থাকবে। তবে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির জন্য এই সুযোগ বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে তারা আর আড়াই শতাংশ করছাড় সুবিধা পাবে না। অন্যদিকে, আগামী অর্থবছরের আয়ের ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য ব্যাংক লেনদেনের কঠোর শর্ত কিছুটা সহজ করা হয়েছে, যাতে তারা কর ছাড় সুবিধা আরও সহজে নিতে পারে।

নতুন বাজেট প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, যদি তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি সব ধরনের আয় শুধুমাত্র ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রহণ করে, তাহলে তাদের করহার হবে ২০ শতাংশ। তবে এই শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে করহার হবে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমানে এই করহার নির্ধারিত হয় সব ধরনের আয় এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন করার ভিত্তিতে। নতুন প্রস্তাবে শর্ত কিছুটা সহজ করা হয়েছে, শুধু আয় ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করলেই করছাড় সুবিধা মিলবে।

তবে কঠিন এই শর্ত বাস্তবে কোনো কোম্পানি পূরণ করতে না পারায়, ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরেই তা সহজ করার দাবি ছিল। অবশেষে আসন্ন বাজেটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই দাবি আমলে নিয়েছে। অন্যদিকে, পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এমন কোম্পানির জন্য কোনো শর্ত নেই; তাদের জন্য করহার সরাসরি নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

বর্তমানে পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এমন কোম্পানিগুলো শর্ত পূরণ করলে ২৫ শতাংশ কর দিতে পারে। আয়কর আইন অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত ও পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে শর্ত ছিল একই — যেকোনো আয়, প্রাপ্তি এবং ৫ লাখ টাকার বেশি একক লেনদেন ও বার্ষিক ৩৬ লাখ টাকার বেশি ব্যয় বা বিনিয়োগ ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে করতে হবে। এই শর্ত পূরণ করলে তারা আড়াই শতাংশ কর ছাড় পেত।

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও লেনদেন বাড়াতে সিকিউরিটিজ লেনদেনের মোট মূল্যের ওপর ব্রোকারেজ হাউজ থেকে উৎসে কর হার ০.০৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.০৩ শতাংশ করা হয়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংকের করহারও কমিয়ে ৩৭.৫ শতাংশ থেকে ২৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে। অন্য সব ক্ষেত্রে করহার আগের মতোই অপরিবর্তিত থাকবে।

বর্তমান ও প্রস্তাবিত করহার

বর্তমানে কোম্পানি করদাতাদের জন্য বিভিন্ন খাতভিত্তিক করহার প্রযোজ্য। আয়কর আইনে সংজ্ঞায়িত পাবলিকলি ট্রেডেড না হওয়া কোম্পানির করহার ২৭.৫০ শতাংশ, শর্ত পূরণ করলে ২৫ শতাংশ। তবে আসন্ন অর্থবছরের আয়ের জন্য কোনো শর্ত ছাড় ছাড়াই করহার নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭.৫ শতাংশ।

পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার আইপিও মাধ্যমে হস্তান্তর হলে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার হবে ২২.৫০ শতাংশ এবং শর্ত পূরণ করলে ২০ শতাংশ। নতুন অর্থবছরের আয়ের ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল রেখে একই বিধান প্রযোজ্য থাকবে। মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার বর্তমানে ৩৭.৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে আসন্ন অর্থবছরে ২৭.৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!