বিদায়ী ২০২৪–২৫ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিক (এপ্রিল–জুন) শেষে তৈরি পোশাক রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ৯১১ কোটি মার্কিন ডলারে, যা আগের প্রান্তিকের (জানুয়ারি–মার্চ) তুলনায় ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি এই রপ্তানি হ্রাসের প্রধান কারণ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত এপ্রিল–জুন প্রান্তিকে তৈরি পোশাক খাত একাধিক বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন ওই সময় রপ্তানির সক্ষমতা কমিয়ে দেয়। নীতিগত পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা, যা পরে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়। যদিও শুল্কটি তখনও কার্যকর হয়নি, তবু এ ঘোষণায় ক্রয়াদেশ স্থগিত ও অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পায়।
মার্কিন প্রশাসন গত ৩১ জুলাই অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশি পণ্যের পাল্টা শুল্কের হার সংশোধন করে। এতে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর শুল্ক কমে ২০ শতাংশে নেমে আসে, যা গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়েছে। এই হার বাংলাদেশের জন্য প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা তৈরি করেছে, কারণ মার্কিন বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের শুল্কও ২০ শতাংশ। অন্যদিকে ভারতের শুল্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ এবং চীনের শুল্ক বর্তমানে ৩০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধর্মঘটের কারণে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ঘটে, যা পণ্যের চালান প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং সময়মতো পণ্য সরবরাহকে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করে। পাশাপাশি, বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রতিকূলতা, দেশে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও রপ্তানি বাজারের সীমিত বৈচিত্র্যের কারণে রপ্তানির গতি মন্থর হয়ে পড়ে।
গত ১২ মে সরকার এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করে। এরপর এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকল পক্ষের মতামত অনুযায়ী যৌক্তিক সংস্কারের দাবি নিয়ে প্রায় দুই মাস ধরে আন্দোলন চালান। ২৮ ও ২৯ জুন তারা সারাদেশে কাজ বন্ধ রাখেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন প্রত্যাহার হওয়ার পর এনবিআর কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। গত মাসের মাঝামাঝি এনবিআরের কর্মচারীদের কর্মবিরতি ও শাটডাউন কর্মসূচির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।
** জুনে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৪৪% বৃদ্ধি
** ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ জানতে চেয়েছে সরকার
** যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কহার কার্যকর আজ থেকে
** জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি সামান্য বৃদ্ধি