পারফিউম আমদানিতে ৫ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি!

রেনস করপোরেশন পারফিউম বা সুগন্ধি আমদানিতে শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার জন্য একের পর এক মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সিঙ্গাপুর থেকে ব্র্যান্ডেড পারফিউম আমদানি করলেও, তা সাধারণ ক্যাটাগরিতে মাত্র ১০ ডলারে শুল্কায়নের জন্য বিল অব এন্ট্রি জমা দেয়। অথচ এসব পারফিউম ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, ইংল্যান্ড ও আমেরিকার বিখ্যাত ব্র্যান্ডের। প্রতিষ্ঠানটি ৯ হাজার কেজি পণ্যের চালানের মূল্য ঘোষণা করেছে মাত্র ১৮ হাজার ডলার, অথচ বাজার যাচাইয়ে এসব পণ্যের দাম অনেক বেশি। এইভাবে ধাপে ধাপে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে রেনস করপোরেশন সরকারকে প্রায় ৫ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

সূত্র জানায়, সিঙ্গাপুর থেকে ইউরোপ-আমেরিকার বিখ্যাত ব্র্যান্ডের ৯ হাজার ১৯১ কেজি পারফিউম আমদানি করেছে চট্টগ্রামের রেনস করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটি পেকো রেবেন, প্রাডা প্যারাডক্স, অলিম্পিয়া, ব্ল্যাক এবং আরমানি ব্র্যান্ডের পারফিউম নিয়ে এসেছে। ৩১ ডিসেম্বর, পণ্য চালান খালাসের জন্য আইসিডি কমলাপুরে বিল অব এন্ট্রি জমা দেয়, যার নম্বর সি-২৪১৫৮। তারা পণ্য চালানের মূল্য ১৮ হাজার ৫৬৪ ডলার ঘোষণা করে এবং প্রতি লিটার পারফিউমকে কাস্টমসের সর্বনিম্ন ট্যারিফ অনুযায়ী খালাস করতে চায়।

তবে, এসব ব্র্যান্ডেড পারফিউমের দাম কম দেখানোর পর শুল্ক কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয় এবং তারা যাচাই-বাছাই শুরু করে। ফলস্বরূপ, এটি সামনে আসে যে, এসব পারফিউমের বাজারমূল্য ঘোষিত দামের চেয়ে অনেক বেশি। দেশে এসব ব্র্যান্ডের ৫০ এমএল পারফিউমের দাম ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। এখন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ উচ্চ শুল্ক আরোপ করে এসব পারফিউম প্রতি লিটার ১৭৫ ডলার হিসেবে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

জানতে চাইলে কাস্টম হাউস আইসিডি কমলাপুরের কমিশনার ড. নাহিদা ফরিদী বলেন, ‘আইসিডি কমলাপুর দিয়ে কখনো এই ধরনের পণ্য চালান আগে আসেনি। আমরা যখন যাচাই-বাছাই করে দেখতে পেলাম বাস্তবে এসব পণ্যের দাম অনেক বেশি, তখন চালানটি আটকে দিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। মূল কথা হলো, সরকারের শুল্ক ফাঁকি দিতে কেউ অপচেষ্টা করলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।’

রেনস করপোরেশন পণ্যের চালানটি সিঙ্গাপুর থেকে আনলেও পণ্যের মূল উৎস দেশ ইউরোপ-আমেরিকা ও আরব আমিরাত। সিঙ্গাপুর থেকে চালানটি আনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা উপেক্ষা করে পণ্যের দাম কম দেখিয়ে এলসি খোলা হয় এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের একটি শাখায়। তবে, এই ক্ষেত্রে বাকি টাকা কীভাবে পরিশোধ করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রবিউল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এলসি নম্বর উল্লেখ করে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, ঈদ সামনে রেখে এই ধরনের পণ্যের আমদানি বেড়ে যায়। যদিও আইসিডি কমলাপুরে এই ধরনের চালান আটক করা হয়েছে, তবে অভিযোগ রয়েছে যে দেশের বৃহত্তম কাস্টম হাউস চট্টগ্রাম দিয়ে কাস্টমসের সর্বনিম্ন ভ্যালুতে শুল্কায়ন করা হচ্ছে। বড় কাস্টম হাউস হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে কেউ তেমন তদন্ত করেন না, এমন অভিযোগ করেছেন শুল্ক কর্মকর্তারা। তাদের মতে, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দিয়ে গত কয়েক মাসে যাওয়া পারফিউম পণ্যের চালান পিসিএ বা পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট করলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। পাশাপাশি, কমমূল্যে এলসি খোলার আড়ালে বড় ধরনের অনিয়ম ঘটছে কি না, তা যাচাই-বাছাই করার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

রেনস করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান এম এম কোম্পানির স্বত্বাধিকারী মনোয়ার হোসেন জানান, পারফিউমের চালান সব কাস্টম হাউসের মাধ্যমে খালাস হচ্ছে এবং এই পণ্যের সর্বনিম্ন ট্যারিফ ১০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে তিনি আরও দাবি করেন, কাস্টম হাউসগুলো প্রতি লিটার ১৭ ডলার হিসেবে শুল্কায়ন করছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!