পাঁচ লাখ টাকা আয়করে মিলবে অস্ত্রের লাইসেন্স

ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার শর্ত কঠোর করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, পিস্তল, রিভলবার ও রাইফেলের লাইসেন্স পেতে হলে পরপর তিন অর্থবছরে প্রত্যেক বছর পাঁচ লাখ টাকা করে আয়কর দিতে হবে। অন্যদিকে, শটগান পাওয়ার ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী তিন অর্থবছরে ধারাবাহিকভাবে দুই লাখ টাকা করে আয়কর দেওয়ার প্রমাণ দাখিল করতে হবে।

আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহারে নতুন শর্ত যুক্ত করে নীতিমালা সংশোধন করেছে সরকার। সংশোধিত নীতিমালাটি ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আগে, ২০১৬ সালের নীতিমালা অনুযায়ী, পিস্তল, রিভলবার ও রাইফেলের লাইসেন্স পেতে তিন অর্থবছরে তিন লাখ টাকা করে আয়কর দিতে হতো। শটগানের ক্ষেত্রে ওই অঙ্ক ছিল এক লাখ টাকা করে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়া কঠিন করতে লাইসেন্স ফি দ্বিগুণ করা হয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যক্তি পর্যায়ে পিস্তল ও রিভলবারের লাইসেন্স ইস্যুর ফি ৩০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ হাজার টাকা করা হয়েছে। বন্দুক, শটগান ও রাইফেলের লাইসেন্স ফিও ২০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে এখন ৪০ হাজার টাকা। লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রেও ফি দ্বিগুণ হয়েছে। পিস্তল ও রিভলবারের নবায়ন ফি ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা, আর বন্দুক, শটগান ও রাইফেলের নবায়ন ফি ৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০ হাজার টাকা।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু ফি ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। লাইসেন্স নবায়নের ফিও দ্বিগুণ হয়েছে—আগে যেখানে ৫ হাজার টাকা লাগত, এখন লাগছে ১০ হাজার টাকা।

অন্যান্য প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু ফি ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অস্ত্রের ডিলার ও মেরামতকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য এই ফি ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ হাজার টাকা করা হয়েছে। এছাড়া, প্রবাসী বাংলাদেশি বা দ্বৈত নাগরিকদের আগ্নেয়াস্ত্রের আবেদন করতে হলে পরপর তিন বছর ১২ লাখ টাকা করে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রমাণ এবং বিদেশে আয়কর দেওয়ার সনদ দেখাতে হবে।

আয়কর না দিয়েও যাঁরা পাবেন অস্ত্রের লাইসেন্স

কিছু পেশাজীবী বিশেষ সুবিধা হিসেবে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেতে পারেন, যাঁদের জন্য আয়কর দেওয়ার শর্ত প্রযোজ্য নয়। এ তালিকায় রয়েছেন স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং সমমর্যাদার কর্মকর্তারা। আয়কর ছাড়াই অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার সুযোগ রয়েছে সিটি করপোরেশনের মেয়র ও ‘ক শ্রেণির’ পৌরসভার মেয়রদেরও।

এছাড়া জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাংবিধানিক পদে কর্মরত ব্যক্তিরা, সামরিক বাহিনীর প্রথম শ্রেণির কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত), এবং শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, বিজ্ঞান কিংবা গবেষণায় জাতীয় পর্যায়ে অবদান রাখা ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও এই সুবিধার আওতায় পড়েন—তবে তাঁদের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে।

নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, সনদপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, সাংবিধানিক পদে কর্মরত ব্যক্তি এবং জাতীয় বেতন স্কেলের ষষ্ঠ বা তার ঊর্ধ্বতন গ্রেডের চাকরিজীবী বা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পিস্তল, রিভলবার, শটগান ও রাইফেলের লাইসেন্স ফি ও নবায়ন ফি নেওয়া হবে না। তবে নীতিমালায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত হলে তিনি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য যোগ্য হবেন না। একইভাবে, যাঁরা ফৌজদারি আদালতের মাধ্যমে দণ্ডপ্রাপ্ত, তাঁরা সাজা শেষ হওয়ার পর পাঁচ বছরের মধ্যে অস্ত্রের লাইসেন্সের আবেদন করতে পারবেন না।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!