পাঁচ লাখের নিচে ঘুস নেন না এআরও জাকির!

মোংলা কাস্টম হাউস

** মোংলা কাস্টম হাউসে কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার কাউকে তোয়াক্কা করেন না জাকির
** চাহিদামতো ঘুস না দিলে জাকির হয়রানি শুরু করেন, কাগজ ঠিক থাকলেও রেহাই নেই
** ১১ মাসে কোটি টাকা ঘুস থেকে কামিয়েছে জাকির, এই কর্মকর্তা থেকে নিস্তার চান ব্যবসায়ীরা

তিনি একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও)। চলে ক্যাডার কর্মকর্তার মতো। উর্ধ্বতন কর্মকর্তা যেন তার কাছে কিছুই না। ব্যবসায়ী-সিঅ্যান্ডএফ তো যেন বাড়ির চাকর। কাগজ ঠিক থাকলেও তার কাছে সবই ভুয়া-ভুল কাগজ। কাগজ আটকে রাখা, ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফকে হয়রানি তার নেশা। মূলত ঘুস না দিলেই তার হাত থেকে কারো রেহাই নেই। আর তার সর্বনিম্ন ঘুসের রেইট ৫ লাখ টাকা। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনাকেও থোড়াই কেয়ার করেন এই কর্মকর্তা। মোংলা কাস্টম হাউসের এই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হলেন মুহাম্মদ জাকির হোসেন। মোংলা কাস্টম হাউসে হয়রানিসহ নানান কারণে ব্যবসায়ীরা যেতে চান না। আর গেলেই জাকিরের মতো কর্মকর্তাদের হয়রানি আর ঘুস থেকে ব্যবসায়ীদের রেহাই নেই। মাত্র ১১ মাস মোংলা কাস্টম হাউসে পদস্থ মুহাম্মদ জাকির হোসেন। এই ১১ মাসে ঘুসের হাট বসিয়েছেন জাকির। কামিয়েছেন প্রায় কোটি টাকা। জাকির ঘুস ও হয়রানির একটি অভিযোগ বিজনেস বার্তার হাতে রয়েছে।

এনবিআর সূত্রমতে, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মুহাম্মদ জাকির হোসেন ২০২৪ সালের ৫ ডিসেম্বরের আগে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটে ছিলেন। সেখানেও ঘুস, দুর্নীতিসহ নানান অভিযোগ উঠে। পরে ৫ ডিসেম্বর তাকে বদলি করে মোংলা কাস্টম হাউসে দেওয়া হয়।

অপরদিকে, এক ব্যবসায়ীর দেওয়া লিখিত অভিযোগে বলা হয়, মুহাম্মদ জাকির হোসেন মোংলা কাস্টম হাউসে যোগদানের পর থেকে ঘুস নিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেন। সে তার সহকর্মী ও ব্যবসায়ীদের বলে বেড়ায়, ১০ লাখ টাকা ঘুস দিয়ে মোংলা কাস্টম হাউসে বদলি হয়েছি। সেই টাকা তুলতে হবে। আর হাউসে পোস্টিং পাবো কিনা জানি না। এই হাউস থেকে মোটা অংকের টাকা তুলে নিতে হবে। সেজন্য ব্যবসায়ীর কাগজ ঠিক থাকুক আর নাই থাকুক, ৫ লাখ টাকার নিচে ঘুস আমি নেয় না। এমন উক্তি তিনি তার সহকর্মী ও ব্যবসায়ীদের সব সময় করে থাকেন। কাগজ ঠিক থাকলেও হয়রানি আর পোর্ট চার্জের ভয়ে ব্যবসায়ীরা জাকিরকে ঘুস দিতে বাধ্য হন। ঘুস নেয়া যেন জাকিরের অধিকারের পরিণত হয়েছে।

অভিযোগে আরো বলা হয়, জাকির যোগদানের পর থেকে একাধিক ব্যবসায়ীকে ঘুসের জন্য হয়রানি করেছেন। যোগদানের পরপরই এক ব্যবসায়ীর সব কাগজ ঠিক থাকার পরও জাকিরকে ১০ লাখ টাকা ঘুস দিতে হয়েছে। এরপরও জাকির এই ব্যবসায়ীর কোন বিল অব এন্ট্রি পড়লে হয়রানি শুরু করেন। তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে রাজস্ব কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কমিশনার পর্যন্ত-কারো নির্দেশনা মানতে চান না জাকির। উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে বারবার সাবধান করলেও সে শোধরাইনি। উল্টো ঘুসের জন্য আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। আবার এমনও হয়েছে, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে ঘুস নিয়ে তা মেরে দিয়েছেন জাকির-এমন ঘটনাও ঘটেছে। ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা জাকিরের নামে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে একাধিকবার নালিশ করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

অভিযোগে বলা হয়, জাকির প্রতি ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ থেকে চালান প্রতি ৫ লাখ টাকার উপরে ঘুস নেন। সে হিসেবে ১১ মাসে অন্তত কোটি টাকা ঘুস হিসেবে নিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের হয়রানির মাধ্যমে এই ঘুস নিয়েছেন। যে শাখায় বদলি করা হয়েছে, সেই শাখায় জাকির ঘুসের দোকান খুলে বসেছেন। শুধু ঘুস নেয়া হয়। বন্দর থেকে পণ্য চুরি সিন্ডিকেটের সঙ্গে জাকিরের যোগাযোগ রয়েছে। এই চোর চক্র থেকে জাকির টাকা নেন বলে বন্দরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। মোংলা বন্দরে ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার ঘুসের দোকান থেকে বাঁচাতে এনবিআর চেয়ারম্যানের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিজনেস বার্তার পক্ষ থেকে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মুহাম্মদ জাকির হোসেনের ব্যক্তিগত নাম্বারে ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। বক্তব্যের বিষয় হোয়াটসঅ্যাপে লিখে দেওয়া হলে তিনি সিন করেন। তবে কোনো জবাব দেননি।

এই বিষয়ে মোংলা কাস্টম হাউসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজনেস বার্তাকে বলেন, জাকির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা তেমন মানেন না। ঘুস নিয়ে হয়রানির একাধিক অভিযোগ শুনেছি। তবে হাউস থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!