পাঁচ মহাসড়কে ৭০ রেস্টুরেন্ট, ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ হচ্ছে

মহাসড়কের পাশে থাকা হোটেল-রেস্টুরেন্ট মানে খাবারের গলাকাটা দাম। সঙ্গে গাড়ির যাত্রী বা ভোক্তাদের কাছ থেকে নিয়ম করে নেওয়া হয় ভ্যাট। তবে সেই ভ্যাটের বেশিরভাগ অংশ সরকারি কোষাগারে জমা হয় না। আবার কিছু অসাধু ভ্যাট কর্মকর্তাদের সঙ্গে রেস্টুরেন্ট মালিকদের দফারফায় ভোক্তা বা যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা ভ্যাট সরকার পায় না। দেশের পাঁচটি মহাসড়কের পাশে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া নামিদামি এমন ৭০টি হোটেল-রেস্টুরেন্টের তালিকা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এসব হোটেল-রেস্টুরেন্টে ভ্যাট ফাঁকি রোধে ইলেকট্রনিক্স ফিসক্যাল ডিভাইস বা ইএফডি মেশিন বসানো হচ্ছে। গত মাসে এনবিআরের এক বৈঠকে ইএফডি মেশিন বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় এনবিআর।

এনবিআর সূত্রমতে, এনবিআর পাঁচটি মহাসড়কের পাশে ৭০টি নামিদামি হোটেল-রেস্টুরেন্টের তালিকা তৈরি করেছে। দেশের ১২টি ভ্যাট কমিশনারেটের মধ্যে পাঁচটি ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন এই ৭০টি হোটেল-রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটের আওতায় ছয়টি, কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেটের আওতায় ২৭টি, রাজশাহী ভ্যাট কমিশনারেটের আওতায় ১৫টি, রংপুর ভ্যাট কমিশনারেটের আওতায় ১২টি ও খুলনা ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন ১১টি। ইএফডি মেশিন বসানোর দায়িত্বে থাকা জেনেক্স ইনফোসিস থেকে সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি ও হোটেল-রেস্টুরেন্টের তালিকা দেওয়া হয়েছে।

Restrurant 02

চিঠিতে বলা হয়েছে, মহাসড়কে অবস্থিত হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে ভোক্তারা ভ্যাট দিচ্ছে। কিন্তু ইএফডি ভ্যাট চালান ইস্যু না করায় সরকার সেই ভ্যাট পাচ্ছে না বলে সচেতন ভোক্তা ও ভ্রমণকারীদের অভিযোগ রয়েছে। এনবিআরের এক সভায় মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ এর ধারা ও ধারা ১৩৪ এর আলোকে মহাসড়কে অবস্থিত ভ্যাটযোগ্য সকল হোটেলে ও রেস্তোরাঁয় ইএফডি মেশিন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মহাসড়ক সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটের সঙ্গে সমন্বয় করে জেনেক্স ইনফোসিস প্রতিষ্ঠানকে ইএফডি মেশিন স্থাপনের প্রক্রিয়া অবিলম্বে কার্যকর করার অনুরোধ করা হয়েছে। এনবিআরের নির্দেশনামতে, এসব প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।

যেসব হোটেল-রেস্টুরেন্টে ইএফডি বসানো হচ্ছে

কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা উত্তরের অধীনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে রয়েছে নামিদামি ছয়টি হোটেল-রেস্টুরেন্ট। যার মধ্যে রয়েছে-গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তায় হোটেল নিরিবিলি-২, নিরিবিলি পিৎজা কিং অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, গজারিয়া পাড়ায় ড্রিম হেভেন রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড চাইনিজ, ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে বাঘের বাজারের পুষ্পদাম চাইনিজ অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, শ্রীপুর মাওনায় আরএস ক্যাফে অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ও খুশি মিঠাই ঘর। কুমিল্লা কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অধীনে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের পাশে রয়েছে নামিদামি ২৭টি হোটেল-রেস্টুরেন্ট। যার মধ্যে রয়েছে-পদুয়ার বাজারের হোটেল নুরজাহান, আহমেদনগরের স্যান্ডু হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, দুর্গাপুরের মিয়ামি রিসোর্ট-৩, মিয়ামি রিসোর্ট, মিয়ামি রিসোর্ট-২, গোল্ডেন হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট, হালিমা নগরের ড্রিম হাউজ রেস্টুরেন্ট, দুর্গাপুরের কুমিল্লা হাইওয়ে হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, বিশ্বরোডের হোটেল মিয়ামি লিমিটেড, বুড়িচংগের খন্দকার ফুড গ্যালারি, হোটেল নুর মহল, যাইতুন, ময়নামতি হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট, হাইওয়ে ইন, পূর্বাশা গিফট অ্যান্ড খাদি, কাবাব এক্সপ্রেস অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, গ্রীন ভিউ হোটেল রেস্টুরেন্টে অ্যান্ড সুইটস, রয়েল হোস্ট, তাজমহল কমপ্লেক্স হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, হোটেল টাইমস স্কয়ার, লাকি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ও লওভেন টেস্ট ফুড অ্যান্ড বেকার্স। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হোটেল উজান ভাটি অ্যান্ড রিসোর্ট, হোটেল রাজমণি, লাল শালুক হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ও সবুজ বাংলা হোটেল।

Restrurant 03
রাজশাহী কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অধীনে ঢাকা-রাজশাহী সড়কের পাশে রয়েছে ১৫টি হোটেল-রেস্টুরেন্ট। যার মধ্যে রয়েছে-সিরাজগঞ্জের ভিলা হানিফ ফুড ভিলেজ, চাচা ভাতিজা হোটেল, মামা ভাগ্নে হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, নিউ পাপিয়া অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, পাপিয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, অ্যারিষ্ট্রোক্রেট হাইওয়ে ইন, ন্যাশনাল ফুড ভিলেজ, আখি যমুনা গার্ডেন, সিল্ক সিটি ইন, রয়েল রুপালি হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট, নিউ জনতা হোটেল। বগুড়ার ফুড ভিলেজ লিমিটেড ও পেন্টাগন হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ও পাবনার আমন্ত্রণ। রংপুর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অধীনে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের পাশে রয়েছে ১২টি হোটেল-রেস্টুরেন্ট। যার মধ্যে রয়েছে-রংপুরের আহার হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, আলামিন রেস্টুরেন্ট, লবঙ্গ হোটেল, বৈশাখী রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে ডি-৬৬ নিউ পারভেজ হোটেল, কচুরী রেস্তোরাঁ, ঠিকানা রেস্টুরেন্ট। দিনাজপুরের বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ও মামা ভাগিনা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। গাইবান্ধাযর বনফুল হোটেল ও শিল্পী ভোজনালয়। খুলনা কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অধীনে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে রয়েছে ১১টি নামিদামি হোটেল-রেস্টুরেন্ট। যার মধ্যে রয়েছে-পটুয়াখালীর বিরতি রেস্তোরাঁ, স্টার রেস্তোরা অ্যান্ড সুইট মিট, বাসমতি রেস্টুরেন্ট। মাদারীপুরের বৈশাখী হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট। শরীয়তপুরের ক্যাফে ঘরোয়া চাইনিজ রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড কর্নার ও পদ্মা ভেলি রিসোর্ট। বরিশালের গৌরনদীর মা হাইওয়ে হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরা, এলাহী হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট, ফাতেমা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, সাকুরা ফুড ভিলেজ ও রিফ্রেশ জোন।

পাঁচটি ভ্যাট কমিশনারেটের একাধিক কর্মকর্তা বিজনেস বার্তাকে জানিয়েছেন, দেশের মহাসড়কগুলোতে বিভিন্ন নামিদামি হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। সেগুলোতে খাবারের গলাকাটা দাম নেওয়া হয়-ভোক্তাদের এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। একই সঙ্গে এসব রেস্তোরাঁ ও হোটেল মালিক ভোক্তার কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করলেও তা সরকারের কোষাগারে জমা হয় না। ভ্যাটের চালানও দেওয়া হয় না ভোক্তাকে।
Restrurant 01
এ বিষয়ে এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের এক কর্মকর্তা বিজনেস বার্তাকে বলেন, হাইওয়ে সড়কে বিভিন্ন কমিশনারেটের অধীনে ইএফডি মেশিন বসানো হচ্ছে। এছাড়া ইএফডির মাধ্যমে ভ্যাট আদায়ের প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে। রাজস্ব ফাঁকি কমাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি বলছে, ভ্যাট ফাঁকির সুযোগ করে দেন স্বয়ং এনবিআরের কর্মকর্তারাই। তাদের উৎকোচ নিশ্চিত করতেই তারা নানান কৌশলে রেস্তোরাঁ মালিকদের ইএফডির আওতার বাইরে রাখেন। এখন এনবিআর নতুন করে যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি অবশ্যই ইতিবাচক। দেশের সব রেস্তোরাঁ ভ্যাটের আওতায় আসুক, এটি সমিতি চায়। তবে এর ভালো-মন্দ উভয় দিক আছে।

** মহাসড়কে হোটেল-রেস্তোরাঁয় ইএফডি বাধ্যতামূলক
** জেনেক্সের জালিয়াতি: ইএফডি মেশিন বসাতে ‘ঘাপলা’
** ২৩১০টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান ভ্যাট দেয় না
** জালিয়াতি করায় বাদ পড়ছে জেনেক্স!
** জেনেক্স মালিক ইউসিবি থেকে সরিয়েছেন ২ হাজার কোটি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!