চট্টগ্রাম বন্দরের প্রথম বিদেশি অপারেটর পরিচালিত পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালে (পিসিটি) এবার শুরু হয়েছে আমদানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং। টার্মিনাল অপারেটর রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল ইতোমধ্যে দুটি জাহাজ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে আমদানি কন্টেইনার খালাস সম্পন্ন করেছে।
আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার স্ক্যানিংয়ে টার্মিনাল অপারেটরের ব্যবস্থাপনায় ইতোমধ্যে স্ক্যানার বাসানোর কাজ শেষে হয়েছে। কাস্টমসের সহকারী কমিশনার, রাজস্ব কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনবল পদায়ন করেছে কাস্টম।
পিসিটি’র অপারেটর রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী এপ্রিলের মধ্যে পিসিটিতে পুরোদমে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার হ্যান্ডলিং চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। এ লক্ষ্যে স্ক্যানার বাসানোসহ সব ধরনের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হচ্ছে।পিসিটিতে রপ্তানি ও খালি কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পাশাপাশি আমদানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং শুরু হলে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জট কমে আসবে বলে মনে করছেন বন্দর সংশ্লিষ্টারা।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২২ সালের জুনে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য আরএসজিটির সাথে ২২ বছরের চুক্তি করে চট্টগ্রাম বন্দর। ২০২৪ সালের বছরের ১০ জুন পতেঙ্গা কন্টেইনার টর্মিনালে প্রথম বাণিজ্যিক জাহাজে রপ্তানি কন্টেইনার শিপমেন্ট হয়। আরএসজিটির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ১৮ ডলার পায় বন্দর।এরপর থেকে মাসে গড়ে প্রায় ৫টি জাহাজ ভিড়েছে। গত ৯ মাসে সেই হিসেবে প্রায় ৪৫টি জাহাজে রপ্তানি এবং খালি কন্টেইনার পাঠানো হয়েছে।
শুরু থেকে কেবল মায়ের্স্ক লাইনের জাহাজে কন্টেইনার জাহাজীকরণ হচ্ছে। তবে এর মধ্যে গত বছর প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল লাইন্স (পিআইএল) এর তিনটি জাহাজে খালি কন্টেইনার জাহাজীকরণ হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক জানান, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম আমদানি কন্টেইনার খালাস করা হয়। পরীক্ষামূলকভাবে মায়ের্স্ক ভ্লাদিভস্টক জাহাজ থেকে ১৬ টিইইউ কন্টেইনার খালাস করা হয় পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালে। এরপর ৯ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে মায়ের্স্ক জিয়ানমেন জাহাজ থেকে ২০৮ টিইইউ আমদানি কন্টেইনার খালাস করা হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মুখপাত্র এবং ডেপুটি কমিশনার সাইদুল ইসলাম বলেন, পিসিটিতে যেসব আমদানি কন্টেইনার আনা হয়েছে সেগুলো ওই টার্মিনাল পরিচালনা সংক্রান্ত যন্ত্রাংশ, মালামাল। সেখানে কাস্টমস অফিসের সব ধরনের অ্যারেজমেন্ট টার্মিনাল অপারেটর করবে।তিনি আরও বলেন, আমদানি পণ্যের শুল্কায়নসহ আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ প্রয়োজনীয় জনবল পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালে পদায়ন করেছে।
এদিকে, গত বছরের ১৭ এপ্রিল পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের ৩২ একর জায়গাকে ওয়্যারহাউজিং স্টেশন হিসাবে ঘোষণা দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর পাশাপাশি লাইসেন্সসহ বিস্ফোরক অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ ছাড়পত্রসহ ২৫টি দপ্তরের ছাড়পত্র নিতে হয়। এছাড়া, কাস্টম হাউসের সার্ভার এবং বন্দরের পণ্য ডেলিভারি সিস্টেমের সঙ্গেও অনলাইন সংযোগ স্থাপন করতে হয়। অর্থাৎ, বন্দর ও কাস্টম হাউসের সিস্টেমের সঙ্গে টার্মিনাল অপারেশনের আন্তঃসংযোগ করতে হয়।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা)-এর সেক্রেটারি জেনারেল রুহুল আমিন শিকদার বলেন, ১২ মার্চ আমরা পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালে আমদানি-রপ্তানি এবং খালি কন্টেইানার হ্যান্ডলিং, ট্রান্সপোর্টেশন চার্জ রিভিউ করেছি। এতে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ২০ ফুট সাইজের কন্টেইনারে ১৩৬০৫ টাকা, ৪০ ফুট সাইজের কন্টেইনারে ১৬৫৬৭ টাকা নির্ধারিত হয়েছে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে এই চার্জ কার্যকর হবে।
এছাড়া রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনারে ২০ ফুট সাইজের কন্টেইনারে ৭,১৮৭ টাকা; ৪০ ফুট সাইজের কন্টেইনারে ১০,২৫০ টাকা এবং খালি কন্টেইনারে পরিবহন চার্জ ২০ ফুট সাইজে ২,৭০৫ টাকা এবং ৪০ ফুট সাইজে ৫,৪১০ টাকা নির্ধারিত হয়েছে।
পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালে (পিসিটি) তিনটি কন্টেইনার জেটি ও একটি ডলফিন অয়েল জেটি রয়েছে, যেখানে একসঙ্গে তিনটি কন্টেইনার জাহাজ এবং একটি তেলবাহী ট্যাংকার নোঙর করতে পারে। বছরে ৪৫০,০০০ টিইউ কন্টেইনার পরিচালনার সক্ষমতা থাকায় এটি চট্টগ্রাম বন্দরের সামগ্রিক কার্যক্ষমতা বাড়াবে।
**লোকোমোটিভ সমস্যায় বন্দরে পড়ে আছে ১৫০০ কনটেইনার
**ইঞ্জিন সংকটে বন্দরে দুই হাজার কনটেইনার আটকা