চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সহায়তা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। বিষয়টি নিয়ে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেয়া হয়নি। শনিবার (২৯ জুন) নৌ উপদেষ্টা চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে আসেন। এ সময় পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদও উপস্থিত ছিলেন। তাদের অংশগ্রহণে গতকাল একটি সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় এবং জানানো হয়, সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা শেষে মন্ত্রণালয় শিগগিরই সিদ্ধান্ত জানাবে।
আগামী ৬ জুলাই নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) এর বর্তমান অপারেটর সাইফ পাওয়ার টেকের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তি শেষ হবে। এরপর নতুন অপারেটর দেশি হবে নাকি বিদেশি, তা সরকার নির্ধারণ করবে। এদিকে, মধ্যবর্তী সময়টাতে বন্দর কর্তৃপক্ষ নৌবাহিনীর সহায়তায় এনসিটি পরিচালনা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, এনসিটি পরিচালনার বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বিভিন্ন সম্ভাব্য বিকল্প নিয়ে আলোচনা চলছে। নৌবাহিনীর সহায়তায় পরিচালনার বিষয়টি পরে জানানো হবে। বর্তমানে সব আলোচনা এখনও পর্যায়ক্রমে চলছে।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা গতকাল সকালেই পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে নিয়ে বন্দর পরিদর্শন করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীও উপস্থিত ছিলেন।
দুই উপদেষ্টা যখন সভায় বসেছিলেন, তখন বন্দর ভবনের সামনে ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’ নামের বামপন্থি দল ও সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে রোডমার্চ কর্মসূচি পালিত হচ্ছিল। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই দু’দিনের কর্মসূচি গতকাল শেষ হয়। আন্দোলনকারীদের অন্যতম দাবি ছিল নিউমুরিং টার্মিনালসহ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেওয়া পরিকল্পনা বাতিল করা। এনসিটি দেশের সবচেয়ে বড় টার্মিনাল, যেখানে পাঁচটি জেটি রয়েছে। এর মধ্যে চারটি জেটিতে সমুদ্রগ্রামী জাহাজ নোঙর করে এবং একটি জেটিতে অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী জাহাজ নোঙর করতে সক্ষম।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের চেয়ারম্যান এস এম আবু তৈয়ব জানান, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া বিগত সরকার শুরু করেছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এই প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আগামী নভেম্বর মাসে চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজার বা মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে। চুক্তি সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত টার্মিনালটি নৌবাহিনীর সহায়তায় পরিচালিত হতে পারে।
এনসিটি টার্মিনালের চারটি ও সিসিটি টার্মিনালের দুটি জেটি গত ১৭ বছর ধরে সাইফ পাওয়ার টেকের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তারা প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ছাড়াই সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে মোট ১১ বার কাজ পেয়েছে। প্রতি বছর চট্টগ্রাম বন্দরে হ্যান্ডল হওয়া কনটেইনারের ৬২ শতাংশ এককভাবে সাইফ পাওয়ার টেকের অধীন ছয়টি জেটিতে ওঠানামা করে, যেখানে বাকি ৩৮ শতাংশ কনটেইনার অন্য জেটিগুলো দ্বারা হ্যান্ডল করা হয়।