নিহত ২৭ জনের মধ্যে ২৫ জন শিশু

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আরও পাঁচ শিশু মারা গেছে। এতে করে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ২৭ জনে। জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের রেসিডেন্ট সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মারা যাওয়া শিশুদের মধ্যে রয়েছে—নাজিয়া, যার শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ ছিল; ১৩ বছর বয়সী আরিসন, শরীরের ১০০ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে গত রাত ২টা ২০ মিনিটে মারা যায়; একই বয়সী আরিয়ান, ৮৫ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে রাত আড়াইটায় মৃত্যুবরণ করে; শায়ান ইউসুফ (১৪), ৯৫ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় মারা যায়; এবং ৯ বছর বয়সী বাপ্পি, যার শরীরের ৩৫ শতাংশ দগ্ধ ছিল, আজ ভোর ৫টার দিকে মারা গেছে।

Plane crash

গতকাল (২১ জুলাই) রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এ দুর্ঘটনায় পাইলটসহ শিশু মিলিয়ে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৭ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৭১ জন।

এদিকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান জানান, এ পর্যন্ত মোট ২০টি মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে ১০টি, সিএমএইচ থেকে ৮টি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ১টি এবং ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে ১টি। এছাড়া ৬ জনের মরদেহ এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি এবং একজনের দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, মৃতদের মধ্যে ২৫ জনই শিশু; বাকি দুজনের একজন শিক্ষক ও অপরজন বিমানটির পাইলট।

অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, সিঙ্গাপুর মেডিকেলের সাথে এই হাসপাতালের এমওইউ আছে। প্রয়োজনে তাদের সহায়তা নেওয়া হবে। এই মুহূর্তে রক্ত দেওয়ার জন্য অনেক ভিড় করার দরকার নাই। রক্ত সংগ্রহ করা হবে আজ (মঙ্গলবার)। আমাদের প্রস্তুতি যথেষ্ট আছে। নেগেটিভ গ্রুপের কয়েকজন থাকবে। ১০০ জনের বেশি ডোনারের দরকার হবেনা, যোগ করেন তিনি।

Aircraft crash 3

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, দুপুর ১টা ৬ মিনিটে রাজধানীর কুর্মিটোলা বিমানঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানটি মাইলস্টোন স্কুলের ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার পরপরই ভবনে আগুন ধরে যায়। ঘটনাস্থলে দগ্ধ শিশুদের আর্তনাদ ও সন্তানদের খোঁজে পাগলপ্রায় অভিভাবক-স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।

বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই উদ্ধারকাজে ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিস, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার, স্কাউট ও স্বেচ্ছাসেবীরা। দ্রুতই শুরু হয় উদ্ধার কার্যক্রম। অনেককে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। দুর্ঘটনায় বিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামও প্রাণ হারান।

হতাহতদের উদ্ধার করে রাজধানীর উত্তরা ও আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালের পাশাপাশি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। স্বজনদের এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটে বেড়াতে দেখা গেছে প্রিয়জনের খোঁজে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আহতদের বেশির ভাগই দগ্ধ হয়েছে এবং অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।

বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনায় সরকার আজ মঙ্গলবার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনও দুর্ঘটনার জন্য শোক প্রকাশ করেছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!