নির্বাচন সামনে,ডিসি-ইসির বিশেষ বৈঠক

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রথমবারের মতো নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন দেশের ৬৪ জেলার ডিসি ও আট বিভাগের বিভাগীয় কমিশনাররা। ডিসি সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), চার কমিশনার ও ইসি সচিবালয়ের সচিবের সঙ্গে তারা আলোচনায় অংশ নেবেন। তবে এবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ডিসিদের নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ডিসি-এসপিদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বৈঠকের নজির রয়েছে। ডিসিরা ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের সমন্বয় করছেন। ইসি তাদের সহযোগিতা চাইতে পারে। জাতীয় নির্বাচনে ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগসহ মাঠ প্রশাসন পরিচালনা করেন। জেলা পুলিশ সুপাররা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকেন। গত তিনটি নির্বাচনে এ বিষয়ে বিতর্ক হয়েছে। চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। যদি ডিসিদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে তাদের সঙ্গে ইসির আলোচনা প্রয়োজন। এতে মাঠের অবস্থা জানা যাবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার করণীয় নির্ধারণ করা যাবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ জানান, ডিসিদের সঙ্গে ইসির বৈঠক হবে, তবে আলোচনার বিষয়বস্তু এখনও নির্ধারিত হয়নি।

কমিশনের ইচ্ছায় বৈঠক

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) আগ্রহে প্রথমবারের মতো ডিসি সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় এই অধিবেশন হবে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ডিসি-এসপিদের সঙ্গে ইসির বৈঠক হয়, যেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইজিপি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন। সাধারণত এসব বৈঠকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সুযোগ কম থাকে, তবে ডিসি সম্মেলনে নিয়মিত বৈঠক হলে তা সম্ভব হবে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন এবং ভাষণ দেবেন। এর পর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মাঠ প্রশাসন সম্পৃক্ত বিষয়াদি নিয়ে মুক্ত আলোচনা হবে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের। এ সময় সরকারের উপদেষ্টা, বিশেষ সহকারী, জ্যেষ্ঠ সচিব, সচিবসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন।

প্রথম কার্য অধিবেশন হবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় নিয়ে, আর অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধিবেশন হবে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে। ডিসি সম্মেলনে মোট ৩৪টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে—প্রথম দিন ৬টি, দ্বিতীয় দিন ১২টি, এবং তৃতীয় দিন ১৬টি। প্রথম দিন স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, পরিকল্পনা ও পরিসংখ্যানসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধিবেশন হবে, যেখানে সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা, সচিব ও সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত থাকবেন। এবারের সম্মেলনে ৫৬টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার বিষয়ে ৩৫২টি প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা পড়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগ) মোহাম্মদ খালেদ রহীম বলেন, এবার নির্বাচন কমিশন-সংক্রান্ত বিষয়ে একটা অধিবেশন রয়েছে। অধিবেশনে নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে ডিসিদের খোলামেলা আলোচনা হবে। তবে এ বিষয়ে ডিসিদের নির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব নেই। প্রস্তাব থাকলে আমরা যুক্ত করব।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ হচ্ছে না

এবারের ডিসি সম্মেলনে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনাররা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছেন না, সময় সংকটের কারণে এ বৈঠক বাতিল হয়েছে। জাতীয় সংসদের স্পিকার না থাকায় সেই বৈঠকও হচ্ছে না। দ্বিতীয় দিনে ডিসিরা সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, যেখানে তিনি বিচার বিভাগ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেবেন। প্রথম দিনে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভা অনুষ্ঠিত হবে, এরপর নৈশভোজে অংশ নেবেন সংশ্লিষ্টরা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!