নিরাপত্তা জোরদার দেশের সব বিমানবন্দরে

দেশে বিমানবন্দরের পরিধি যেমন বাড়ছে, তেমনি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও পড়েছে চ্যালেঞ্জের মুখে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরেও। নিরাপত্তার এ ঘাটতি পূরণে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এখন নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে তৎপর হয়ে উঠেছে।

বিশেষ ফোর্স গঠন করতে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রোষানলে পড়তে হয়েছে বেবিচককে। ধীর গতিতে চললেও বিশেষ ফোর্স গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি। বিমানবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে নিরাপত্তা দিয়ে আসছে বিমানবন্দরগুলোতে। অতিরিক্ত ১ হাজার আনসার সদস্য যোগ করার কথা রয়েছে এই নিরাপত্তা বহরে।

গত ৫ আগস্ট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৯০২ জন আনসার সদস্য কর্মরত ছিলেন। কিন্তু ভয়ে ওইদিন তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে বিপাকে পড়ে কর্তৃপক্ষ। গত মাসের শেষ সপ্তাহে বেবিচকের সিদ্ধান্ত হয়, জরুরি ভিত্তিতে ৯৭৬ জন আনসার নিয়োগ দিতে হবে। এ জন্য সংস্থাটির পক্ষ থেকে আনসারের মহাপরিচালককে চিঠি দেওয়া হয়। ৫৭৬ জন আনসার সদস্য থার্ড টার্মিনাল ও বাকি ৪০০ জন অন্যান্য বিমানবন্দরে নিয়োজিত থাকবে। নিয়োগ পাওয়া আনসার সদস্যদের জন্য মাসে খরচ হবে প্রায় ৩১ লাখ টাকা। তবে বাড়তি টাকা দিয়ে আনসার নিয়োগে আপত্তি রয়েছে খোদ মন্ত্রণালয় ও বেবিচক কর্মকর্তাদের। তারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্থায়ীভাবে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োগ দিতে সুপারিশ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে অপরাধ ঠেকাতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে বেবিচক। বিমানবন্দরে দিনের পর দিন চলে আসছে নানা অপরাধ। এতে দেশ-বিদেশে বদনাম হচ্ছে। এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি নেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বরং অপরাধীদের আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। সোনা ও বৈদেশিক মূদ্রা পাচারসহ সব ধরনের অপরাধই হচ্ছে বিমানবন্দরের আনাচে-কানাচে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, ‘বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি ফোর্স’ নামে একটি আলাদা সংস্থা গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। এই ফোর্স গঠনের খরচ ধরা হয়েছে ৩৯৭ কোটি ২ লাখ টাকা। তবে বাহিনী গঠন করা নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বেবিচকে। প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ-সমাবেশ পর্যন্ত হয়েছে। তারপরও নিরাপত্তার বিষয়টিকে সামনে এনে বৈঠক হচ্ছে বেবিচক কার্যালয়ে। বিশেষ বাহিনী গঠনের বিরোধিতা আসায় আনসার সদস্যের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আপাতত ৯৭৬ জন আনসার সদস্য নিয়োগ দিতে বলা হয়েছে। গত মাসের শেষ সপ্তাহে বেবিচক বোর্ড সভায় আনসার নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

বেবিচক সূত্র জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে দেশি-বিদেশি অন্তত ৩৭টি বিমান সংস্থা বাংলাদেশে তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছে। ৪৭টি দেশের সঙ্গেও বাংলাদেশের বিমান চলাচল চুক্তি রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৪০ হাজারের মতো যাত্রী আসা-যাওয়া করছেন শাহজালাল, শাহ আমানত, ওসমানীসহ সব বিমানবন্দরে। কিন্তু বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরাল না থাকায় যাত্রীবেশী অপরাধীরা সহজেই অপরাধকা- চালাচ্ছে। বিভিন্ন কৌশল নিয়েও অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। বিশেষ করে চোরাচালান ও মানবপাচারের ঘটনা ঘটছে বেশি। যাত্রী হয়রানি এবং লাগেজ নিয়ে ভোগান্তির অন্ত নেই। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা যানবাহনের অভাবে বেকায়দায় পড়ছেন। বিমানবন্দরের ভেতরে থাকা রেন্ট-এ কারের লোকজন যাত্রীদের অনেকটা জিম্মি করে ফেলে বলে অভিযোগ আছে। অন্য বিমানবন্দরেও একই অবস্থা।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও এগিয়ে চলেছে। সময়ের সঙ্গে অপরাধের ধরন যেমন বদলাচ্ছে, তেমনি সে অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থাও হালনাগাদ করা হচ্ছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারে যা কিছু করণীয়, সবই আমরা গ্রহণ করছি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!