নিজস্ব প্রতিবেদক: নাটোরে আরও একটি শিল্পপার্ক স্থাপন করবে দেশের কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পের পথিকৃৎ প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। সেখানে নুডলস, মসলা, সরিষার তেল ও ফিস প্রসেসিং প্লান্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে গ্রুপটির। এর ফলে নতুন করে নাটোরে আরও এক হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।
বর্তমানে নাটোরে প্রায় ১৩ হাজার চুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রাণের জন্য আম, টমেটো, ডাল, বাদাম, মরিচ ও দুধ উৎপাদন করে। আগামীতে চিনিগুড়া চাল, হলুদ ও কাসাভাসহ আরও কয়েকটি পণ্য চুক্তিভিত্তিক চাষের আওতায় আনতে যাচ্ছে প্রাণ। এতে প্রাণ এর সাথে এ জেলার আরও পাঁচ হাজার চুক্তিভিত্তিক চাষী যুক্ত হবে।
বুধবার (৬ মার্চ) নাটোরে প্রাণ এগ্রো লিমিটেড কারখানার দুই যুগ পূর্তি উপলক্ষে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল এসব কথা বলেন।
২০০০ সালে নাটোরের একডালা’য় প্রাণ এর কারখানা স্থাপিত হয়। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের দু’যুগের পথচলায় আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। এ পর্যন্ত নাটোরে প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপটি। এ সময়কালে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান প্রাণ এগ্রো লিমিটেডের কারখানার উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করছে এ জেলার প্রায় ২২,০০০ মানুষ, যারা পণ্য উৎপাদন, মৌসুমী কর্মকান্ড ও পণ্য সরবরাহসহ নানা কাজে যুক্ত। প্রাণ এগ্রো লিমিটেডের কারখানায় উৎপাদিত পণ্যসমূহের মধ্যে রয়েছে মসলা, সরিষার তেল, লাচ্ছা সেমাই, সস-কেচাপ, জেলি, আচার, চাটনি, নুডলস, মেয়োনিজ, চকোলেট এবং বিভিন্ন ধরনের চিপস।
কামরুজ্জামান কামাল বলেন, নাটোরে শুধু পণ্য উৎপাদন নয়, প্রাণ গ্রুপের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের বড় অংশ নাটোর ও পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহ থেকে সংগ্রহ করা হয়। নাটোরে চুক্তিভিত্তিক কৃষকের কাছ থেকে প্রাণ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকা সমমূল্যের কৃষি পণ্য ক্রয় করেছে।
তিনি আরও বলেন, “দেশে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের উৎপাদিত পণ্যসমূহের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং বর্তমানে বিশ্বের ১৪৫টি দেশে নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে। পণ্যের চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা আমাদের কারখানায় বিভিন্ন সময়ে উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকি। নাটোরে গ্যাস সংযোগ পেলে বিনিয়োগের পথ আরও সুগম হবে। নাটোরের প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় জনগণসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা পেলে এ জেলায় আরও ব্যবসা সম্প্রসারণ ও কৃষকদের কাছ থেকে আরও বেশি পরিমাণ কাঁচামাল ক্রয়ের পরিকল্পনা রয়েছে”।
কামরুজ্জামান কামাল বলেন, নাটোরে প্রাণ-আরএফএল সার্বিক কর্মকান্ডের ফলে আর্থ-সামাজিক অবস্থার যেমন পবিরর্তন হয়েছে, তেমনি গ্রুপটি প্রতিবছর সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব প্রদান করছে যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছে।
প্রাণ এগ্রো লিমিটেড কারখানার জেনারেল ম্যানেজার হযরত আলী বলেন, অত্র অঞ্চলে প্রাণ-আরএফএল শুধু পণ্য উৎপাদন, বাজারজাত, কর্মসংস্থান সৃষ্টি বা চুক্তিভিত্তিক কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য কিনছে না, সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে নানা ধরনের কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। প্রাণ-আরএফএল কারখানা সংলগ্ন এলাকায় রাস্তাঘাট নির্মাণ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, ধর্মীয় উপাসনালয়ে সহায়তা, বৃক্ষরোপণসহ নানা ধরনের কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। এছাড়া খুব শীঘ্রই এখানে একটি পাবলিক স্কুল চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অত্র এলাকার মানুষ যাতে অল্প খরচে উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা পেতে পারে সেজন্য প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ২০১৬ সালে নাটোরে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট আমজাদ খান চৌধুরী মেমোরিয়াল হাসপাতাল চালু করে। তাছাড়া স্বাস্থ্য খাতে নাটোর এলাকায় আরও অবদান রাখতে ২০২২ সালে আমজাদ খান চৌধুরী নার্সিং কলেজ চালু করে গ্রুপটি।প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের অ্যাসিসটেন্ট জেনারেল ম্যানেজার (পাবলিক রিলেশন্স) তৌহিদুজ্জামানসহ প্রতিষ্ঠানটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।