পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী শনিবার থেকে কক্সবাজারের টেকনাফের প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে পর্যটক যাতায়াতে ৯ মাসের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দা ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সাধারণত ১ অক্টোবর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত পর্যটকরা দ্বীপে ভ্রমণ করেন। তবে এ বছর সেই সময়সীমা ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সীমিত করা হয়েছে। তারা মনে করেন, দ্বীপে পর্যটকদের যাতায়াতের সময়সীমা অন্তত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো উচিত।
সেন্ট মার্টিনে পর্যটক পরিবহনের জন্য আগে ১২টি জাহাজ চারটি নৌপথ—টেকনাফ, ইনানী, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে—চলাচল করত। বর্তমানে শুধুমাত্র কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন নৌপথ চালু রয়েছে। অধিকাংশ পর্যটক টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুট ব্যবহার করতেন, তবে মিয়ানমারের রাখাইনের সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে নাফ নদী হয়ে এই নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে।
কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে বর্তমানে জাহাজ চলাচল অব্যাহত রয়েছে। এ ঘাট থেকে ছয় ঘণ্টার যাত্রা শেষে পর্যটকেরা সেন্ট মার্টিনে পৌঁছান। পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারি সিন্দাবাদ ও কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইনের পরিচালক শাহ আলম বলেন, নুনিয়ারছড়া জেটিঘাট থেকে নিয়ম মেনে অনলাইনে নিবন্ধন করে আজ বুধবার সকালে কেয়ারি সিন্দাবাদ, কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন, এমভি বার আউলিয়া , কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি আটলান্টিক ক্রুজ ও বে-ক্রুজ জাহাজে করে পর্যটকেরা সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণে গেছেন। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গ্রিন লাইন-১ যাত্রা বাতিল করেছে।
পর্যটন ব্যবসায়ীদের মতে, এ বছর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় পর্যটকদের জন্য নতুন বিধিনিষেধ জারি করেছে। নভেম্বরে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করা হয়, তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে প্রতিদিন ২,০০০ পর্যটকের ভ্রমণ ও রাত্রিযাপনের সুযোগ ছিল। ফেব্রুয়ারি থেকে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে, যদিও আগে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ভ্রমণের সুযোগ ছিল। পর্যটন ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, সময় কমানোর ফলে তারা অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বেন।
সেন্ট মার্টিন হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি এম এ আবদুর রহিম জিহাদী জানিয়েছেন, অতীতে দ্বীপে এমন সংকট হয়নি। পর্যটন বন্ধ হলে স্থানীয় বাসিন্দারা অর্থনৈতিক সংকটে পড়বেন, কারণ শত শত মানুষ এই খাতের সঙ্গে জড়িত। মানবিক দিক বিবেচনায় তিনি ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য দ্বীপটি উন্মুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছেন।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘দুই মাসের আয় দিয়ে সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দাদের বাকি ১০ মাস চলা সম্ভব নয়। এ জন্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দ্বীপে পর্যটক আসা উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন।’
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, দ্বীপের সাড়ে ১০ হাজার মানুষের জীবিকা পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। পর্যটন মৌসুমে আয় করেই তারা সারা বছর সংসার চালান। তিনি মনে করেন, জাহাজ চলাচলের সময় ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হলে স্থানীয় বাসিন্দারা অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হতেন।
সি-ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বলেন, ‘অন্তত ফেব্রুয়ারি মাসটা পর্যটকদের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত রাখার অনুরোধ করছি। এতে দ্বীপের মানুষের এবং ব্যবসায়ীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সহজ হবে।’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান হোসাইন জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছাড়া সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণের সময় বাড়ানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করবে, তবে এর পর থেকে জাহাজ চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। যদি সরকার ভ্রমণের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তবে নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে পর্যটন ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হলে স্থানীয়দের অর্থনৈতিক সংকট আরও তীব্র হতে পারে।