পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ক্রয় করে প্রস্তুতি নেওয়া, অন্য কারো পক্ষে পরীক্ষা দেওয়া, পরিবারের বা রাজনৈতিক প্রভাব দিয়ে বোর্ডে পাশ পাওয়া এবং টাকা দিয়ে চাকরি পাওয়ার মতো অনৈতিক বিষয় আমরা পূর্বেও শুনে আসছি। তবে এবার জানা গেছে, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বিসিএস পরীক্ষায় ক্যাডার না হয়েও ২১ জনকে ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে।
জানা গেছে, ২৯তম বিসিএসের নিয়োগ শেষ হওয়ার প্রায় ১৩ মাস পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ভুয়া ক্যাডার নিয়োগের সুপারিশ করে গেজেট প্রকাশ করে। তখনকার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুস সোবহান সিকদার সেই গেজেট প্রকাশ করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতোমধ্যে ২১ জনের নাম শনাক্ত করেছে এবং তাদের নিয়োগ বৈধ কিনা তা খতিয়ে দেখছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ২৯তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ ও গেজেট প্রকাশের প্রায় ১৩ মাস পর নিয়মবহির্ভূতভাবে নন-ক্যাডার প্রার্থীদের বিভিন্ন ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, নিয়োগপ্রাপ্ত ২১ জনের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের পাঁচজন, আনসার ক্যাডারে একজন, শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারে চারজন, ইকোনমিক ক্যাডারে দুজন, পরিবার পরিকল্পনা দুজন, পররাষ্ট্র ক্যাডারে একজন, পুলিশ ক্যাডারে দুজন, কর ক্যাডারে তিনজন ও সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে একজন নিয়োগ পেয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই ২১ জন কর্মকর্তার তালিকায় দেখা গেছে, প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার পদে নিয়োগ পেয়েছেন সাজিয়া আফরীন (রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ৪২০২৪২) যার মেধাক্রম ১৯৪। দুই নম্বরে আসমাউল হুসনা লিজা (রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ০১৯৩০২) মেধাক্রম ১৯৫। তিন নম্বরে মোছা. নাসরীন পারভীন (রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ০৭৪৩১৭) মেধাক্রম ১৯৬। চার নম্বরে সুলতানা রাজিয়া (রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ০১৭৮৬৭) মেধাক্রম ১৯৭ এবং পাঁচ নম্বরে মমতাজ বেগম (রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ০৬০০১৪) মেধাক্রম ১৯৮। এছাড়া আনসার ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছেন শামীম আহমেদ (রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ০৬৩২৬১) যার মেধাক্রম ১৪।
সহকারী কমিশনার (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডারে চারজনকে সুপারিশ করা হয়েছে। তারা হলেন: অষ্পড়া বড়ুয়া (রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ০৭৯৭৪৫, মেধাক্রম ৭০), ফরিদা ইয়াসমীন (রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ০৩৭৪৩৮, মেধাক্রম ৭১), ফাহমিদা মাহজাবিন (রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ০২৮৮২৬, মেধাক্রম ৭২) ও রোখসানা খাতুন (রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ২১৮৪২৫, মেধাক্রম ৭৩)। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ইকোনমিক ক্যাডারে সহকারী প্রধান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন দুজন, তারা হলেন মিফতা-উল-জান্নাহ (রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ০৪১১৮৬, মেধাক্রম ৪২) ও ফারহানা রহমান (রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ০৪১২৬১, মেধাক্রম ৪৩)। পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছেন জামাল আল নাসের (রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ০০০০৯৬, মেধাক্রম ১১) ও মোহাম্মদ কায়সার খসরু (রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ৩১৩৬২২, মেধাক্রম ১৩)। পররাষ্ট্র ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছেন সুভানা ইকরাম চৌধুরী (রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ০২০৭৪৬, মেধাক্রম ১৬)। পুলিশ ক্যাডারে দুজন নিয়োগ পেয়েছেন, তারা হলেন আছাদুজ্জামান (রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ০২২০৭৬, মেধাক্রম ৩৭) ও মাহফুজা আক্তার শিমুল (রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ০৪৫৬৭৬, মেধাক্রম ৩৯)। কর ক্যাডারে তিনজন নিয়োগ পেয়েছেন: মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম (রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ০৬০৯৬৭, মেধাক্রম ২৯), কামরুন নাহার শম্পা (রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ০১৯১০৩, মেধাক্রম ৩০) ও মোসাম্মদ মাকসুদা ইসলাম (রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ০৬০৩৫৬, মেধাক্রম ৩২)। সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন এ টি এম কামরুজ্জামান (রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ১৩২৮২১, মেধাক্রম ৬৮)।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি উইংয়ের উপসচিব মোহাম্মদ রফিকুল হক জানিয়েছেন, এমন ঘটনা ঘটলে এবং তা প্রমাণিত হলে প্রথমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা দায়ের করা হয় এবং সরকারের বকেয়া টাকা আদায় করা হয়।