নৌঘাটে ভাসছে ৯০ হাজার টন সয়াবিন

সারাদেশের বিভিন্ন নৌঘাটে বর্তমানে ৫৬টি ব্যক্তিমালিকানাধীন লাইটার জাহাজ সয়াবিন সিড বোঝাই হয়ে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। এসব জাহাজের মধ্যে কিছু জাহাজ প্রায় এক মাসেও পণ্য খালাস করেনি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান, যা রমজানে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকটের আশঙ্কা তৈরি করছে।

বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেলের (বিডব্লিউটিসিসি) তথ্য অনুযায়ী, এসব লাইটার জাহাজে প্রায় ৯০ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন সিড রয়েছে। জাহাজগুলো দেশের বিভিন্ন নদীবন্দরে নোঙর করেছে।

জাহাজ মালিক, আমদানিকারক, রপ্তানিকারক ও এজেন্টদের মধ্যে লাইটার জাহাজ বরাদ্দের সমন্বয়কারী এই সেল নিশ্চিত করেছে যে, পণ্যবাহী জাহাজগুলো একাধিক আমদানিকারকের মালামাল বহন করছে। তবে শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পণ্য খালাসে দেরি হওয়ায় সরবরাহ সংকট আরও প্রকট হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করছেন, এভাবে খালাস আটকে রাখার ফলে ভোজ্যতেল উৎপাদনের কাঁচামালের সংকট ইতোমধ্যে দেখা দিয়েছে, যার ফলে বাজারে দামও বেড়েছে। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) অভিযোগ করেছে, কিছু ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃতভাবে সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ ও দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে জাহাজগুলোকে ‘ভাসমান গুদাম’ হিসেবে ব্যবহার করছে

ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, লাইটার জাহাজে এভাবে সয়াবিন সিড ফেলে রাখার ফলে বাজারে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি এর পেছনে সিন্ডিকেট রয়েছে অভিযোগ করে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানান।আমদানিকারকরা অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেন। ইচ্ছাকৃতভাবে পণ্য খালাসে দেরি করা হচ্ছে—এমন দাবিও নাকচ করেন তারা।

কেবল বিশ্বাস গ্রুপেরই সয়াবিন সিড বোঝাই ৪৪টি লাইটারেজ জাহাজ বিভিন্ন নদীবন্দরে ভাসছে। এছাড়া প্রায় আধা ডজন আমদানিকারকের ১২টি লাইটার জাহাজও দাউদকান্দি ঘাট, তৈলব ঘাট, মেঘনা ঘাট ও পটুয়াখালী ঘাটে সয়াবিন সিড নিয়ে ভাসছে।

এই দেরির কারণে লাইটার জাহাজ পরিচালনাকারীদের আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে। লাইটার জাহাজ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এবং বিডব্লিউটিসিসির কনভেনর সাঈদ মাহমুদ বলেন, স্বাভাবিক নিয়মে জাহাজগুলো পণ্য পরিবহন করলে যে ভাড়া পেত, এভাবে আটকে থাকায় প্রতিটি জাহাজে ১০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত লোকসান হচ্ছে।

অথচ স্বাভাবিক অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে মাদার ভেসেল থেকে পণ্য নিয়ে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য নৌঘাটে আনলোড করতে এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগার কথা নয়।

আমদানিকারকদের প্রতিক্রিয়া

খালাসের দেরির বিষয়ে বিশ্বাস গ্রুপের সুপারভাইজার মো. রুবেল বলেন, গত মাসে সয়াবিন সিড নিয়ে ৮টি জাহাজ আসে। এর প্রতিটিতে ২০ থেকে ৪০ হাজার টন করে পণ্য ছিল। এসব জাহাজ থেকে পণ্য আনলোড করার জন্য আমাদের চাহিদামতো লাইটার জাহাজ বরাদ্দ দেয়নি বিডব্লিউটিসিসি।তিনি বলেন, আমরা ৩ হাজার টন সক্ষমতার লাইটার জাহাজ চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা এক হাজার টন সক্ষমতার জাহাজ বরাদ্দ দিয়েছে। যার ফলে নারায়ণগঞ্জ ঘাটে জাহাজজট দেখা দেয় এবং খালাসে দেরি হচ্ছে। যদিও পণ্যগুলো তিন দিন থেকে এক সপ্তাহের মধ্যেই আনলোড হওয়ার কথা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিকে গ্রুপের পরিচালক (কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স) জাফর আলম দাবি করেন, লাইটার জাহাজ থেকে সয়াবিন সিডের খালাস আটকে থাকার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

বাজারে সার্বিক প্রভাব

বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মেহবুব কবিরের মতে, সয়াবিন সিড ছাড়াও গম এবং ডালবাহী আরও ৩২৫টি ব্যক্তিমালিকানাধীন লাইটার জাহাজ পণ্য নিয়ে বিভিন্ন নৌঘাটে খালাসের অপেক্ষায় আছে।তিনি বলেন, কিছু কিছু আমদানিকারক নিজস্ব গুদাম না থাকা সত্ত্বেও পণ্য আমদানি করেন। এসব পণ্য লাইটার জাহাজেই রেখে দেন তারা। এর ফলে বাজারে পণ্য সরবরাহ এবং জাহাজ উভয়েরই সংকট তৈরি হয়।

বিডব্লিউটিসিসির নির্বাহী পরিচালক মেজর (অব.) জি এম খান বলেন, লাইটার জাহাজের মাধ্যমে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে বিভিন্ন আমদানিকারকের সয়াবিন সিড এসেছে ৩ লাখ ৪ হাজার মেট্রিক টন। লাইটার জাহাজের মাধ্যমে সেগুলো বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।তবে পণ্য খালাসে দেরির কারণে বাজারের সরবরাহ প্রভাবিত হতে পারে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!