মার্কিন ‘পাল্টা শুল্ক’-এ সাময়িক পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। এতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রতি মার্কিন ব্র্যান্ড-ক্রেতাদের আগ্রহ বেড়েছে। পুরনো ক্রেতাদের অনেকেই ফিরেছে এবং নতুন ক্রেতারাও রপ্তানি আদেশ নেওয়ার সম্ভাবনা যাচাই করছেন।
আগামী শীতের রপ্তানি আদেশের কাজ শেষ হয়েছে, আর গ্রীষ্মের আদেশ আগামী মাসের মাঝামাঝি থেকে আসা শুরু হবে। সাধারণত এই সময়ে আদেশ কম থাকে, তবুও এবার অনেক আদেশ আসছে, যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে স্থানান্তরিত। ফ্লোরেন্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হোসনে কামার আলম জানান, ‘নতুনভাবে রপ্তানি আদেশ আসছে। এক বছর ধরে আমার কারখানায় মার্কিন কোনো ক্রেতার কাজ ছিল না। গত এক সপ্তাহে নতুন ও পুরনো অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে।’
তিনি বলেন, এরই মধ্যে ১০ লাখ পিসের একটি রপ্তানি আদেশ পেয়েছেন একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান থেকে। উৎপাদন সক্ষমতা থাকলে পরিমাণে আরও রপ্তানি আদেশ দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে ওই ক্রেতা। প্রতিষ্ঠানটি আগে ভারত থেকে পণ্য নিত। যুক্তরাষ্ট্রের ‘পাল্টা’ ৫০ শতাংশ শুল্কের কারণে ভারত থেকে রপ্তানি আদেশ প্রত্যাহার করে আনা হয়েছে বলে ক্রেতার বরাত দিয়ে জানান তিনি। মোহাম্মদ হোসনে কামার আলম বলেন, এ রকম অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান খোঁজখবর নিচ্ছে। চীন থেকেও রপ্তানি আদেশ আসছে। ভারত এবং চীনা পণ্যে অতিরিক্ত শুল্কের ফলে এ রকম হওয়াটাই স্বাভাবিক।
ট্রাম্প প্রশাসন প্রথমে বাংলাদেশের পণ্যে ৩৭ শতাংশ এবং পরে ৩৫ শতাংশ ‘পাল্টা শুল্ক’ আরোপের ঘোষণা দেয়। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ক্রেতা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানায় রপ্তানি আদেশ স্থগিত, বাতিল বা কমিয়ে দেয়। সরকারের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার মাধ্যমে এবং বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসসহ অন্যান্য শর্তে শেষ পর্যন্ত শুল্ক ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগীদের মধ্যে ভারতের পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ, আর রপ্তানিতে এগিয়ে থাকা চীনা পণ্যে এটি প্রায় ৭৫ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের লাসভেগাসে সোমবার বিশ্বের বৃহত্তম টেক্সটাইল প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। নারায়ণগঞ্জভিত্তিক প্যাসিফিক সোয়েটার্স সেখানে নিজস্ব পণ্য প্রদর্শন করছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাশেদ টেলিফোনে জানান, শুল্ক কাঠামোর নতুন বাস্তবতায় প্রদর্শনীর প্রথম দিনেই অনেক ক্রেতা রপ্তানি আদেশ নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করেছে এবং আরও অনেক ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তিনি বলেন, মার্কিন একটি বড় ব্র্যান্ডের ৬০ হাজার পিস টি-শার্টের রপ্তানি আদেশ চলছিল কারখানায়। নতুন শুল্কের ঘোষণা আসার পর ব্র্যান্ডটি কাজ স্থগিত রাখার ই-মেইল পাঠায় এবং মাঝপথে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়েছিল। তবে এখন পুনরায় আলোচনার মাধ্যমে রপ্তানি আদেশ পুনর্বহাল হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
ঢাকাভিত্তিক মার্কিন বায়িং হাউস লিয়াং ফ্যাশনের মোট রপ্তানি আদেশের ৯৯ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের। প্রতিষ্ঠানটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, শুল্ক হ্রাসের ঘোষণার দিনই একটি মার্কিন ক্রেতা ৭৬,৬০০ পিস লং প্যান্ট ও শর্টসের রপ্তানি আদেশ পুনরায় শুরু করতে বলেছেন। তিনি আশা করেন, আগামী দু-এক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রপ্তানি আদেশ আসবে।