** গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার ও বরিশালে নতুন ভ্যাট কমিশনারেট হবে
** আইসিডি চট্টগ্রাম, ভোমরা, মাতারবাড়ী ও বে-কাস্টম হাউস চট্টগ্রামে চারটি নতুন কাস্টম হাউস হবে
** ইকোনমিক জোন কমিশনারেট ঢাকা ও চট্টগ্রাম এবং কাস্টম কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগার কমিশনারেট হবে
রাষ্ট্রের আয়ের কিয়দংশ ছাড়া প্রায় পুরোটার যোগানদাতা এনবিআর। যার দুই-তৃতীয়াংশ কাস্টমস ও ভ্যাট খাত থেকে আয় হয়। ছয়টি কাস্টম হাউস ও ১২টি ভ্যাট কমিশনারেট এই রাজস্ব যোগান দিচ্ছে। তবে প্রতিনিয়ত লক্ষ্যমাত্রা বাড়লেও তা আদায় করা যাচ্ছে না। রাজস্ব আদায় বাড়াতে ভ্যাট ও শুল্ক বিভাগের কার্যক্রম দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। পরিকল্পনায় রয়েছে চারটি নতুন কাস্টম হাউস, পাঁচটি কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট স্থাপন। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় জনবল বৃদ্ধির উদ্যোগ হয়েছে।
এই দুই বিভাগের মোট ৬ হাজার ১৯৬ পদ সৃজনের অনুমোদন দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রয়েছে ক্যাডার পদে ৪৩৫ ও অন্যান্য পদে ৫ হাজার ৭৬১টি। এছাড়া সংস্কার, পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের পদক্ষেপ হিসেবে দেশে নতুন করে গঠন হতে যাচ্ছে চারটি কাস্টম হাউস। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় হবে দুটি—বে-কাস্টম হাউস ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস আইসিডি। বাকি দুটির একটি কক্সবাজারে মাতারবাড়ী কাস্টম হাউস ও অন্যটি সাতক্ষীরায় ভোমরা কাস্টম হাউস।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, কাস্টমসের পাশাপাশি নতুন ধারণায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে গঠিত হবে দুটি ইকোনমিক জোন কমিশনারেট। পাশাপাশি গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার ও বরিশালে পাঁচটি নতুন ভ্যাট কমিশনারেট স্থাপনের প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আমদানি হওয়া পণ্যের রাসায়নিক পরীক্ষা নিশ্চিত করতে কাস্টমস কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা করা হবে ঢাকার তেজগাঁওয়ে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন শেষে সচিব কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণ কর্মসূচির শর্ত অনুযায়ী, রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে সক্ষমতা বাড়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশা করছেন, অবকাঠামো ও জনবল বৃদ্ধি কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলে এনবিআরের সেবা কার্যক্রম আরও সহজ ও দ্রুত হবে। এতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে গতি আসবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা রাজস্ব আয়ের বৃদ্ধি নিশ্চিত করবে।
এনবিআরের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে নতুন ভ্যাট কমিশনারেট ও কাস্টম হাউসগুলোর সাংগঠনিক কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) চূড়ান্ত করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। এ লক্ষ্যে গত ১২ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে চূড়ান্ত অর্গানোগ্রাম অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে নতুন কাস্টম হাউস এবং ভ্যাট কমিশনারেট স্থাপন ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের পথ খুলেছে।
নতুন কাস্টম হাউসগুলোর মধ্যে রয়েছে কাস্টম হাউস আইসিডি, চট্টগ্রাম; কাস্টম হাউস (সাতক্ষীরা) ভোমরা; কাস্টম হাউস (কক্সবাজার) মাতারবাড়ী এবং বে-কাস্টম হাউস, চট্টগ্রাম। অন্যদিকে নতুন ভ্যাট কমিশনারেটগুলোর তালিকায় রয়েছে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কক্সবাজার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ। এ ছাড়া আরও রয়েছে ইকোনমিক জোন কমিশনারেট ঢাকা ও চট্টগ্রাম এবং কাস্টম কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগার কমিশনারেট। এই সম্প্রসারণ দেশব্যাপী রাজস্ব সংগ্রহের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বর্তমানে ক্যাডারবহির্ভূত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা (শুল্ক, আবগারি ও ভ্যাট) নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলি আইনে উল্লেখ রয়েছে, দ্বিতীয় শ্রেণির সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে শূন্য পদের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ এবং বাকিটা পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। নতুন অর্গানোগ্রামে এ বিধান আরও সুসংগঠিত করা হয়েছে। সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে নতুন নিয়োগের পাশাপাশি তৃতীয় শ্রেণির পদ থেকে পদোন্নতির সুযোগও নিশ্চিত করা হয়েছে। এ উদ্যোগ কর্মকর্তাদের জন্য পেশাগত উন্নতির পথ আরও সুগম করবে এবং প্রশাসনিক কাঠামো কার্যকর হবে।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, নতুনভাবে গঠিত হতে যাওয়া দপ্তরগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামে বে-কাস্টম হাউসের জন্য ২২৭টি পদ (এর মধ্যে ক্যাডার সার্ভিসের ২০ পদ), কাস্টম হাউস আইসিডিতে ১৮০ পদ (ক্যাডার ২০), কক্সবাজারে মাতারবাড়ী কাস্টম হাউস প্রতিষ্ঠা করে ১৮৭ পদ (ক্যাডার ১৯), চট্টগ্রাম ইকোনমিক জোন কমিশনারেটে ১৬০ (ক্যাডার ১৬), কক্সবাজার কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে ১৭১ পদ (ক্যাডার ১০), গাজীপুর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে ৩৫০, নারায়ণগঞ্জ কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে ৩২৩ পদ (ক্যাডার ১১), সাতক্ষীরায় ভোমরা কাস্টম হাউজ প্রতিষ্ঠা করে ৭৯ পদ (ক্যাডার ৯), ময়মনসিংহ কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে ২০৬ পদ (ক্যাডার ৮), বরিশাল কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে ২৭৭ পদ (ক্যাডার ১২), কাস্টমস কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগার কমিশনারেটে ৮৯ (ক্যাডার ১) ও ঢাকা ইকোনমিক জোন কমিশনারেটে ১৬০ (ক্যাডার ১৬) পদ সৃজন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পেয়েছে এনবিআর।
এছাড়া অবশিষ্ট ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদের নিয়োগের অনুমোদন হয়েছে বর্তমানে কার্যক্রমে থাকা ঢাকা কাস্টম হাউসে ২৯৩টি, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ১৪০, আইসিডি কমলাপুর কাস্টমসে ৫৪, পানগাঁও কাস্টমস ৫০, বেনাপোল কাস্টমস ৪৪, মোংলা কাস্টমস ৬০, ঢাকা কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে (পূর্ব) ২৩৮, ঢাকা কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে (পশ্চিম) ২০৮, ঢাকা কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে (উত্তর) ৩৬২, ঢাকা কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে (দক্ষিণ) ৩০৬, সিলেট কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে ১৮৫, রংপুর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে ৯৫, চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে ১৪৮, কুমিল্লা কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে ১০৫, খুলনা কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে ১৩৯, রাজশাহী কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে ১২৮, কাস্টম গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরে ৩৭০, বৃহৎ করদাতা ইউনিটে ৫১, চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে ৮৬, নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরে (মূল্য সংযোজন) ২৮৮, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট (আপিল) কমিশনারেট ঢাকা-১ এ ২৩, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট (আপিল) কমিশনারেট ঢাকা-২-এ ২৩, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট (আপিল) কমিশনারেট খুলনায় ২২, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট (আপিল) কমিশনারেট চট্টগ্রামে ২৪, শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদপ্তরে ৩৬, শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেটে ১৪০ এবং কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমি চট্টগ্রামের জন্য ১৮ পদে।