সরকার ৪৬টি সেবায় আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র (পিএসআর) বাধ্যতামূলক করেছে। যার ফলে প্রতি বছর এসব সেবা গ্রহণে নতুন নতুন করদাতা রিটার্ন দাখিল করছেন। এই সেবা গ্রহণ ছাড়াও প্রতি বছর নতুন নতুন করদাতা রিটার্ন দাখিল করে আসছেন। সেক্ষেত্রে ন্যূনতম কর বেশি হওয়ায় রিটার্ন দাখিলে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। নতুন করদাতাদের রিটার্ন দাখিলে উদ্ধুদ্ধ ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ছাড় দেওয়া হতে পারে। এনবিআর বলছে, নতুন করদাতাদের জন্য চমক হিসেবে ন্যূনতম করের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হতে পারে। তাদের ন্যূনতম কর এক হাজার টাকা হতে পারে। এর ফলে নতুন করদাতারা রিটার্ন দাখিলে উৎসাহ দেখাবেন বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।
আয়কর বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা রয়েছে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছর ২৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা হতে পারে। একইসঙ্গে ন্যূনতম আয়কর ৫ হাজার টাকা করা হতে পারে। এছাড়া করহার বাড়ানো হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
নতুন করদাতাদের ন্যূনতম করে ছাড় দেওয়ার বিষয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা। ধরুন, একজন নতুন করদাতা রিটার্ন দাখিল করবেন। তার আয় তিন লাখ ৫০ হাজার ১ টাকা হলো। অর্থাৎ করমুক্ত আয়সীমা পার হয়ে এই করদাতার বাড়তি আয় ১ টাকা হলো। বাড়তি এই ১ টাকার জন্য নতুন করদাতাকে ন্যূনতম কর হিসেবে এলাকাভেদে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। মাত্র ১ টাকা আয়ের জন্য এই করদাতাকে ন্যূনতম কর ৩ থেকে ৫ হাজার দিতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে, সামান্য আয়ের উপর বাড়তি করের জন্য নতুন করদাতারা রিটার্ন দাখিল ও রিটার্নে প্রকৃত আয় দেখাতে নিরুৎসাহিত হয়। তবে সাড়ে তিন লাখ টাকার পর পরবর্তী এক লাখ টাকা আয়ের উপর কর ৫ শতাংশ, ৪ লাখ টাকার উপর ১০ শতাংশ, ৫ লাখ টাকার উপর ১৫ ও ২০ শতাংশ, ২০ লাখ টাকার উপর ২৫ শতাংশ ও অবশিষ্ট মোট আয়ের উপর ৩০ শতাংশ কর দিতে হয়। নতুন করদাতাকে এই পরিমাণ আয় থাকলে কর দিতে হয়।
কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী অর্থবছর নতুন করদাতাদের স্বস্তি দিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মনে করেন, একজন নতুন করদাতার আয়কর তিন লাখ ৭৫ হাজার ১ থেকে ৯৯৯ টাকা। আগামী অর্থবছর করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা হলে এই করদাতার বাড়তি আয় ১ থেকে ৯৯৯ টাকা। সুবিধা দেওয়া না হলে আর আগামী অর্থবছর ন্যূনতম কর বাড়ানো হলে এই করদাতাকে ১ থেকে ৯৯৯ টাকা আয়ের উপর কর দিতে হতো ৫ হাজার টাকা। কিন্তু এখন তাকে দিতে হবে ১০০০ হাজার টাকা। অর্থাৎ করদাতা ৪ হাজার টাকা বাড়তি কর দেওয়া থেকে বেঁচে গেলেন। তবে কোন নতুন করদাতার করমুক্ত আয়সীমার বাড়তি আয়ের উপর স্বাভাবিক কর দিতে হবে। যেমন-কোন করদাতার যদি মোট আয়ের উপর তিন হাজার টাকা কর হয়, তাহলে তাকে সেই তিন হাজার টাকাই দিতে হবে। ন্যূনতম কর হিসেবে বাড়তি কোন কর দিতে হবে না। কারও যদি কোনো করযোগ্য আয় না থাকে, অর্থাৎ জিরো রিটার্ন হয়, তাহলে তাকে কোনো কর দিতে হয় না। কিন্তু ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকার কারও ৫ হাজার টাকার নিচে কর হয়, তাকে ন্যূনতম কর দিতে হয় ৫ হাজার টাকা।
একাধিক সূত্রমতে, কর বৈষম্য কমাতে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ন্যূনতম কর ৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। ফলে সিটি করপোরেশন, পৌর এলাকা, গ্রাম এলাকার করদাতাদের ন্যূনতম কর পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা দু-এক অর্থবছর পরপর বাড়লেও ন্যূনতম করহার বাড়ানো হয়নি। সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে অঞ্চলভেদে ব্যক্তিশ্রেণির ন্যূনতম করহার বাড়ানো হয়। সেই থেকে আজ অবধি একই হারে করদাতারা কর দিয়ে আসছেন। এ সময় করমুক্ত আয়ের সীমা একাধিকবার বাড়ানো হয়েছে। এবার করবৈষম্য কমিয়ে আনতে সব এলাকার করদাতাদের ন্যূনতম কর ৫ হাজার টাকা করা হতে পারে। বর্তমানে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার করদাতাদের ন্যূনতম কর ৫ হাজার টাকা, অন্য সিটি করপোরেশন এলাকার করদাতাদের ৪ হাজার টাকা ও সিটি করপোরেশনের বাইরে পৌর এলাকা ও গ্রামাঞ্চলের করদাতাদের কর ৩ হাজার টাকা বিদ্যমান রয়েছে। আর্থিক বৈষম্য কমিয়ে এনে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সর্বপ্রথম ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে অঞ্চলভিত্তিক করহার চালু করা হয়।
আয়কর বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজনেস বার্তাকে বলেন, অনেক ব্যক্তি ন্যূনতম করের সুবিধা নিতে করযোগ্য আয় কম দেখান। এজন্য আমরা ন্যূনতম কর কাঠামো সংশোধন করছি। তবে নতুন করদাতাদের কর ছাড় দেওয়া হতে পারে, যাতে তারা রিটার্ন দাখিল করতে উদ্বুদ্ধ হন। আর নতুন করদাতাদের উদ্ধুদ্ধ করতে কর ১ হাজার টাকা করা হচ্ছে।
দেশে বর্তমানে ই-টিআইএনধারী করদাতার সংখ্যা প্রায় এক কোটি ১৫ লাখ। এর মধ্যে রিটার্ন জমা হয় ৪৫ লাখের মতো। তার মধ্যে আবার দু্ই-তৃতীয়াংশ বা প্রায় ৩০ লাখই জিরো রিটার্ন বলে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
** আসন্ন বাজেটে যেসব পরিবর্তন আসতে পারে
** করমুক্ত আয়সীমা বাড়তে পারে