দেশের কৃষকদের জন্য আসছে নতুন দুটি ধান জাত, যা ২১ দিন পর্যন্ত পানির নিচে ডুবে থাকলেও ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উন্নত এই জাতের ধান চাষ কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করবে। বিশেষত বন্যাপ্রবণ এলাকার জন্য উদ্ভাবিত এই ধান চাষে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।
মাঠ পর্যায়ের গবেষণা শেষ হওয়ার পর এই দুটি ধান জাত ইতোমধ্যে জাতীয় কারিগরি কমিটির অনুমোদন পেয়েছে। এখন তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় বীজ বোর্ডের সভায় পেশ করা হবে, যা শিগগিরই অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা জানান, বীজ বোর্ডের অনুমোদনের পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বীজ মাল্টিপ্লাই করার জন্য দেওয়া হবে। এরপর এটি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
২০১০ সালে ‘ব্রি ধান ৫১’ এবং ‘ব্রি ধান ৫২’ নামে ব্রি জলমগ্নসহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছিল, যা ১৪ দিন পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকলেও নষ্ট হতো না। ব্রির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, নতুন উদ্ভাবিত জাত দুটি ২১ দিন পর্যন্ত পানির নিচে ডুবে থাকতে সক্ষম। এই জাত দুটি আবাদে ধানের উৎপাদন বাড়াবে। নতুন এই দুটি জাতের নাম রাখা হয়েছে ‘ব্রি ধান ১০৯’ ও ‘ব্রি ধান ১১০’।
ব্রি ধান ১০৯ : বরিশাল অঞ্চলের জন্য উপযোগী
ব্রি ধান ১০৯ প্রধানত বরিশাল অঞ্চলে আবাদের জন্য উদ্ভাবন করা হয়েছে। এই জাতের হেক্টরপ্রতি ফলন ছয় টন নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি মোটা দানার হওয়ায় চালের স্বাদও বেশি হবে বলে জানিয়েছেন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহম্মদ আশিক ইকবাল খান। তিনি বলেন, বরিশালের মানুষ সাধারণত মোটা ধানের চাল খেতে পছন্দ করে।সে বিষয়টি মাথায় রেখেই নতুন এই জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। জাতটি মূলত জোয়ার-ভাটা সহনশীল ধানের জাত।
এই বিজ্ঞানী জানান, এই ধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো টানা ২১ দিন পানির নিচে থাকলেও ধানের কোনো ক্ষতি হবে না। আমন মৌসুমে অলবণাক্ত এলাকায় কৃষকরা এই ধান আবাদ করতে পারবেন। এই কর্মকর্তা আরো জানান, এই জাতের এক হাজার ধানের দানার ওজন ৩১-৩২ গ্রাম, যেখানে প্রচলিত জাতের ওজন ২২-২৩ গ্রাম।
ব্রি ধান ১১০ : বন্যা ও লবণাক্ততা সহনশীল : ব্রি ধান ১১০ জাতের ধানটিও বন্যা ও লবণাক্ততা সহনশীল। এর ফলন হেক্টরপ্রতি ছয় টন, যা বিনা ধান ১১-এর তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি। এটি তিন সপ্তাহ সম্পূর্ণ পানিতে ডুবে থাকতে পারে। পানি স্বচ্ছ ও শীতল হলে আরো বেশি দিন ডুবে থাকতে পারে।
দেওয়ানগঞ্জে পরীক্ষামূলক চাষে দেখা গেছে, এই ধান ২৬ দিন পর্যন্ত বন্যার পানিতে টিকে থাকতে পারে। ধানের দানাগুলো মাঝারি সরু এবং এতে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৪.৩ শতাংশ। এর আগে গত বছর নতুন দুটি জাত, ‘ব্রি ধান ১০৭’ ও ‘ব্রি ধান ১০৮’, জাতীয় বীজ বোর্ডের অনুমোদন পায়।