বাংলাদেশের নাগরিকরা এখন ১০১টি দেশের দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। আইনের মাধ্যমে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আগে যেখানে ৫৭টি দেশের নাগরিকত্ব নেওয়ার সুযোগ ছিল, সেখানে নতুন করে আরও ৪৪টি দেশ এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে।
যদিও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, মন্ত্রী এবং এমপিরা এ সুযোগ নিতে পারেন না, তবে অনেকেই আইন ভেঙে দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে বড় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সঠিক হিসাব না থাকলেও, প্রায় আড়াই লাখ বাংলাদেশি দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন, যার মধ্যে ৩৪ হাজারের বেশি সরকারি সনদ পেয়েছেন।
বিশেষ করে ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তারা বৈধভাবে এই নাগরিকত্ব গ্রহণ করছেন, তবে সরকারি চাকরি করা ব্যক্তিরা এটি নিতে পারেন না। অনেক মানুষ দ্বৈত নাগরিকত্ব নেন উন্নত জীবনযাপনের এবং আর্থিক সচ্ছলতা অর্জনের জন্য। কিন্তু কিছু অবৈধ নাগরিকত্ব গ্রহণকারী ব্যক্তি, বিশেষত সাবেক মন্ত্রী ও এমপিরা, বিভিন্ন অভিযোগের সম্মুখীন হচ্ছেন।
দ্বৈত নাগরিকত্ব সুবিধায় নতুনভাবে যুক্ত হওয়া দেশগুলোর মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশের ১৯টি দেশ হলো—মিসর, দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া, আলজেরিয়া, সুদান, মরক্কো, ঘানা, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, তিউনিসিয়া, সিয়েরা লিয়ন, লিবিয়া, কঙ্গো, লাইবেরিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, ইরিত্রিয়া, গাম্বিয়া, বতসোয়ানা ও মরিশাস।আমেরিকা মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত ১২টি দেশ হলো—আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, বলিভিয়া, কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, সুরিনাম, পেরু, একুয়েডর, চিলি, উরুগুয়ে ও গায়ানা।ক্যারিবীয় অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ১২টি দেশ হলো—কিউবা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, হাইতি, বাহামা, জ্যামাইকা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, ডমিনিকা, সেন্ট লুসিয়া, বার্বাডোজ, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন, গ্রেনাডা এবং সেন্ট কিটস ও নেভিস।এছাড়া, ওশেনিয়া মহাদেশের একমাত্র দেশ ফিজিও এই সুবিধার আওতায় এসেছে।
জানা যায়, নাগরিকত্বের সুযোগ নিয়ে ইউরোপের অনেক দেশেও অবৈধ উপায়ে সম্পদ ও অর্থ পাচার করার অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে। লন্ডনের অভিজাত এলাকায় প্রপার্টির শীর্ষ বিদেশি ক্রেতা হওয়ার সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে একাধিক গণমাধ্যমে। লন্ডনসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় অন্তত অর্ধশত বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারের বাড়ি কেনার সুনির্দিষ্ট তথ্যও রয়েছে।
লন্ডনভিত্তিক অভিবাসনসেবা প্রতিষ্ঠান অ্যাস্টনসের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডনের বিভিন্ন এলাকায় বিদেশি প্রপার্টি ক্রেতাদের মধ্যে বাংলাদেশিরা নবম স্থানে ছিলেন।এই সময়কালে বাংলাদেশিরা ৯৮টি লেনদেনের মাধ্যমে প্রায় ১২ কোটি ২৯ লাখ পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তি কিনেছেন, যা বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ১,৫৬১ কোটি টাকা। প্রতিটি লেনদেনে গড়ে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১২ লাখ পাউন্ড বা প্রায় ১৫ কোটি ১২ লাখ টাকা।এছাড়া, দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ নিয়ে পরিবারের সদস্যদের স্থানান্তর, অবৈধভাবে কাজ দেওয়া, ব্যবসা পরিচালনা, এমনকি সম্পদ বিক্রি করে অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে।
অস্ট্রিয়াভিত্তিক বৈশ্বিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘ইমিগ্রান্ট ইনভেস্ট’-এর তথ্য অনুসারে, বিশ্বের ৪৯ শতাংশ দেশ দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদন করে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ক্যারিবীয় অঞ্চল, তুরস্ক ও স্পেন অন্যতম।
এই দেশগুলোতে অভিবাসীরা মূলত উন্নত জীবন, সামাজিক নিরাপত্তা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ কাজে লাগিয়ে থাকেন। সংস্থাটির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা চারটি মূল ক্ষেত্রে কাজে আসে—ভ্রমণ, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যবসা ও পেশাগত উন্নয়ন এবং পরিবারের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা।
** সাবেক ২৪ এমপি-মন্ত্রীর দ্বৈত নাগরিকত্বের প্রমাণ
** সরকারি কর্মচারীদের দ্বৈত নাগরিকত্ব তদন্তে মন্ত্রণালয়