রমজানকে সামনে রেখে ছোলার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা এবার গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় দ্বিগুণ ছোলা আমদানি করেছেন। ইফতারের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে এটি আগেভাগেই আমদানি করা হয়। দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ইতিমধ্যে ভালো প্রস্তুতি দেখা গেছে। জানুয়ারিতে ছোলার আমদানি ছিল গত ছয় মাসের তুলনায় সবচেয়ে বেশি।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ছোলার মজুত বৃদ্ধি মূল্য নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে। ইতিমধ্যে প্রতি মণে ৬২০ টাকা কমেছে দাম, যা খুচরা বাজারেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে প্রশাসনের তদারকি দুর্বল হলে, সিন্ডিকেটের কারণে এই স্বস্তি অস্বস্তিতে পরিণত হতে পারে বলে আশঙ্কা বাজার বিশ্লেষকদের।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক ড. মো. শাহ আলম জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর ছোলার আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) মোট ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৩২ মেট্রিক টন ছোলা আমদানি করা হলেও চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মাত্র সাত মাসেই আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৬২ মেট্রিক টন। আমদানিকারকদের আগ্রহ ও বাজারের চাহিদার ভিত্তিতে এই পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। আমদানি অব্যাহত থাকলে রমজানে ছোলার কোনো সংকট হবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের মতে, রোজার চার মাস আগে থেকেই ছোলার আমদানি শুরু হয়। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ, যেমন এলসি মার্জিন শিথিল করা, চিনির শুল্ক ১৫% কমানো, ভোজ্যতেলে ভ্যাট ৫% হ্রাস, এবং ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখার ফলে এবার বেশি পরিমাণে এলসি খুলেছেন আমদানিকারকরা। সরবরাহ বাড়ায় পাইকারি বাজারে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। পাইকাররা মনে করেন, ভোক্তারা এর পূর্ণ সুফল পেতে খুচরা বাজারে তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি।
চাক্তাইয়ের খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ব্যাংক সচল হওয়া ও তারল্য বাড়ায় আমদানিকারকদের এলসি খোলার হার বেড়েছে। এরই মধ্যে অনেক ভোগ্যপণ্য খাতুনগঞ্জে চলে এসেছে। সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) তথ্যানুযায়ী, দেশে মাসিক ছোলার চাহিদা গড়ে ১০ হাজার টন, তবে রমজানে তা ১০ থেকে ১২ গুণ বেড়ে ১ থেকে ১.১০ লাখ টনে পৌঁছায়। বার্ষিক চাহিদা ২ থেকে ২.২০ লাখ টন। অস্ট্রেলিয়া সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক হলেও রাশিয়া, ইউক্রেন, পাকিস্তান, ইথিওপিয়া, কানাডা, ভারত, মিয়ানমার ও তাঞ্জানিয়া থেকেও ছোলা আমদানি করা হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে ছোলার দাম কম থাকায় ব্যবসায়ীরা আমদানির সুযোগ নিয়েছেন, যার ফলে শুধু ডিসেম্বরেই এসেছে ১৫,৫৮৭ টন ছোলা, আর চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারিতে আমদানি হয়েছে ১.৪৩ লাখ টন।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে আমদানি করা হয়েছে ৫ হাজার ১৮৮ মেট্রিক টন ছোলা। এর আগের অর্থবছরে জুলাইয়ে আমদানি করা হয় মাত্র ২২৫ মেট্রিক টন। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের আগস্টে আমদানি করা হয়েছে ২ হাজার ২৩০ মেট্রিক টন ছোলা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, গত অর্থবছরের (২০২৩-২৪) ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছোলা আমদানি হয়েছে ৭১ হাজার ৬৩৩ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে আমদানি হয়েছে ১৮ হাজার ২৯১ মেট্রিক টন। মার্চে আমদানি হয়েছে ৩৩ হাজার ৩৫৫ মেট্রিক টন। এপ্রিলে আমদানি হয়েছে ৪ হাজার ৪০৯ মেট্রিক টন। মে মাসে আমদানি হয়েছে ৮ হাজার ১৫৫ মেট্রিক টন। জুনে আমদানি হয়েছে ৭ হাজার ৪২৩ মেট্রিক টন।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে এক মাস আগে প্রতি মণ ছোলার দাম ছিল ৪ হাজার ২০০ টাকা। সেই ছোলা এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকায়। এ হিসাবে মণে কমেছে ৬০০ থেকে ৬২০ টাকা। আর কেজিতে কমেছে ১৩ থেকে ১৬ টাকার মতো। দাম কমার পরও ছোলার সরবরাহ বাড়ছে। তাই আসন্ন রমজানে ছোলার দাম নিম্নমুখী থাকবে, আশা করছেন পাইকারি মোকামের ব্যবসায়ীরা।