দেশে প্রথমবারের মতো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অ্যান্টিভেনম (সাপের বিষের প্রতিষেধক) উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত অ্যান্টিভেনম উৎপাদন হয় না। দেশের সাপের সংখ্যা অনেক এবং বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের সাপের মধ্যে পার্থক্য থাকায় আমদানিকৃত অ্যান্টিভেনম ব্যবহার করেও সব সময় রোগীকে বাঁচানো যায় না। নিজের উৎপাদিত অ্যান্টিভেনম হলে তা ব্যয়সাপেক্ষ হলেও ভর্তুকি দিয়ে মানুষের জন্য সহজলভ্য করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি এর খরচ-সাশ্রয়ী উপায় নিয়েও ভাবনা চলছে, যোগ করেন তিনি।
উপদেষ্টা আরও বলেন, বর্তমানে এক একটি অ্যান্টিভেনম ইনজেকশনের দাম ১২ হাজার টাকা। উপজেলা হাসপাতালে মাত্র চার-পাঁচটি করে অ্যান্টিভেনম দেওয়া যায়। সাপের কামড়ের রোগী বেড়ে গেলে সেখানে সংকট তৈরি হয়। অ্যান্টিভেনমের অভাবে অনেক সময় রোগী মারা যান, আবার কখনও দেওয়ার পরও সাপের প্রজাতি ভিন্ন হওয়ায় রোগী মারা যান। নিজেরা উৎপাদন শুরু করলে সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, যোগ করেন তিনি।
সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ে সাপের কামড়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাতে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্তবর্তী কদমতলা গ্রামে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সাকিবুল ইসলাম বিষধর সাপের কামড়ে মারা যান। তাকে একের পর এক কয়েকটি উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে নেওয়া হলেও কোথাও অ্যান্টিভেনম মজুদ ছিল না। অবশেষে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
সাপের কামড় সংক্রান্ত এক বার্ষিক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ৪ লাখ মানুষ সাপের কামড়ে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে ৭,৫০০-এর বেশি মারা যান। আক্রান্তদের মধ্যে এক-চতুর্থাংশই বিষধর সাপের কামড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন, ১০.৬ শতাংশ শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী এবং ১.৯ শতাংশ মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন। সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে, ৯৫ শতাংশ সাপের কামড়ের ঘটনা গ্রামাঞ্চলে ঘটে এবং পুরুষরা নারীদের তুলনায় চারগুণ বেশি আক্রান্ত হন।
বর্তমানে দেশে অ্যান্টিভেনম উৎপাদনের কোনো ব্যবস্থা নেই, অথচ সাপের কামড়ে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। প্রতিবছর প্রায় ২,৫০০টি গবাদিপশুও সাপের কামড়ে মারা যাচ্ছে।