দেশীয় লবণ চাষিদের সুরক্ষায় শুল্ক বৃদ্ধির সুপারিশ

দেশীয় শিল্প-কারখানাগুলো এক সময় কাঁচামাল হিসেবে দেশীয় লবণ ব্যবহার করত, তবে বর্তমানে তারা খোলাবাজার থেকে ডাইসোডিয়াম সালফেট ও সোডিয়াম সালফেট কিনে ব্যবহার করছে। এর ফলে দেশীয় লবণ পরিশোধন কারখানাগুলো চাষিদের কাছ থেকে কম লবণ কিনছে, যার কারণে উৎপাদিত লবণ অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধায় আমদানি করা লবণ কম দামে খোলাবাজারে বিক্রি করছে, যা দেশীয় লবণের চেয়ে সস্তা। এই পরিস্থিতিতে শিল্প মন্ত্রণালয় দেশীয় লবণচাষিদের সুরক্ষায় আমদানি করা লবণের শুল্ক শতভাগ বাড়ানোর অনুরোধ করেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সেই অনুরোধে সায় দিয়েছে।

সূত্র মতে,দেশীয় লবণচাষিদের সুরক্ষায় ৫ নভেম্বর এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়, যাতে ডাইসোডিয়াম সালফেট ও সোডিয়াম সালফেটের আমদানিতে শুল্ক বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। এসব পণ্য কম দামে আমদানি হচ্ছে এবং তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ টন অপরিশোধিত লবণ উৎপাদন হয়েছে, যা দেশের লবণ চাহিদা পূরণের পরেও ৭ লাখ ১৪ হাজার টন মজুত রয়েছে। দেশ এখন ভোজ্য লবণ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং শিল্পের জন্য ব্যবহারযোগ্য লবণও দেশীয় উৎস থেকে মেটানো হচ্ছে।

অপরদিকে আমদানিকারকরা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ৫ লাখ ৮৪ হাজার টন ডাইসোডিয়াম সালফেট ও সোডিয়াম সালফেট আমদানি করেছে, যা দেশের উৎপাদিত লবণের তুলনায় কম দামে বিক্রি হয়। ভোজ্য লবণের মূল উপাদান সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং ডাইসোডিয়াম সালফেটের উপাদান সোডিয়াম সালফেট দেখতে প্রায় একই রকম। এই কারণে দেশীয় লবণ শিল্পকে সুরক্ষিত রাখতে শিল্প মন্ত্রণালয় শুল্কহার সমান করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এর ফলে আমদানির পরিমাণ কমেছিল, তবে বর্তমানে অবৈধ কৌশলে আমদানি বাড়ছে।

এ পরিস্থিতিতে যেসব শিল্পে এতদিন কাঁচামাল হিসেবে দেশীয় লবণ ব্যবহার করা হতো তাদের অনেকেই এখন আমদানি করা ডাইসোডিয়াম সালফেট এবং সোডিয়াম সালফেট ব্যবহার করছে। ফলে লবণ পরিশোধন কারখানাগুলোও দেশি লবণচাষিদের কাছ থেকে লবণ কেনা কমিয়েছে। এতে দেশে উৎপাদিত লবণ অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। ফলে দেশীয় লবণচাষিরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দীর্ঘদিন এ অবস্থা চলতে থাকলে কৃষকরা হতাশ হয়ে লবণ উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়তে পারে। তাতে ভবিষ্যতে লবণ উৎপাদনে আগ্রহ হারাতে পারেন চাষিরা। যা লবণের সংকট করবে। লবণ ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শিল্প ও নিজস্ব উৎসজাত অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। এ শিল্পের সঙ্গে উপকূলীয় এলাকার অনেক চাষির জীবন-জীবিকা জড়িত।

মন্ত্রণালয় অভিযোগ করছে যে, আমদানি করা ডাইসোডিয়াম সালফেট এবং সোডিয়াম সালফেট সাধারণ লবণের মতো দেখতে এবং কম দামে বিক্রি হওয়ায় তা ভোজ্য লবণ হিসেবে বাজারে বিক্রি হচ্ছে, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। এসব পণ্য মানবদেহে শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং সোডিয়াম সালফেট বা ডাইসোডিয়াম সালফেটের প্যাকেটেও কৌশলে ভোজ্য লবণ হিসেবে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। দেশের লবণ শিল্পকে সুরক্ষিত রাখতে এবং জনস্বার্থ রক্ষায় শুল্ক হার ৮৯.৩২% থেকে শতভাগ বৃদ্ধি করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!