দুর্নীতি ও টাকা পাচারের অভিযোগে অভিযুক্তদের ৩৩ হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ হাজার কোটি টাকা সরাসরি ব্যাংক হিসাবে রয়েছে এবং শেয়ার থেকে জব্দ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য সম্পদও জব্দ করা হয়েছে। সরকারের একাধিক সংস্থা বিষয়টি নিয়ে আরও তদন্ত করছে, এবং ভবিষ্যতে আরও সম্পদ জব্দ হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সরকারের একাধিক সংস্থা দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। এসব সংস্থার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিভিন্ন ঘটনায় আদালতে মামলা করা হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত সাতটি মামলায় আদালত সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন।বিএফআইইউ থেকে গত জানুয়ারি পর্যন্ত ১৮ হাজারের বেশি ব্যাংক হিসাব তলব করেছে। এর মধ্যে জব্দ করা ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ৩৭৮টি। এসব হিসাবে জব্দ করা অর্থ ও অন্যান্য সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা।
এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী এস আলম গ্রুপের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তিগত হিসাব, নাসা গ্রুপের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগত হিসাব, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিভিন্ন ব্যক্তিগত হিসাব, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের ব্যক্তিগত হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া বিগত সরকারের আমলের প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবও জব্দ হয়েছে, যার মধ্যে ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকার শেয়ার রয়েছে। এসবের মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের সালমান এফ রহমানের ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকার শেয়ার বিএসইসি জব্দ করেছে। এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি শেয়ারও জব্দ হয়েছে। পরবর্তী সময়ে মামলা হলে, ওই গ্রুপের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার শেয়ার আদালত জব্দ করেছে। এছাড়া সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার শেয়ারও জব্দ করা হয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমানে ৪১২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে, এর মধ্যে ১৩০টির তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এসবের মধ্যে কয়েকটি মামলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, আর বাকিগুলোরও মামলা প্রক্রিয়াধীন। ব্যাংক জালিয়াতি, রাজস্ব ফাঁকি ও টাকা পাচারের দায়ে আরও ১০টি বড় শিল্প গ্রুপের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এসব শিল্প গ্রুপের কাছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার কিভাবে টাকা পাচারে সহায়তা করেছে, সেটিও তদন্তের বিষয়। এসব তদন্ত শেষ হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। পাশাপাশি পাচার করা টাকা ফেরত আনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং বিভিন্ন দেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তাও চাওয়া হয়েছে।