‘দুর্নীতির সঙ্গে হয়রানিও রাষ্ট্রীয় ব্যাধি’

‘বাংলাদেশ এগোচ্ছে’—এই বয়ান এখন যথেষ্ট নয়। রাষ্ট্রীয় ব্যাধি হিসেবে দুর্নীতির পাশাপাশি হয়রানিকেও চিহ্নিত করে অর্থনীতির গতি বাড়ানো দরকার। এমন মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান এক সেমিনারে। তিনি বলেন, ব্যবসা ও দৈনন্দিন জীবনে দুর্নীতি যেমন বড় সমস্যা, তেমনি হয়রানিও প্রকৃত বাস্তবতা। তাই দুটির বিরুদ্ধে সমান শক্তি প্রয়োগ করা জরুরি।

সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের ‘বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের করণীয় ও এফবিসিসিআই-এর ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করে বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম (বিবিএফ)। সেই সেমিনারে এ কথা বলেন হোসেন জিল্লুর রহমান।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা খুব সহজে আত্মতুষ্টির ফাঁদের মধ্যে ঢুকে যাই। আগেও ঢুকেছি। এখনো কিন্তু সেই আত্মতুষ্টির ফাঁদের মধ্যে ঢুকে যেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি। বাংলাদেশ এগোচ্ছে—এই বয়ান আজ আমাদের ফেলে দিতে হবে। বাংলাদেশ এগোচ্ছে—আজকের বাস্তবতায় এটা পর্যাপ্ত নয়। মূল বিষয় হলো এগোনোর গতি। এগোচ্ছে বলে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই।’ তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত, অর্থনীতিতে ও মানসিকতায় গতি আনতে হবে। ২০০৪ সালে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম একই তালিকায় ছিল, আজ ভিয়েতনাম অনেক এগিয়ে গেছে। আমাদের দারিদ্র্য উল্টো পথে হাঁটছে, ছদ্ম বেকারত্ব মহামারি পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রাথমিক স্তরে ঝরে পড়ার হার বেড়েছে। এই বাস্তবতায় অর্থনীতিতে গতি ছাড়া কাঙ্ক্ষিত অর্জন সম্ভব নয়।

গত ১৫ বছরে গোষ্ঠীতন্ত্র ও অনৈতিকতার কারণে বেসরকারি খাত কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছে। কিন্তু অর্থনীতির চাকা ঘোরাবে বেসরকারি খাতই। তাই তাদের আস্থায় আনতে হবে বলে মন্তব্য করেন হোসেন জিল্লুর রহমান। সেই সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

হোসেন জিল্লুর আরও বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতি এখন বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নতুন বিশ্বব্যবস্থা তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশকে যোগ্যতার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে। এখন আমাদের প্রবৃদ্ধির নতুন চালিকাশক্তি নিয়ে জোরালো আলোচনা শুরু করতে হবে। তৈরি পোশাক ও রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ থাকবে; সেই সঙ্গে ওষুধ, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি সেবা, চামড়া ও অন্যান্য উদীয়মান খাতকেও নতুন প্রবৃদ্ধির চালক হিসেবে আবিষ্কার ও সহায়তা করতে হবে।

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম. মাসরুর রিয়াজ মন্তব্য করেছেন, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধ ও পরিবর্তিত ভূরাজনীতির মধ্যেও বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও জাপানের কোম্পানিগুলো ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ কৌশল গ্রহণ করছে এবং চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নিতে চাইছে। রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ দেশগুলোতে বিকল্প খুঁজছে, যেখানে মেক্সিকো, ভিয়েতনাম, সংযুক্ত আরব আমিরাতের পাশাপাশি বাংলাদেশও সম্ভাব্য গন্তব্য হতে পারে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!