দুই দশকে গরু উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ১১%

গত দুই দশকে দেশে গরুর উৎপাদন মাত্র ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে মহিষের উৎপাদন বেড়েছে ৪৪ শতাংশ, ছাগলের ৪৭ শতাংশ এবং ভেড়ার ৬৪ শতাংশ। সংশ্লিষ্টদের মতে, গরুর সংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোয় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। অন্যদিকে, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার জাত উন্নয়নের ফলে সাম্প্রতিক সময়ে এসব গবাদি পশুর নতুন নতুন খামার গড়ে উঠেছে। ফলে গরুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে না বাড়লেও অন্যান্য গবাদি পশুর উৎপাদন চোখে পড়ার মতো বেড়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) এ বি এম খালেদুজ্জামান জানান, আগে দেশে একটি গরু গড়ে ২ লিটার দুধ দিত, এখন সেই গরু থেকেই ৪ থেকে সাড়ে ৪ লিটার পর্যন্ত দুধ পাওয়া যাচ্ছে। একইভাবে আগে যেসব গরুর ওজন ছিল সাড়ে ৩ মণ, এখন তা বেড়ে ১২ থেকে ১৫ মণ পর্যন্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা গরুর সংখ্যা বাড়ানোর পরিবর্তে জাত উন্নয়নের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে কাজ করছি, কারণ দেশে চারণভূমি দিন দিন কমে যাচ্ছে। সারা বিশ্বেই এখন এই মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে।

মহিষের বাজার গড়ে উঠেছে উল্লেখ করে এ বি এম খালেদুজ্জামান বলেন, অনেক মানুষের শরীরে ইন্টারমাসকুলার ফ্যাট সমস্যা থাকে, আর মহিষ ও ভেড়ার মাংসে এ ধরনের ফ্যাট কম থাকায় চিকিৎসকরা এখন মহিষের মাংস খাওয়ার পরামর্শ দেন। ফলে এখন গরু ও মহিষের মাংসের দাম প্রায় সমান। দেশে মহিষের যে দেশি জাত রয়েছে, তা আগে মূলত উপকূলীয় অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন মুররাহ জাতের মহিষ যেকোনো এলাকায় পালন করা সম্ভব। গরুর তুলনায় মহিষ পালনে খরচ কম, বাড়ে দ্রুত, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি—ফলে এটি এখন একটি লাভজনক খাত হয়ে উঠেছে। এছাড়া, গরুর মতো মহিষেও এখন কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, যার ফলে মহিষের উৎপাদনও ক্রমেই বাড়ছে। ছাগল ও ভেড়ার উৎপাদন বৃদ্ধিতেও বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ছাগল ও ভেড়ার উৎপাদন বাড়াতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে কয়েকটি প্রকল্প কাজ করেছে। সরকারি খামারগুলোতে জাত উন্নয়ন করা হয়েছে।

গরুর তুলনায় মহিষ পালনে খরচ কম হওয়ায় খামারিরাও এখন মহিষের দিকে ঝুঁকছেন। ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী গ্রামের খামারি কামরুল হাসান খোকন ২০১৬ সাল থেকে গরুর পাশাপাশি মহিষও লালন-পালন করছেন। বর্তমানে তার খামারে ১৮টি মহিষ রয়েছে। তিনি বলেন, গরুর তুলনায় মহিষ লালন-পালনে ব্যয় অনেক কম। যেমন, গরুকে প্রতিদিন ৫ কেজি খাবার দিতে হলেও মহিষ ৩ কেজিতেই চলে। মহিষ সাধারণত কম রোগে আক্রান্ত হয়, ফলে ওষুধ খরচও কম। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং দ্রুত বেড়ে ওঠে। বর্তমানে গরু ও মহিষের মাংসের দাম প্রায় এক থাকায় মহিষ পালন এখন বেশ লাভজনক হয়ে উঠেছে।

যদিও মহিষের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, তবুও কোরবানির হাটে সেগুলো তেমন একটা চোখে পড়ে না। লক্ষ্মীপুর জেলায় চলতি বছর কোরবানির জন্য প্রস্তুত পশুর সংখ্যা ১ লাখ ৩৯ হাজার। এর মধ্যে ষাঁড়, বলদ ও গাভীর সংখ্যা ৪৮ হাজারের কিছু বেশি হলেও, মহিষের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার বলে জানিয়েছে লক্ষ্মীপুর প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

যদিও পরিসংখ্যানে মহিষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য, তবে কোরবানির হাট ও সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, হাটে মহিষের উপস্থিতি খুবই কম। লক্ষ্মীপুর জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট রায়পুর উপজেলার মোল্লারহাট বাজারে হাটের দিনে সাধারণত ১০ থেকে ১৫ হাজার পশু ওঠে। স্থানীয় বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন জানান, গত মঙ্গলবার সেখানে প্রায় ১৫ হাজার পশু উঠলেও মহিষ ছিল মাত্র ২০ থেকে ৩০টি। অন্যদিকে, রামগতি উপজেলার বাসিন্দা মিশু সাহা নিক্কন জানান, রামগতি বাজারে প্রতিবারের মতো এবারও ২-৩ হাজার পশু উঠলেও মহিষ ছিল মাত্র ৫ থেকে ১০টি।

কমলনগর উপজেলার অন্যতম বড় পশুর হাট তোরাবগঞ্জ বাজারে মহিষের দেখা মেলে না বললেই চলে। তোরাবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মো. আবদুল লতিফ মন্টু জানান, প্রতি হাটে সেখানে ২-৩ হাজার গরু ও ছাগল উঠলেও মহিষ দেখা যায় না একটিও। বগুড়া ভান্ডার ডেইরি অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব বলেন, মহিষের চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ছে ঠিকই, তবে এখনো তা সীমিত। বিশেষ করে কোরবানির সময় মহিষের তেমন চাহিদা থাকে না। তবে সামগ্রিকভাবে গরুর তুলনায় মহিষ পালন অনেক সাশ্রয়ী।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!