জ্ঞাত আয় বর্হিভূত প্রায় ৫০০ কোটি টাকা কালো টাকা সাদা করেছেন এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলমের দুই ছেলে। তারা হলেন-আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলম মাহির। এই কালো টাকা সাদা করতে তাদের সহযোগিতা করেছেন কর অঞ্চল-১, চট্টগ্রাম এর সাবেক কর কমিশনার ও বর্তমানে এনবিআরের সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ। কালো টাকা সাদা করায় এস আলমের দুই ছেলের জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা ও তাদের শাস্তি দাবি করা হয়েছে। একইসঙ্গে কালো টাকা সাদা করতে সহযোগিতা করায় সাবেক এই কর কমিশনারের সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও শাস্তি দাবি করা হয়েছে। দুই ছেলে ও এনবিআরের এই কর্মকর্তার কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি অনুসন্ধান করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. সুলতান মাহমুদ। বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এই আবেদন করা হয়েছে।
আবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনৈতিকভাবে মোহাম্মদ সাইফুল আলমের (এস আলম) দুই পুত্র আশরাফুল আলম, আসাদুল আলম মাহির ও তাদের সহযোগিতাকারী সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ (সাবেক কর কমিশনার, কর অঞ্চল-১, চট্টগ্রাম) উভয়ের অবৈধভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত আয়বর্হিভূত ৫০০ কোটি কালো টাকা সাদা করার নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর কমিশনার অবৈধভাবে কোটি টাকা গ্রহণ করে ১২৫ কোটি টাকার স্থলে নামে মাত্র ৫০ কোটি টাকা আয়কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করেছেন। যা সম্পূর্ণরূপে আইন বর্হিভূত এবং অবৈধ।
অবৈধভাবে জ্ঞাত আয় বর্হিভূত অর্থ অর্জন করায় সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ, আশরাফুল আলম, আসাদুল আলম মাহিরদের বিরুদ্ধে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৭ ধারায় মামলা দায়ের করে জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ায় সদয় মর্জি হয়।
সূত্রমতে, বিতর্কিত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সাইফুল আলমের দুই ছেলে আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলম মাহির ৫০০ কোটি টাকা অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার মধ্যেমে ৭৫ কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন। দুইজনের কর নথি থেকে এই তথ্য জানা গেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেরর কাছে কর কর্মকর্তা এবং দুই ভাইকে দেওয়া নোটিশ অনুসারে, কর ফাঁকি দিতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি ব্যাংকের দুটি ‘পে অর্ডারের’ মাধ্যমে অনিয়মের আশ্রয় নেন তারা। এই ব্যাংকটি নিয়ন্ত্রণ করে সাইফুল আলমের মালিকানাধীন এস আলম গ্রুপ। নথি অনুসারে, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ২৫ কোটি টাকার দুটি পে অর্ডারের মাধ্যমে এই কালোটাকা সাদা করার উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হন আশরাফুল ও আসাদুল। এর কয়েক মাস পর দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় পেমেন্টে সফল হন তারা। এতে বোঝা যায় প্রথম দুটি পে অর্ডার ভুয়া ছিল। কালো টাকা সাদা করতে তাদেরকে বিশেষ সুযোগ দিয়েছেন এনবিআর কর্মকর্তারা। টাকা সাদা করার সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও তারা এই সুবিধা পেয়েছেন। সেই সঙ্গে দায়মুক্তিও পেয়েছেন তারা।
কর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ করের হার বিবেচনায় নিলে আশরাফুল ও আসাদুলকে অপ্রদর্শিত ৫০০ কোটি টাকার বিপরীতে কমপক্ষে ১২৫ কোটি টাকা কর দিতে হতো। অথচ তারা মাত্র ৫০ কোটি টাকা দিয়েই এই টাকা সাদা করে নেন।তাদের ট্যাক্স রিটার্ন অনুসারে, আশরাফুল এবং আসাদুল ২০২১ অর্থবছরে তাদের নিট সম্পদ দেখিয়েছেন যথাক্রমে ২৫০ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং ২৫০ কোটি ২১ লাখ টাকা। আশরাফুল তার টিন সার্টিফিকেটে নিজেকে ‘জাতীয় পরিচয়পত্রবিহীন বাংলাদেশি নাগরিক’ এবং আসাদুল, ‘বিদেশী (অ-বাংলাদেশি)’ হিসেবে নিজের পরিচয় উল্লেখ করেছেন।
সূত্রমতে, এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল এবং আসাদুল আলম ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশি নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন। তারা একই দিনে বিদেশি নাগরিক হিসাবে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমোদন পান। এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, বিদেশি নাগরিক হিসাবে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেওয়ার এক বছর আগে সাইফুল আলম ও তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য ট্যাক্স ফাইলে নিজেদেরকে ‘বিদেশি’ বা ‘অ-বাংলাদেশি’ হিসাবে পরিচয় দিয়েছিন।
***