দুই ইপিজেডের পণ্য পাচারের নিয়ন্ত্রক আওয়ামী নেতারা

গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন

** চুরির অর্থের ভাগ পায় ইপিজেড থানা পুলিশ, কাস্টমস কর্মকর্তা ও বেপজার নিরাপত্তাকর্মীরা
** ঝুট-ভাঙারি মালের সঙ্গে বের করে নেওয়া হয় শুল্কমুক্ত সুবিধার পোশাক ও মেশিনের স্পেয়ার পার্টস
** ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন মার্কেটে বিক্রি করা হয়, ১০টি কারখানা পণ্য পাচারে জড়িত
** পাচারে জড়িত প্রতিষ্ঠান জে জে মিলস, প্রিমিয়ার ১৮৮৮, সেকশন সেভেন অ্যাপারেলস, এমএনসি অ্যাপারেলস, মেরিমো, মেরিমো কো. লি., ক্যান পার্ক, রিজেন্সি, প্যাসিফিক ক্যাজুয়াল, এমজেডএম টেক্সটাইল
** সরাসরি জড়িত রয়েছেন—সিইপিজেডের গোয়েন্দা রমিজ ও জামির, কাস্টমস সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সমীরন সরকার, সাব-ইনস্পেক্টর সিরাজ সিপাহী শাহীন, কেইপিজেডের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, গোয়েন্দা পরিদর্শক নজরুল ইসলাম, রাজস্ব কর্মকর্তা আজম উল্লাহ, সিপাহী মাহফুজ ও সিপাহী হরি দাস

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পলাতক স্থানীয় নেতাদের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম ও কর্ণফুলী ইপিজেড থেকে এখনও পণ্য পাচার অব্যাহত রয়েছে। ঝুট ও ভাঙারি মালের সঙ্গে শুল্কমুক্ত পোশাক ও মেশিন স্পেয়ার পার্টসও চুরি করা হচ্ছে, যা পরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাজারে বিক্রি হয়। এই অবৈধ চক্রের অর্থ ভাগাভাগি করে নেয় ইপিজেড থানা পুলিশ, কাস্টমস কর্মকর্তা ও বেপজার নিরাপত্তাকর্মীরা। অন্তত ১০টি কারখানা এই পাচারের সঙ্গে জড়িত। সম্প্রতি একটি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইপিজেডের শিথিল নিরাপত্তা পণ্য পাচারের মূল কারণ। এখানে কর্মরত দুর্নীতিবাজদের অর্থলিপ্সার কারণে দীর্ঘদিন ধরে এ অনিয়ম চলছে। এর ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে এবং ইপিজেডে দুর্বৃত্তদের আনাগোনা বাড়ছে, যা যেকোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণ হতে পারে। পণ্য পাচার রোধে তিন দফা সুপারিশ করা হয়েছে: পাচারে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া, ইপিজেড এলাকায় গাড়ি তল্লাশি জোরদার করা এবং ইপিজেড ও কেইপিজেড কাস্টমস আউট গেটে ওজন মাপার স্কেল বসানো।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আব্দুস সোবহান শুক্রবার রাতে মোবাইল ফোনে বলেন, পুলিশ, বেপজা ও কাস্টমস আলাদা আলাদা তদন্ত করেছে। পণ্য পাচার রোধে সিইপিজেড তদারকি জোরদার করেছে। তিনি আরও বলেন, প্রায়শই ইপিজেডের গেট থেকে ঘোষণার বেশি ওজনের ট্রাক আটক করে, পরে তা কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আন্তঃসংস্থার যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে পণ্য পাচার পুরোপুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন ইপিজেডে কারখানাগুলোতে পোশাক, কাপড়, সুতা, জিনস প্যান্ট, জুতা, তাঁবু, খেলনা ও অন্যান্য পণ্য তৈরি হয়। শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানি এবং ইপিজেড-কেন্দ্রিক সুবিধার কারণে এখানে উৎপাদিত পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকে। যদিও ইপিজেডে উৎপাদিত পণ্য স্থানীয় বাজারে বিক্রির জন্য শুল্ক পরিশোধের বিধান রয়েছে, নিয়ম না মেনে একটি সংঘবদ্ধ চক্র কোটি কোটি টাকার পণ্য অবৈধভাবে বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। এসব পণ্য চট্টগ্রাম ও ঢাকার বড় বড় কাপড়ের বাজারে বিক্রি হয়। আগ্রাবাদ এবং জিইসি মোড়ের ফুটপাতের বিশাল জুতা বাজার ছাড়াও নগরীর অভিজাত বিপণি বিতানগুলোতে ইপিজেডের জুতাসহ বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যায়। দীর্ঘদিন ধরে কোটি কোটি টাকার কাপড়সহ পণ্য বের হলেও ধরা পড়ার ঘটনা খুব কম।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পণ্য পাচারে জড়িত ব্যক্তিরা হলেন-৩৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক সুমন, ব্যবসায়ী মোর্শেদুল ইসলাম তাজু। এরা দুজন সিইপিজেড ও কেইপিজেডের বিভিন্ন কারখানা থেকে অবৈধপথে পণ্য পাচার নিয়ন্ত্রণ করে। কারখানা থেকে মাল বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানো পর্যন্ত সবাইকে ম্যানেজ করে থাকে এবং টাকার ভাগাভাগিসহ পুরো প্রক্রিয়ার সমন্বয় করে। চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সহসভাপতি দেবাশিস পাল দেবু, শাহিন চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগের কর্মী শাহেদ চৌধুরী রবিন।

পাচার সিন্ডিকেটের হোতা জিয়াউল হক সুমন ও দেবাশিষ পাল দেবুর মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। পরে স্থানীয় কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ সিন্ডিকেটের বেশিরভাগ সদস্যই বিদেশে পলাতক আছে। পণ্য পাচারে জড়িত কারখানাগুলো হলো-জে জে মিলস, প্রিমিয়ার ১৮৮৮, সেকশন সেভেন অ্যাপারেলস, এমএনসি অ্যাপারেলস, মেরিমো, মেরিমো কো. লি., ক্যান পার্ক, রিজেন্সি, প্যাসিফিক ক্যাজুয়াল, এমজেডএম টেক্সটাইল উল্লেখযোগ্য।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবৈধভাবে পণ্য বের করার জন্য পুলিশ, কাস্টমস ও বেপজার কর্মীদের টাকা দিয়ে খামে রাখা হয়। সিইপিজেড ও কেইপিজেডের কাস্টমস আউটগেটে বেপজার গোয়েন্দা, পুলিশ ও কাস্টমসের নামে প্রতিটি ঝুটের গাড়ি থেকে যথাক্রমে ৩০০ টাকা, ৮০০ টাকা ও ৩০০ টাকা, আর ভাঙারি মালের গাড়ি থেকে পুলিশের জন্য ১০ হাজার, কাস্টমসের জন্য ১৫ হাজার ও বেপজার গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা কর্মীদের জন্য ৩ হাজার টাকা নেওয়া হয়। টাকার বিনিময়ে গাড়ি সঠিকভাবে পরীক্ষা না করে ছাড়ানো হয় এবং এ সুযোগে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অন্য পণ্যও বের করা হয়, এছাড়া কাগজে উল্লেখিত পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি পণ্য বহন করা হয়, ফলে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। সংগৃহীত টাকা ইপিজেড থানার ওসির কাছে জমা হয়ে বেপজা ও কাস্টমসের কর্মকর্তাদের মধ্যে ভাগ হয়। এতে সরাসরি জড়িত রয়েছেন—সিইপিজেডের গোয়েন্দা রমিজ ও জামির, কাস্টমস সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সমীরন সরকার, সাব-ইনস্পেক্টর সিরাজ সিপাহী শাহীন, কেইপিজেডের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, গোয়েন্দা পরিদর্শক নজরুল ইসলাম, রাজস্ব কর্মকর্তা আজম উল্লাহ, সিপাহী মাহফুজ ও সিপাহী হরি দাস।

** পাচারে গড়া ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান
** ১০১ অর্থ পাচারকারী শনাক্ত, ২০০ কোটি করে পাচার
** অর্থপাচার ব্যাংক ও কাস্টমসের ব্যর্থতা: চেয়ারম্যান
** বাণিজ্যের আড়ালে ৭৫ শতাংশ অর্থপাচার হয়
** পণ্য পাচারে সহযোগিতায় বেবিচক কর্মকর্তা অভিযুক্ত
** চেয়ারম্যান-সিইওর বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ
** অডিট দুর্বলতায় অর্থপাচার ও ঋণ খেলাপি বেড়েছে
** অর্থপাচারে স্বামীসহ ফেঁসে যাচ্ছেন সাঈদা মুনা
** অর্থ পাচারকারীদের সঙ্গে সমঝোতার ইঙ্গিত সরকারের
** পাচার অর্থে বিদেশে বিনিয়োগ টি কে গ্রুপের
** ‘১৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয় পুঁজিবাজার থেকে’
** সোনা পাচারে জড়িত দেশি-বিদেশি ২০৯ মাফিয়া
** রপ্তানির ছলে ১৫০০ কোটি টাকা পাচার
** অর্থ পাচার রোধে বিশেষ ইউনিট গড়তে চায় এনবিআর
** মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আড়ালে দম্পতির অর্থপাচার
** মেঘনা গ্রুপের এক লাখ কোটি টাকা পাচার
** পাচারের শতকোটি টাকা আসতে পারে চলতি বছরেই
** ফাঁকি-পাচার আয়কর ও ভ্যাট গোয়েন্দাকে তদন্তের সুপারিশ
** ছয় মাসে পাচার সম্পদ ফ্রিজে প্রস্তুত কেন্দ্রীয় ব্যাংক
** অর্থ পাচারকারীদের জীবন কঠিন করে ফেলা হবে
** পাচারের টাকায় বিদেশে ‘কামাল পরিবারের’ সাম্রাজ্য
** লোপাটের ৬১৬ কোটি টাকা কানাডায় পাচার
** পাচারের অর্থ ফেরাতে শ্রীলঙ্কার সহায়তা চেয়েছে ঢাকা
** পাচারের টাকায় ৮ গ্রুপের বৈশ্বিক সাম্রাজ্য
** পাচারের টাকায় দুবাইয়ে বাপবেটার অট্টালিকা
** ইনকামিং কল: দুই প্রতিষ্ঠানের পাচার ৮০০ কোটি টাকা
** পাচারের ৪৫ কোটি টাকার ক্রিপ্টোকারেন্সি জব্দ
** ১৩৩ কোটি টাকা পাচার, ইমরান গ্রেফতার
** ছেলের টিউশন ফি’র নামে ৫০০ কোটি টাকা পাচার
** ‘ট্যাক্স এক্সপার্ট’র সহায়তায় পাচারের অর্থে আদায় হবে কর
** পাচার টাকা উদ্ধারে কাজ করেবে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান
** অর্থপাচারে অভিযুক্ত ৩৭৮ জনের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ
** নগদের ২৩৫৬ কোটি টাকা দুর্নীতি ও পাচারের প্রমাণ পেয়েছে দুদক
** অর্থপাচার ও ব্যাংক ধ্বংস: রক্ষকরা ভক্ষক
** টিউলিপরে অর্থপাচার ১২ দেশে তদন্ত হচ্ছে
** পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে তিন সংস্থার জোট
** নোভারটিস ও রেডিয়েন্টের শেয়ার হস্তান্তরে অর্থপাচার!
** পাচার ২২ লাখ কোটি টাকা, বেশিরভাগ এলসিতে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!