আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। আজ সোমবার বিকেলে অর্থ মন্ত্রণালয়ে তিনি এই বাজেট পেশ করেন।
বাজেট বক্তৃতার শুরুতে অর্থ উপদেষ্টা একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণ করেন। একইসঙ্গে তিনি স্মরণ করেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অকুতোভয় শহীদদের। তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন তিনি। বলেন, ‘২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের এক ক্রান্তিলগ্নে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। আমাদের ওপর বর্তায় বিগত সরকারের রেখে যাওয়া প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার এবং নৈরাজ্য দূর করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার কঠিন কাজটি।
‘আমি স্বস্তি এবং আনন্দের সাথে জানাতে চাই, মাত্র ১০ মাসেরও কম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে সে লক্ষ্য পূরণে অনেকদূর এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থান এর পর যে আশায় আমরা বুক বেঁধেছিলাম তা খুব শীঘ্রই আমরা পূরণ করতে সক্ষম হবো ইনশাল্লাহ।’
বাজেটে নিম্নোক্ত পণ্যের দাম বাড়ানো ও কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
দাম বাড়বে
মোবাইল ফোন
মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমিয়ে এর মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। দুই ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ করে ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
সিগারেট
সিগারেট পেপার আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক হার ১৫০ শতাংশের পরিবর্তে ৩০০ শতাংশের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। তামাক বীজ আমদানির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। আগে এই বীজ আমদানিতে কোনো শুল্ক দিতে হতো না। সিগারেটের সম্ভাব্য মুনাফার ওপর ৩ শতাংশের বদলে আরোপ করা হয়েছে ৫ শতাংশ।
চকোলেট ও সাজসজ্জা উপকরণ
চকোলেট এবং সাজগোজের বিভিন্ন উপকরণ শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য বাড়ানো হয়েছে। যার ফলে এসব পণ্যের দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
এর মধ্যে কোকায়া চকোলেট সমৃদ্ধ বিভিন্ন ধরণের পণ্যের কেজিপ্রতি ন্যূনতম মূল্য ৪ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১০ ডলার করা হয়েছে।
ঠোঁটসজ্জার উপকরণ লিপস্টিকের শুল্কায়নের কেজিপ্রতি ন্যূনতম মূল্য ২০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৪০ ডলার করা হয়েছে। এছাড়া লিপলাইনার, লিপজেল, লিপগ্লস বা এ ধরণের পণ্যের ন্যূনতম মূল্য ২০ ডলার ঠিক করা হয়েছে।
চোখের সজ্জার উপকরণ আই শ্যাডো, আই লাইনার, আইব্রো পেন্সিল, মাশকারা ইত্যাদির প্রতি কেজির ন্যূনতম মূল্য ৭ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১০ ডলার করা হয়েছে। মেনিকিউর, পেডিকিউর এবং বিভিন্ন ধরণের পাউডারের ন্যূনতম মূল্য ৫ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১০ ডলার করা হয়েছে।
ফেইস ও স্কিন ক্রিমের ন্যূনতম মূল্য ৮ ডলার থেকে বাড়িয়ে ২০ ডলার করা হয়েছে। ময়েশ্চারইজার লোশনের জন্য ন্যূনতম মূল্য ৮ থেকে বাড়িয়ে ১০ ডলার করা হয়েছে। মেকাপ কিট, ফাউন্ডেশন বা এ ধরণের পণ্যের ন্যূনতম মূল্য ৬ থেকে ১২ ডলার করা হয়েছে। মেহেদী কোণের ন্যূনতম মূল্য ধরা হয়েছে ২ ডলার; আর ফেইসওয়াশের ন্যূনতম মূল্য গুণতে হবে প্রতি কেজিতে ১০ ডলার করে।
সাবান, শ্যাম্পু
স্থানীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে কাঁচামালের ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ফলে দাম বাড়তে পারে এসব পণ্যের।
ফ্রিজ, এসি
রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার, এয়ারকন্ডিশনার ও তাদের কম্প্রেসর, পলিপ্রোপাইলিন স্ট্যাপল ফাইবার এবং আইডল স্টার্ট-স্টপ ব্যাটারি স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে দাম বাড়তে পারে এসব পণ্যের।
সেট টপ বক্স, কলম
টিভি দেখার সেট টপ বক্স, বলপয়েন্ট কলম এবং কিছু সার্জিকাল পণ্যে আমদানি পর্যায়ের ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে দাম বাড়তে পারে এসব পণ্যের।
লিফট
লিফট, স্কিপ হোয়েস্ট ও এস্কেলেটরের যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক ১ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডার
স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমানো হয়েছে। তবে এর অব্যাহতির মেয়াদ ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ফলে সিলিন্ডারের দাম সামান্য বাড়তে পারে।
ওয়াশিং মেশিন, ওভেন
ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ও ইলেকট্রিক ওভেনের ওপর স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমিয়ে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম সামান্য বাড়তে পারে। বিভিন্ন ধরণের ওভেন, কুকিং প্লেট, বয়েলিং রিং ইত্যাদির প্রতি ইউনিটের ন্যূনতম মূল্য ৬ ডলার থেকে ১২ ডলার করা হয়েছে।
ব্লেন্ডার, রাইস কুকার
ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সার, গ্রাইন্ডার, ইলেক্ট্রিক কেটলি, আয়রন, রাইস কুকার, মাল্টি কুকার ও প্রেসার কুকারের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমিয়ে মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এগুলোরও দাম সামান্য বাড়তে পারে।
থ্রি-হুইলার
ফোর স্ট্রোক থ্রি-হুইলারের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমানো হয়েছে। তবে এর অব্যাহতির মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
গাড়ির যন্ত্রাংশ
দাম বাড়ছে গাড়ির যন্ত্রাংশেরও। সামনের ও পেছনের কাঁচ (উইন্ডশিল্ড) এবং জানালার কাঁচের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। ব্রেক লাইনিং ও ব্রেক প্যাডের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ব্রেক ও সার্ভো ব্রেক এবং এর যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক ১০ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।
গিয়ার বক্স ও এর যন্ত্রাংশ, ডিফারেন্সিয়ালসহ ড্রাইভ এক্সেল, নন ড্রাইভিং এক্সেল এবং এগুলোর যন্ত্রাংশ, চাকা ও এর যন্ত্রাংশ, শক এবজর্বারসহ সাসপেন্সন সিস্টেম, রেডিয়েটর ও এর যন্ত্রাংশ, সাইলেন্সার-মাফলারসহ এক্সস্টের যন্ত্রাংশ, ক্লাচ অ্যাসেম্বলির যন্ত্রাংশ, স্টিয়ারিং হুইল, স্টিয়ারিং কলাম, স্টিয়ারিং বক্স ও এর যন্ত্রাংশ, এয়ারব্যাগ ও এর যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক ১০ থেকে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের গাড়ির তালা ও প্যাডলকের ক্ষেত্রে শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য আড়াই থেকে ৩ ডলার করা হয়েছে।
ইস্পাত
হালকা ইস্পাতের উৎপাদন পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট কর প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
কার্পাস তুলা
উৎপাদন পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট করহার ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
ইয়ার্ন
কৃত্রিম আঁশ ও অন্যান্য আঁশের সংমিশ্রণে তৈরি ইয়ার্ন উৎপাদন পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট করহার ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
ব্লেড
উৎপাদন পর্যায়ে ব্লেডের ভ্যাট হার ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ফলে দাড়ি কাটতে গুনতে হতে পারে বাড়তি অর্থ।
তার কাটা
তার কাটা ও টোপকাটাসহ বিভিন্ন প্রকারের স্ক্রু, জয়েন্ট (কানেক্টর), নাট, বোল্ট, ইলেকট্রিক লাইন হার্ডওয়্যার এবং পোল ফিটিংস উৎপাদনের ক্ষেত্রে উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট হার ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭ দশমিক ৫ শতাংশের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এলইডি বাল্ব
এলইডি বাল্ব ও এলইডি মডিউলের আমদানি শুল্ক ১৫ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।
আসবাবপত্রের তালা
শুল্কায়নের ক্ষেত্রে ফার্নিচারের তালার ন্যূনতম মূল্য ৩ থেকে সাড়ে তিন এবং দরজার তালার ন্যূনতম মূল্য ৪ থেকে বাড়িয়ে ৫ ডলার করা হয়েছে। এসব কেজিপ্রতি হিসাবে ন্যূনতম মূল্য ধরে শুল্কায়ন করা হবে।
খেলনা
ফোলানো যায়- এমন খেলনা, বেলুন, খেলনা লেজার লাইট, মার্বেল, পাফার, খেলনা মুখোশ ইত্যাদির ন্যূনতম মূল্য সাড়ে ৩ থেকে বাড়িয়ে ৪ ডলার করা হয়েছে।
মার্বেল, গ্রানাইট
বিভিন্ন ধরনের মার্বেল ও গ্রানাইটের আমদানি শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে।
সেবা
• নির্মাণ সংস্থা সেবার মূল্য সংযোজন কর ৭ দশমিক ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশের কথা বলা হয়েছে।
• অনলাইনে পণ্য বিক্রির কমিশনের ওপর মূল্য সংযোজন কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
• সেল্ফ কপি পেপার, ডুপ্লেক্স বোর্ড, কোটেড পেপারের ক্ষেত্রে উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৭ দশমিক ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ করার কথা বলা হয়েছে।
• প্লাস্টিকের তৈরি সব ধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালী সামগ্রী, হাইজেনিক ও টয়লেট সামগ্রীর উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
দাম কমবে
ব্যাংকে টাকা জমা
এক লাখ টাকার পরিবর্তে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক স্থিতির ওপর আবগারি শুল্ক অব্যাহতির প্রস্তাব রয়েছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে। সে ক্ষেত্রে ব্যাংকে টাকা জমা রাখার ক্ষেত্রে খরচ কমতে পারে।
এলএনজি
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস- এলএনজির আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব রয়েছে নতুন অর্থবছরে। এর প্রভাব জ্বালানি পণ্যটির দাম কমতে পারে।
তৈজসপত্র
পাতা, ফুল বা বাকলের তৈরি প্লেট ও বাটিসহ সব ধরনের তৈজসপত্র, হাতে তৈরি মাটির তৈজসপত্র, টেক্সটাইল গ্রেড ডেট চিপসের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে নতুন অর্থবছরে এসব পণ্য আরও কম দামে মিলতে পারে।
তরল দুধ
এবার স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে যেসব পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন, প্যাকেটজাত তরল দুধ ও বলপয়েন্ট কলমের স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে।
মনিটর
২২ ইঞ্চির পরিবর্তে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত কম্পিউটার মনিটরের উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য
পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে অপরিশোধিত এবং পরিশোধিত, উভয় ধরনের পেট্রোলিয়াম আমদানিতে শুল্ক-কর হার কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন অর্থবছরে। এসসব পণ্যের ওপর থেকে ট্যারিফ মূল্য প্রত্যাহারের প্রস্তাবও করা হয়েছে।
চিনি
পরিশোধিত চিনি আমদানি শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত পণ্যটি কিছুটা কম দামে পেতে পারেন ভোক্তারা
ক্যান্সারের ওষুধ
ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধসহ সব ধরনের ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ও ‘অ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্টস’ তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক-কর অব্যাহতি সুবিধা সম্প্রসারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
কোল্ড স্টোরেজ
কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দিয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন জারির প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন অর্থবছরে। এ প্রস্তাব পাস হলে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে কোল্ড স্টোরেজ ভাড়ার ক্ষেত্রেও।
কৃষি যন্ত্রপাতি
স্থানীয়ভাবে কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনকে উৎসাহ দিতে কম্বাইন্ড হারভেস্টার তৈরির যন্ত্রাংশ আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাস-মাইক্রোবাস, ই-বাইক
প্রস্তাবিত বাজেটে যানবাহন খাতে বেশ কিছু শুল্ক ও কর কমানোর প্রস্তাব এসেছে। এর ফলে টায়ার, বাস-মাইক্রোবাস, ইলেকট্রিক ও হাইব্রিড গাড়ি এবং ই-বাইকের দাম কমতে পারে। ১৬ থেকে ৪০ আসনের বাসের শুল্ক-কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। একই ধরনের প্রস্তাব রয়েছে ১০-১৫ আসনের মাইক্রোবাসের ক্ষেত্রেও। এছাড়া সাধারণ ও আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সসহ হাইব্রিড ও ইলেক্ট্রিক গাড়ির ক্ষেত্রে ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা।
টায়ার
টায়ার উৎপাদনের বিভিন্ন উপকরণের শুল্ক কমানোর প্রস্তাবও রয়েছে নতুন অর্থবছরে।
হিমায়িত মাংস
বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর মাংস ও ভক্ষণযোগ্য উপাদানের আমদানি শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে- গরু, মহিষ জাতীয় প্রাণী, ছাগল ও ভেড়ার হিমায়িত মাংস।
সামুদ্রিক মাছ
বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছের আমদানি শুল্কও ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, বিভিন্ন ধরনের স্যামন ও টুনা, মাছের মাথা-লেজ, টিনে থাকা মাছের টুকরো বা গুড়া।
পাস্তা
পাস্তাসহ বিভিন্ন ধরনের সিরিলিক খাবারের আমদানি শুল্ক ৩০ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। নন অ্যালকোহলিক বেভারেজ, খনিজ পানি, মিষ্টিযুক্ত অথবা ফ্লেভারড পানির আমদানি শুল্ক দেড়শ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ১০০ শতাংশ।
জ্বালানি পণ্য
বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি পণ্যের শুল্ক কমানো হয়েছে ২০ থেকে একশ শতাংশ পর্যন্ত। এর মধ্যে গ্যাসীয় অবস্থায় আমদানি করা প্রাকৃতিক গ্যাসের শুল্ক একশ শতাংশ থেকে এক লাফে শূন্যে নামানো হয়েছে।
আংশিক পরিশোধিত পেট্রোলিয়ামসহ অন্যান্য ভারি তেল ও প্রিপারেশনের আমদানি শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য শতাংশ করা হয়েছে। রিসাইকেলড লুব্রিকেটিং ওয়েল ও রিসাইকেলড লুব বেইজ ওয়েলের আমদানি শুল্কও ২০ শতাংশ থেকে শূন্য শতাংশ করা হয়েছে।
প্লাস্টিক পণ্য
প্লাস্টিকের তৈরি বাক্স, টেবিল বা কিচেন ওয়্যার, পলিমারের বস্তা ও ব্যাগ, প্লাস্টিকের তৈরি দরজা-জানালা, ফ্রেম, থ্রেশ হোল্ড, স্পুল-ক্যাপ-ববিন এবং এ ধরনের অন্যান্য পণ্যে আমদানি শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে।
আমদানি করা জুতা-জামা
পুরুষ ও নারীদের বিভিন্ন ধরনের আমদানি করা পোশাক ও জুতার আমদানি শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ছেলেদের শার্ট, জ্যাকেট, ব্লেজার, ট্রাউজার, ব্রেস ওভারঅল, বিব, ব্রিচেস, সিন্থেটিকের শর্টস ও অন্তর্বাস।
জার্সি, পুলওভার, ওয়েস্ট কোট, কার্ডিগান বা এ ধরনের পোশাকও রয়েছে তালিকায়। স্টকিং, মোজা ও এ ধরনের হোসিয়ারি পণ্যের দামও কমতে পারে।
ভেস্ট, ব্রিফ, প্যান্টি, ব্রেসিয়ার, নেগলিজেস, বাথরবস, ড্রেসিং গাউন, শাল, স্কার্ভ, মাফলার, ম্যান্টিলাস (এক ধরনের ওড়না), নেকাব (ভেইল) বা এ ধরনের পোশাকের শুল্কও কমানো হয়েছে। রাবার, প্লাস্টিক, চামড়া বা কাপড়ের জুতার আমদানি শুল্কও ৪৫ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে।
এবার আমদানি শুল্ক শূন্য শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে ১১০টি পণ্যের ক্ষেত্রে। এই তালিকায় রয়েছে- বিভিন্ন ধরনের ইয়ার্ন বা আঁশ, নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর, রিয়্যাক্টরের বিভিন্ন অংশ, বয়লার, হাইড্রলিক টার্বাইন, গ্যাস টার্বাইন, মিল্কিং মেশিন ও ডেয়রি মেশিন এবং এগুলোর কিছু যন্ত্রাংশ।
ওয়াইন-সেডার ও ফলের রস উৎপাদনের যন্ত্র, চিনির মিলের যন্ত্র, পোল্ট্রির ইনকিউবেটর ও ব্রুডার এবং এগুলোর যন্ত্র, স্পিনিং মিল-বেকারি-ব্রুয়ারির যন্ত্র, এমআরআই যন্ত্র, বিভিন্ন ধরনের বন্দুক, হাউইটজার (এক ধরনের কামান), মর্টার, রকেট লাঞ্চার, ফ্লেইম থ্রোয়ারস, গ্রেনেড লাঞ্চার, টর্পেডো টিউব এবং এ ধরনের অস্ত্র।
ডেটাবেইজ, অপারেটিং সিস্টেমস, ডেভেলপমেন্ট টুলস, ডেটা বা তথ্য সুরক্ষায় ব্যবহৃত সিকিউরিটি সফটওয়্যার, ওয়ার্ড প্রসেসিং, স্প্রেডশিঠ, ইন্টারনেট কলাবরেশন এবং প্রেজেন্টেশন টুলসের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
সোমবার বিকাল ৩টায় রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। অন্যান্য সংবাদমাধ্যমেও তা প্রচার হয়। এর আগে সকালে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় অনুমোদন পায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে বাজেট উপস্থাপন করা হচ্ছে ভিন্ন আঙ্গিকে। এই বাজেট প্রস্তাব পাস হবে ৩০ জুন; ১ জুলাই শুরু হবে নতুন অর্থবছর।