গাড়িগুলোর কোনোটি ল্যান্ড ক্রুজার, মার্সিডিজ বেঞ্জ কিংবা রেঞ্জ রোভার। রয়েছে বিএমডব্লিউ, হ্যারিয়ার ব্র্যান্ডের মতো মূল্যবান গাড়িও। বিলাসবহুল এসব গাড়ির বেশির ভাগেরই দাম ১০ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু নিলামে তুললে এসব গাড়ি বিক্রি হয় না লোহার দামেও।
দীর্ঘদিন পড়ে থাকা, উচ্চ সংরক্ষিত মূল্য, যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়া, ছাড়পত্র জটিলতা ও নিলাম সিন্ডিকেটের কারণে কাস্টমস ন্যায্য শুল্ক পাচ্ছে না। কিছু গাড়ি ৮-১০ বার নিলামে তুলেও বিক্রি হয়নি, ফলে আগেও ১২১টি গাড়ি স্ক্র্যাপ করা হয়েছে। এরপরও বন্দরে শতাধিক নিলামযোগ্য গাড়ি পড়ে আছে।
এই ধারা থেকে বের হতে এবার নতুন থাকতেই কিছু গাড়ির নিলাম ডেকেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সদ্য সাবেক হওয়া ২৪ এমপির গাড়িসহ ৪৪টি গাড়ি নিলামে তোলা হয়েছে এবার। সিন্ডিকেট ভাঙতে চট্টগ্রামের বাইরেও অনলাইনে নিলামে অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এবারে নিলামে ওঠানো গাড়ির মধ্যে আছে জাপানের তৈরি ২৬টি ল্যান্ড ক্রুজার, পাঁচটি টয়োটা হ্যারিয়ার, দুটি টয়োটা র্যাভ ফোর ও একটি টয়োটা এস্কোয়ার। এসবের মধ্যে ২৪টি ল্যান্ড ক্রুজার একদম নতুন, যা শুল্কমুক্ত সুবিধায় সাবেক সংসদ সদস্যরা এনেছিলেন ৫ আগস্টের আগমুহূর্তে। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের কারণে এসব গাড়ি আর শুল্কমুক্ত সুবিধায় খালাস করার সুযোগ পাননি তারা।
নিলাম তত্ত্বাবধানকারী চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা বিজন কুমার তালুকদার বলেন, নিলামে একের পর এক গাড়ি তুললেও আমরা সেটা ইচ্ছামতো দামে বিক্রি করতে পারি না। এখানে এনবিআরের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হয়। নিলামে অংশগ্রহণকারীর কাছে সংরক্ষিত মূল্যের কাছাকাছি দর না পেলে একটি গাড়ি একাধিকবার নিলামে তুলতে হয়। তবে এবারে যে ৪৪টি গাড়ি নিলামে তোলা হয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগই নতুন।
গত ২৭ জানুয়ারি অনলাইনে এসব গাড়ি নিলামে তোলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। অনলাইনে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ নিলামে অংশ নিতে পারবেন। নিলাম পণ্যও অনলাইনে প্রদর্শন করা হবে। ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বাক্স উন্মুক্ত করা হবে।
যে কারণে নিলামে ন্যায্য দাম মিলছে না
কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে আমদানি পণ্য নামার ৩০ দিনের মধ্যে আমদানিকারককে সরবরাহ নিতে হয়। এই সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে বন্দর কর্তৃপক্ষ কাস্টমসের নিলাম শাখায় আরএল (অখালাসকৃত চালানের তালিকা) পাঠায়। নিলাম শাখা সংশ্লিষ্ট আমদানিকারককে নোটিশ দেয়। নোটিশের ১৫ দিনের মধ্যেও পণ্য সরবরাহ না নিলে সর্বমোট ৪৫ দিনের মধ্যে পণ্য নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস।
কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিলাম না হওয়ার কারণে বন্দর ইয়ার্ডে কিংবা কনটেইনারে থাকা গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। চুরি হয়ে যায় গাড়ির মূল্যবান যন্ত্রাংশ। আবার নিলামে বিক্রি হওয়া গাড়ির বাণিজ্য ছাড়পত্র দিতে গড়িমসি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। হয়রানি করে বিআরটিএ-ও। এসব কারণে নিলাম থেকে গাড়ি কিনতে চায় না অনেকে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এনবিআর যদি নিলাম প্রক্রিয়া সহজ করত এবং বাধাগুলো দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিত, তাহলে বিলাসবহুল গাড়ি স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করতে হতো না। নিলামে মিলত ন্যায্য দর। সরকারের কোষাগারে জমা হতো শতকোটি টাকার রাজস্ব।
৩৪ বিলাসবহুল গাড়ি ৯ কোটিতে বিক্রি
চট্টগ্রাম কাস্টমস ২০২২ সালে ৩৪টি বিলাসবহুল গাড়ি নিলামে বিক্রি করে, যার মোট মূল্য ছিল ৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা। বিক্রিত গাড়িগুলোর মধ্যে মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ, জাগুয়ার, ল্যান্ড ক্রুজার, রেঞ্জ রোভারসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গাড়ি ছিল। প্রতি গাড়ির গড় বিক্রয়মূল্য ছিল ৩২ লাখ ৭ হাজার ১৩৪ টাকা। তবে কার্নেট ডি প্যাসেজ সুবিধায় আনা ১০৮টি গাড়ির নিলামে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ বিক্রি হয়।