বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘দেশের ব্যাংকগুলোর ‘কোর ব্যাংকিং সিস্টেম’ বেশির ভাগ ভারতের। এ ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ ছাড়া দক্ষ ব্যাংক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দেশে এখন ভালো ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও ব্যাংকারদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবু সবচেয়ে কার্যকর প্রশিক্ষণ হয় কর্মক্ষেত্রে। কিন্তু বাস্তবতা হলো ব্যাংক খাতে প্রশিক্ষণ ও জনবল উন্নয়নে বড় ধরনের যে বিনিয়োগ দরকার, আমাদের সেই সক্ষমতা নেই।’
রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলের বলরুমে শনিবার (৪ অক্টোবর) আর্থিক খাতের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্স (ফিনএক্সেল)-এর ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংক খাতে শুধুমাত্র প্রশিক্ষণ যথেষ্ট নয়; দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং কর্মক্ষেত্রে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনও জরুরি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন গভর্নর, আর প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, যিনি বক্তৃতায় উল্লেখ করেন যে ব্যাংক কর্মকর্তাদের শুধু পেশাগত প্রশিক্ষণ নয়, মন ও নৈতিকতার প্রশিক্ষণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রশিক্ষিত কিন্তু অসৎ ব্যক্তি অনেক সময় অপ্রশিক্ষিত ব্যক্তির চেয়ে প্রতিষ্ঠান ও দেশের জন্য বেশি ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এ সময় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী তিন–চার মাসের মধ্যে আমাদের আরও বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত পরবর্তী সরকারের জন্য একটি কার্যকর পদচিহ্ন রেখে যাওয়া, যাতে তারা তা অনুসরণ করতে পারে। যদি তা না হয়, জনগণই তাদের পথে বাধ্য করবে। ইতিহাস পুনরাবৃত্তি হতে পারে, কারণ জনগণ এখন অত্যন্ত সচেতন। আমরা স্বীকার করি যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও নীতিনির্ধারণে কিছু ঘাটতি আছে, এবং মাত্র ১৪ মাসে আগের সব ভুল শুধরে ফেলা সম্ভব নয়। তাই জনগণের ধৈর্য প্রয়োজন। তবে আমরা চেষ্টা করছি, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কিছু মৌলিক সংস্কার কার্যকর করতে।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, রাজনৈতিক প্রভাবও ব্যাংক খাতের সুশাসনে বড় বাধা। ব্যাংকগুলো প্রায়ই ঝুঁকি আগেভাগে মূল্যায়ন না করে একই ধরনের ব্যবসায় একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দেশের আর্থিক খাতের আকার জিডিপির মাত্র ৫২ থেকে ৫৩ শতাংশ। চীনে যেখানে এটি ২০০ শতাংশের বেশি এবং ভারতে প্রায় ১০০ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশের এই অবস্থান গ্রহণযোগ্য নয়।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্সের চেয়ারম্যান মামুন রশীদ বলেন, ‘আমরা ব্যাংকিং খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নির্ভর সমাধান, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, আলোচনার কৌশল ও সম্পর্ক ব্যবস্থাপনাসহ নানা বিষয়ে এক শর বেশি প্রশিক্ষণ আয়োজন করেছি।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্সের পরিচালক সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার ও হাবিবুর রহমান, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সিপিডির (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশ (এসসিবি)-এর সিইও নাসের এজাজ বিজয়, অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)-এর চেয়ারম্যান শরীফ জহির, এবং মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল প্রমুখ।