দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথমবারের মতো একক পরিবার বা একা বসবাসকারীর সংখ্যা এক কোটির বেশি হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মোট ২ কোটি ৪১ লাখ পরিবারের মধ্যে প্রায় ১ কোটি ১২ লাখই একক পরিবার। অর্থাৎ দেশটির ৪২ শতাংশ মানুষ একা বসবাস করছেন, যা ২০২০ সালে ছিল ৩৯ দশমিক ২ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রবণতা শুধু জনসংখ্যাগত পরিবর্তন নয়, বরং জন্মহার ও বিয়ের হার হ্রাস এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠী দ্রুত বাড়ার প্রতিফলন। উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যা ছিল ৫ কোটি ১৮ লাখ, যা ২০২৪ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ১২ লাখে। টানা পাঁচ বছর ধরে দেশটির জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।
‘স্ট্যাটিসটিকস কোরিয়া’র তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়ায় অন্তত ৫৬ লাখ পরিবারের সদস্যদের বয়স ৬৫ বছর বা তার বেশি। এর মধ্যে একা বসবাস করেন ২১ লাখেরও বেশি প্রবীণ, যা মাত্র এক বছরে ৩৭ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তরুণদের মধ্যেও একা থাকার প্রবণতা বাড়ছে। বর্তমানে একক পরিবারের মধ্যে ৩২ লাখ মানুষের বয়স ২০ থেকে ৩০-এর মধ্যে, আর ৩৮ লাখের বয়স ৬০ বছরের ওপরে। রাজধানী সিউলে একা বসবাসকারীর হার ২০১৫ সালের ২৯ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার একক পরিবারের প্রবণতা দেশটির আবাসন বাজারেও প্রভাব ফেলছে। আগে যেখানে মূলত ক্রয়যোগ্য অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ হতো, এখন ভাড়াভিত্তিক ছোট আকারের আবাসনের চাহিদা বেড়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে অস্ট্রেলিয়ার ‘দ্য লিভিং কোম্পানি’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘গ্রেস্টার’ সিউলে বিনিয়োগ শুরু করেছে। ছোট ফ্ল্যাট এবং ‘অফিসটেল’—যেখানে বসবাস ও কাজ একসঙ্গে সম্ভব—ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে এ জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের সামাজিক প্রভাবও উদ্বেগজনক। ২০২২ সালে সিউল ইনস্টিটিউটের জরিপে দেখা গেছে, একক পরিবারের ৬২ শতাংশ মানুষ একাকিত্ব অনুভব করছেন। শহরে ১ লাখ ৩০ হাজার তরুণ সামাজিকভাবে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। আরও উদ্বেগজনক হলো, ২০২৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩ হাজার ৬০০-এর বেশি ‘লোনলি ডেথ’ বা নিঃসঙ্গ মৃত্যু নথিভুক্ত হয়েছে।
এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিউল শহর কর্তৃপক্ষ গত বছর ‘লোনলিনেস ফ্রি সিউল’ নামে পাঁচ বছরের একটি প্রকল্প শুরু করেছে। মেয়র সে-হুন জানিয়েছেন, একাকিত্ব ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি একটি সামাজিক সমস্যা, যার সমাধানে প্রশাসনের সব সম্পদ ব্যবহার করা হবে। এছাড়া ২০২৩ সালে লিঙ্গ সমতা ও পরিবার মন্ত্রণালয় বিচ্ছিন্ন তরুণ-তরুণীদের জন্য মাসিক সর্বোচ্চ ৬ লাখ ৫০ হাজার উন (প্রায় ৫৭ হাজার টাকা) পর্যন্ত আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে, যাতে তাদের মানসিক ও সামাজিক স্থিতি উন্নত করা যায়।