বিজনেস বার্তা বিদেশ ডেস্ক: ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের সামরিক জোটের সদস্য হওয়া তুরস্ক আটকাবে না বলে তারা আশাবাদী। রবিবার ফিনিশ প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তো জোটের সদস্য হতে আবেদন করার ঘোষণা দেওয়ার পর এই আশাবাদের কথা জানানো হলো। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এখবর জানিয়েছে।
ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের পর নরডিক দেশ দুটি ন্যাটো জোটে যোগ দিতে চাইছে। শুক্রবার তুরস্ক এমন পদক্ষেপের বিরোধিতা করার ঘোষণা দিয়েছিল। ন্যাটোর বিধি অনুসারে, জোটের সম্প্রসারণে সব সদস্য রাষ্ট্রের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে এক্ষেত্রে তুরস্কের ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। সুইডেনের ক্ষমতাসীন সুইডিশ সোশাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টিও ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশটির পরররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান লিন্ডে জানান, ক্ষমতাসীন দলটি ন্যাটো প্রতিরক্ষা জোটের সদস্য হওয়ার জন্য আবেদনের প্রতি সম্মতি জানিয়েছে। ইউক্রেনে রুশ হামলা সুইডেন ও পুরো ইউরোপের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে।
শুক্রবার সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের ন্যাটো যোগদান নিয়ে আপত্তি জানিয়ে জোট মিত্রদের অবাক করেছে তুরস্ক। রবিবার দুটি দেশের জোটের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কয়েকটি শর্তপূরণের দাবি তুলেছেন তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বার্লিনে ন্যাটো পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি জানান, তুরস্ক চায় নরডিক দেশগুলো কুর্দি জঙ্গিদের সমর্থন বন্ধ এবং তুরস্কের কাছ অস্ত্র কেনাতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে।
তবে একই দিনে ন্যাটোর মহাসচিব জেন্স স্টোলটেনবার্গ বলেছেন, আমি আত্মবিশ্বাসী যে, তুরস্কের উদ্বেগ আমরা নিরসন করতে পারব এমন উপায়ে যাতে করে দেশ দুটির সদস্যপদ দেওয়া আটকে না যায়। বার্লিনের রুদ্ধাদ্বার বৈঠকের বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, আমার দৃঢ় আশাবাদী যে আমরা এই বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব। ন্যাটো সংলাপের একটি ক্ষেত্র।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলু বলেছেন, ৭০ বছর আগে ন্যাটোতে যোগ দেওয়া তুরস্ক জোটটির মুক্তদ্বার নীতির বিরোধিতা করে না। সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠক ভালো ছিল এবং তারা আঙ্কারার বৈধ উদ্বেগ নিরসনে পরামর্শ দিয়েছেন। যা তুরস্ক বিবেচনা করবে। তুর্কি মন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন, তুরস্কের অবস্থানের শ্রদ্ধাশীল নয় সুইডেন। সপ্তাহান্তে সুইডেনের স্টকহোমে পিকেকে জঙ্গিরা বৈঠক করেছে।
ন্যাটো কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের সদস্যপদের বিষয়টি মেনে নেওয়ার জন্য প্রচণ্ড চাপে রয়েছে তুরস্ক। কারণ জোট মনে করে দেশ দুটি জোটে যোগদান বাল্টিক সাগরে ন্যাটোর অবস্থান অনেক শক্তিশালী হবে। শীতল যুদ্ধের সময় ফিনল্যান্ড ও সুইডেন নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছিল। ন্যাটোতে তাদের যোগদানের সিদ্ধান্ত কয়েক দশকের মধ্যে ইউরোপীয় নিরাপত্তা কাঠামো বড় পরিবর্তন। ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর নরডিক অঞ্চলে ন্যাটোর প্রতি জনসমর্থন গড়ে উঠেছে।
সুইডেনের ক্ষমতাসীন দল সবুজ সংকেত দেওয়ার ফলে প্রধানমন্ত্রী মাগডালেনা অ্যান্ডারসন কয়েকদিনের আনুষ্ঠানিক আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবেন। জোট মিত্রদের দ্বারা যাচাইয়ের পর এবং তুরস্ক যদি বিরোধিতা না করে তাহলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সদস্যপদ প্রদান করা হতে পারে। কূটনীতিক ও কর্মকর্তারা বলছেন, তবে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে মিত্র দেশগুলোর পার্লামেন্ট বছরখানেক সময় নিতে পারে। সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের এমন পদক্ষেপে হুঁশিয়ারি জানিয়ে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে মস্কো। তারা বলেছে, সামরিক-কারিগরি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
শনিবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনার পর ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, তাদের আলোচনা ছিল পরিমিত এবং এতে কোনও হুমকির কথা ছিল না। ফিনিশ প্রেসিডেন্ট বলেন, পুতিন বলছেন এটি একটি ভুল। আমরা হুমকি দিচ্ছি না। সবমিলিয়ে আলোচনা ছিল খুব শান্ত ও শীতল।