ঢাকা পলিটেকনিকের বেশি দামে কম্পিউটার কেনার চেষ্টা!

ক্রয় নীতি লঙ্ঘন

** আটকে দিলো বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি

ক্রয় নীতি লঙ্ঘন করে অযৌক্তিক কারণ দেখিয়ে বেআইনিভাবে সর্বনিম্ন দরদাতাকে বাদ দিয়ে বেশি দামে কম্পিউটার ক্রয়ের চেষ্টা করেছে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় মানা হয়নি ক্রয় নীতির নৈতিকতা। আইন অমান্য করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ডেক্সটপ কম্পিউটার ও আনুসাঙ্গিক সরঞ্জাম ক্রয়ের আদেশ দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ)। এরই প্রেক্ষিতে বিপিপিএ রিভিউ প্যানেল ওই ক্রয়চুক্তি বাতিল করে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কম্পিউটার সরবরাহের আদেশ দেয়ার রায় দিয়েছে। এতে সরকারের লাখ লাখ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। একইসঙ্গে ক্রয়নীতি অনুযায়ী দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠনের সময় আবশ্যিকভাবে বহিঃসদস্য অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য সকল ক্রয়কারী সংস্থাকে নোটিশ বা পত্র দিয়ে অবহিত করার উদ্যোগ নেয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছে বিপিপিএ।

জানা গেছে, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, তেজগাঁও, ঢাকা কর্তৃক ইনস্টিটিটিউটের বিভিন্ন কারিগরী ল্যাবে ব্যবহারের লক্ষ্যে ডেক্সটপ কম্পিউটারের প্রয়োজনীয় অন্যান্য কারিগরী সরঞ্জামাদি সরবরাহের জন্য গত বছরের ২২ অক্টোবর উন্মুক্ত দরপত্র (ইজিপি দরপত্র নং-১০৫৯৯৯৩) আহ্বান করে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, গ্রিন বাংলা ইঞ্জিনিয়ারিং সলিউশন, স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেড, স্টার টেক অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এবং ইনভেনশন আইটি লিমিটেড এই মোট ৫টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দরপত্র ও দাখিলকৃত কাগজপত্রাদির বিবরণী শিটের তথ্যমতে, ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ ১ কোটি ৪৬ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকায় কম্পিউটার সরবরাহের কথা জানায়। গ্রিন বাংলা ইঞ্জিনিয়ারিং সলিউশন ১ কোটি ৫১ লাখ ৫০ হাজার টাকায়, স্মার্ট টেকনোলজিস ১ কোটি ৭৩ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকায়, স্টার টেক অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ১ কোটি ৮৬ লাখ ৫৭ হাজার ৯০০ টাকায় এবং ইনভেনশন আইটি ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকায় কম্পিউটার সরবরাহে দরপত্র জমা দেয়।

পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন-২০০৬ এর ধারা ৪৮(২) অনুযায়ী, দরপত্র দাখিলকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন দরপত্র দাখিলকৃত প্রতিষ্ঠান দরপত্রটি পেয়ে থাকে। তবে ইজিপি দরপত্র নং- ১০৫৯৯৯৩ টেন্ডারটিতে ওয়ালটন সর্বনিম্ন দরপত্র দাখিল করা সত্ত্বেও তাদের কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। কার্যাদেশ দেওয়া হয় সর্বনিম্ন দরপত্রের মধ্যে চার নম্বরে থাকা স্টার টেক অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডকে, যারা সর্বনিম্ন দরদাতা থেকে ৩৯ লাখ ৬৫ হাজার ৪০০ টাকা বেশি দর প্রস্তাব করে। সর্বনিম্ন দরপত্র দাখিল করা সত্ত্বেও তাদের বিবেচনা না করায় বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) বরাবর গত ৪ জুন ওয়ালটন ডিজি-টেকের চিফ বিজনেস অফিসার মো. তৌহিদুর রহমান রাদের স্বাক্ষরে বাংলাদেশ প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা-২০০৮ এর বিধি ৫৬ অনুযায়ী সুবিচার ও প্রতিকার প্রার্থনায় ‘দরপত্র কার্যাদেশ’ সংক্রান্ত এক অভিযোগ দায়ের করা হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, দরপত্র মোতাবেক সকল শর্ত পূরণ করে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও টেকনিক্যাল মূল্যায়ন কমিটি তাদের মূল্যায়নে কতিপয় মাইনর ও অপ্রাসংগিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তার প্রতিষ্ঠানকে নন রেসপনসিভ দরপত্রদাতা হিসেবে বাদ দেয়। এছাড়াও ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ দরপত্র আহ্বান এবং ক্রয় সম্পাদনে পিপিআর-২০০৮ (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস) এবং পিপিএ-২০০৬ (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট) এর অনেকগুলো নীতির ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিপিপিএ রিভিউ প্যানেল ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর বক্তব্য গ্রহণ করে। রেসপনডেন্টের বক্তব্য অনুযায়ী জানা যায়, উক্ত টেন্ডারের মূল্যায়ন কমিটি’র সকল সদস্য ছিলেন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন বিভাগের ইন্সট্রাকটর বা শিক্ষক। ৩ সদস্যবিশিষ্ট মূল্যায়ন কমিটিতে ছিলেন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের উপধ্যক্ষ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান খান, চিফ ইনস্ট্রাকটর মো: রেজাউর রহমান এবং মোঃ মোশারফ হোসেন।

মূল মূল্যায়ন কমিটি ছাড়াও ২ সদস্যবিশিষ্ট একটি টেকনিক্যাল সাব কমিটি গঠন করা হয়। তারা ছিলেন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের চিফ ইন্সট্রাকটর মোছাঃ আয়েশা সিদ্দিকা এবং নিগার সুলতানা। অভিযোগকারী ও রেসপনডেন্টের বক্তব্য পর্যালোচনা করে রিভিউ প্যানেল অভিযোগকারীর আপিল মঞ্জুর করার সিদ্ধান্ত প্রদান করে।

এর প্রেক্ষিতে গত ৩ জুলাই রিভিউ প্যানেল-৩ এর চেয়ারপারসন মো. আলী কদর, সদস্য মো. সফিকুল ইসলাম এবং আরেক সদস্য মো. আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠি ইস্যু করে। চিঠিতে বলা হয়, এই দরপত্র প্রসঙ্গে মূল্যায়ন কমিটি স্বচ্ছতার পরিচয় দেয়নি। পিপিএ-২০০৬ এর ধারা (৭) অনুযায়ী ক্রয়কারী দরপত্র মূল্যায়নের জন্য তার কার্যালয় বহির্ভূত কারিগরি, আর্থিক বা আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ কোনো কর্মকর্তার সমন্বয়ে দরপত্র বা প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি গঠন করেনি। এছাড়া যে দুটি মাইনর কারণ দেখিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে বাদ দেয়া হয়েছিলো, তার একটির সত্যতা পাওয়া যায় নি। আরেকটি কারণ ছিলো সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির কারিগরী জ্ঞানের অভাব।

যেহেতু ক্রয়কারী কর্তৃক চতুর্থ সর্বনিম্ন দরদাতার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করলেও যেহেতু এখনো কোনো মালামাল বুঝে নেয়া হয়নি, তাই উক্ত চুক্তি বাতিল করে সর্বনিম্ন দরদাতার সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের জন্য রিভিউ প্যানেল নির্দেশ প্রদান করে। এ ছাড়া ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষকে এ ধরণের ক্রয়ের ক্ষেত্রে আরো সতর্ক থাকতে এবং মূল্যায়ন কমিটি গঠনের সময় আবশ্যিকভাবে বহিঃসদস্য অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য নির্দেশনা প্রদান করে। একইসঙ্গে বিষয়টি সকল ক্রয়কারী সংস্থাকে একটি নোটিশ বা পত্র দিয়ে অবহিত করার উদ্যোগ নেয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!