ডিরেক্ট লিস্টিং ফিরছে, শেয়ারবাজারে বড় পরিবর্তন

শেয়ারবাজারে ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের নিয়ম ফিরিয়ে আনার সুপারিশ করেছে শেয়ারবাজার সংস্কারে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গঠন করা টাস্কফোর্স। বহুজাতিক কোম্পানি এবং বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান- যাদের বার্ষিক টার্নওভার এক হাজার কোটি টাকা বা তার বেশি তারা ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের সুযোগ পাবে।ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের নিয়ম ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) ক্ষেত্রে আরও বেশকিছু পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স। কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে এক হাজার কোটি টাকা বা তার বেশি ঋণ নিতে চাইলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি মার্কেটে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করার যে নিয়ম রয়েছে তা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া আইপিওতে আসা কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রথম তিন কার্যদিবস সার্কিট ব্রেকার না রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) বিএসইসি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্কার টাস্কফোর্স কী কী সুপারিশ করেছে তার সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য ঢাকা শ্বিবিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কে এ এম মাজেদুর রহমান, হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোংয়ের সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন, প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের সিইও মনিরুজ্জামান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদ সম্মেলনে সংস্কার টাস্কফোর্সের সুপরিশের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের সিইও মনিরুজ্জামান। তিনি জানান, আমরা ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের নিয়ম ফিরিয়ে আনার সুপারিশ করেছি। বহুজাতিক কোম্পানি এবং বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান যাদের বার্ষিক টার্নওভার এক হাজার কোটি টাকা বা তার বেশি তারা ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের সুযোগ পাবেন। ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের ক্ষেত্রে কোম্পানিকে কমপক্ষে ১০ শতাংশ শেয়ার অফলোড করতে হবে।তিনি আরও জানান, এখন আইপিওতে আবেদন করতে হলে সেকেন্ডারি মার্কেটে কমপেক্ষ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকতে হয়। আমরা এই নিয়ম বাতিল করার সুপারিশ করেছি। একই সঙ্গে বিডিংয়ে অধিক সংখ্যাক যোগ্য বিনিয়োগকারী যাতে আবেদন করতে পারেন, সে জন্য তাদের আবেদেনর পরিমাণ ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে এক শতাংশ করার সুপারিশ করা হয়েছে। আইপিওতে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা যে শেয়ার পাবেন তার ৫০ শতাংশ তিন মাস লকিং থাকবে।

মনিরুজ্জামান বলেন, আইপিওতে আসার পর সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেনের প্রথম তিন কার্যদিবস কোনো সার্কিট ব্রেকার থাকবে না। তিন কার্যদিবস পর যে দাম হবে, তার পর থেকে সার্কিট ব্রেকারের নিয়ম কার্যকর হবে। এ ধরনের সুপারিশ করা হয়েছে।তিনি বলেন, এক হাজার কোটি টাকা বা তার বেশি ঋণ নিতে চাইলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

টাস্কফোর্সের এ সদস্য বলেন, শেয়ারবাজারে নতুন কোম্পানি আইপিওর জন্য আবেদন করলে প্রাথমিক যাচাই-বাছাই করবে স্টক এক্সচেঞ্জ। স্টক এক্সচেঞ্জ অনুমোদন দিলে সেই কোম্পানি বিএসইসির অনুমোদন নিয়ে আইপিওতে শেয়ার বিক্রি করতে পারবে। স্টক এক্সচেঞ্জ কোনো কোম্পানির আইপিও বাতিল করলে বিএসইসি ওই কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দিতে পারবে না।ফিক্সড প্রাইস বা স্থির মূল্য পদ্ধতিতে আইপিওর আবেদন করতে গেলে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকা থাকা লাগবে। এছাড়া বুক বিল্ডিংয়ে আবেদনের ক্ষেত্রে পরিশোধিত মূলধন কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা থাকার সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান মনিরুজ্জামান।তিনি বলেন, আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য বাকি ৫০ শতাংশ শেয়ার সংরক্ষিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০ শতাংশের মধ্যে ৩০ শতাংশ দুই লাখ টাকার কম আবেদনকারীদের জন্য, ৫ শতাংশ প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এবং বাকি ১৫ শতাংশ দুই লাখ টাকার বেশি আবেদনকারীদের জন্য রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে টাস্কফোর্সের সদস্য ডিএসইর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান বলেন, আমাদের ১৭টি বিষয় নিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। আমরা সবগুলোর বিষয়েই সুপরিশ দেবো। আশা করছি জুনের মধ্যে সব সুপরিশ জমা দিতে পারবো।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!