ডরিন পাওয়ারের বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি বাতিল

ডরিন পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেড, যা আওয়ামী লীগ পরিবারের মালিকানাধীন একটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি, তার নরসিংদী বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাথে বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি (পিপিএ) বাতিল করেছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি)।

২০২৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পুনরায় অনুমোদন পাওয়া ২২ মেগাওয়াট নরসিংদী বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্রয়চুক্তি ১১ মার্চ থেকে বাতিল করে ডরিন পাওয়ারকে চিঠি পাঠিয়েছে বিআরইবি কর্তৃপক্ষ, যা মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ডরিন পাওয়ারের তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ৬৬ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছিল। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওই কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন মেয়াদ শেষ হয়।

জুলাই গণআন্দোলনের পরে উৎপাদনের নতুন করে অনুমোদন না মেলায় ‘স্ক্রাব হিসেবে’ দুটি কেন্দ্রের সব মালামাল বিক্রি করে দেয় ডরিন পাওয়ার কর্তৃপক্ষ। তার আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করে ডরিন পাওয়ার। এ নিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি ‘গোপনে দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বিক্রি’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদন প্রকাশের পর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ডরিন পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেডের বিরুদ্ধে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে তদন্ত কমিটির প্রাথমিক তথ্যে নরসিংদী বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি (পিপিএ) ১১ মার্চ থেকে বাতিল করেছে বিআরইবি। মূল্য সংবেদনশীল সেই তথ্য ডিএসই কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে।

সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে বিএসইসির যুগ্ম পরিচালক অনু দে-কে কমিটির প্রধান করে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুজন সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক ফারুক আলম ও সহকারী পরিচালক জনি হক। তদন্ত শেষে আগামী ৬০ দিবসের মধ্যে অনুসন্ধানের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে বিএসইসি।

একই সঙ্গে তদন্তে সহায়তা করতে ডরিন পাওয়ার কর্তৃপক্ষের কাছে একটি চিঠি পাঠায় বিএসইসি। সেই চিঠি হস্তগত করে জবাব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ডরিন পাওয়ার কর্তৃপক্ষ। কমিটির প্রধান বিএসইসির যুগ্ম পরিচালক অনু দেসহ তিন সদস্য ডরিন পাওয়ারের বিক্রি হওয়া দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রস্থল পরিদর্শন করেছে।গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি ডরিন পাওয়ারের ২২ মেগাওয়াট সক্ষমতার ফেনী বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর কোম্পানিটির ২২ মেগাওয়াটের টাঙ্গাইল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর থেকে বন্ধ রয়েছে।

ডরিন পাওয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘ডিএসইকে জানিয়ে এসব মালামাল বিক্রি করা হয়েছে। কোম্পানির মোট সম্পদের ৫০ শতাংশ হলে এজিএম বা ইজিএমের প্রয়োজন পড়ে। তখন সাধারণ বিনিয়োগকারীর অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। তার নিচে হলে প্রয়োজন পড়ে না।’

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘ডরিনের উদ্যোক্তা পরিচালক কোম্পানির মোট সম্পদের ২.৪৬ শতাংশ বিক্রি করেছেন। তবে বিক্রির তথ্য সংবাদপত্রে প্রকাশ এবং উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। অন্যদিকে, পাওয়ার প্লান্টের ইঞ্জিন দুর্বল হওয়ায় পিডিবি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, ফলে গ্যাস সরবরাহের বিপরীতে উৎপাদন অনেক কম ছিল।’ ডরিন পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেড, আওয়ামী লীগ পরিবারের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী এবং পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানি, যেটি যশোরের নূরে আলম সিদ্দিকীর পরিবার পরিচালিত। প্রতিষ্ঠানের ৬৬ মেঘাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র কাগজে থাকলেও বর্তমানে উৎপাদনে নেই।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!