সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি ও শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের নাগরিক—এটি এখন প্রমাণিত সত্য। তার নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে ট্যাক্স ফাইল ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট অনুসন্ধান শুরু করেছে বলে জানা গেছে। যদিও এর আগে টিউলিপ সিদ্দিক ও তার আইনজীবী সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন, তিনি বাংলাদেশি নন, কেবল ব্রিটিশ নাগরিক।
সূত্র জানায়, ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছে এনবিআরের আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। তদন্তে টিউলিপ সিদ্দিকের বাংলাদেশে থাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছাড়াও টানা কয়েক বছরের ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের তথ্য মিলেছে। যাচাই করা হচ্ছে করযোগ্য কত টাকা তিনি পরিশোধ করেননি। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার ট্যাক্স ফাইলে থাকা অর্থের আয়-ব্যয়ের উৎস ও খাতগুলোও তদন্ত করছে। তদন্ত সূত্রে আরও জানা যায়, ব্রিটিশ নাগরিক টিউলিপ সিদ্দিক ট্যাক্স ফাইল খোলার সময় ‘নিবাসী’ কলাম পূরণ করেছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী নিবাসী হতে হলে বছরে অন্তত ১৮২ দিন বাংলাদেশে থাকতে হয়। কিন্তু বাস্তবে তিনি ঢাকায় মাঝে মধ্যে কয়েক দিনের জন্য খালা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন মাত্র, দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে অবস্থান করেননি। আরও জানা গেছে, টিউলিপ সিদ্দিক ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া শুরু করেন এবং ২০১৮-১৯ করবর্ষ পর্যন্ত রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রথমে তিনি ধানমন্ডির বাসা নং ৫৪, রোড নং ৫—এই ঠিকানায় বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে ট্যাক্স ফাইল খোলেন। পরে ২০১৪-১৫ করবর্ষে ঠিকানা পরিবর্তন করে দেখান গুলশান-১, বাসা নং ১৩, রোড নং ৭। রিটার্ন ফরমে তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (এনআইডি)ও উল্লেখ রয়েছে।
এদিকে সোনালী ব্যাংকের গণভবন শাখায় তিনি যে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা হিসাব খোলেন, সেখানেও এই ঠিকানা ব্যবহার করা হয়। ব্যাংক হিসাবটি ওপেন করা হয় ২০০৭ সালের ১ জুলাই। এরপর ওই সময় ব্যাংকে টাকার স্থিতি ছিল ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭৪ টাকা। সবশেষ ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক হিসাবে ব্যালেন্স বা স্থিতি হিসাবে রয়েছে ৯০ লাখ ৩৩ হাজার ৭৪ টাকা।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ আগস্ট ব্রিটিশ দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-কে দুদকের আইনজীবী জানান, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি) টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের নাগরিক। যদিও টিউলিপ বরাবরই দাবি করে আসছেন, তার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নেই। যুক্তরাজ্যের সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ টিউলিপ বর্তমানে বাংলাদেশে বিচারের মুখোমুখি। সরকারি প্লট অবৈধভাবে গ্রহণের অভিযোগে চলতি আগস্টের প্রথমার্ধে করা মামলার শুনানির ফাঁকে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ সুলতান মাহমুদ ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-কে আরও বলেন, লেবার পার্টির এই এমপি বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করেছেন এবং ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, টিউলিপ সিদ্দিকের খালা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। সে সময় টিউলিপের মা শেখ রেহানাও তার সঙ্গে দেশ ত্যাগ করেন।
** টিউলিপ ছয় বছর ধরে রিটার্ন দেন না
** শেখ হাসিনা ও টিউলিপকে দেশে আনার প্রক্রিয়া শুরু
** জাল স্বাক্ষর করে বোনকে ফ্ল্যাট দেন টিউলিপ
** টিউলিপরে অর্থপাচার ১২ দেশে তদন্ত হচ্ছে
** গুলশানের বিলাসবহুল ভবনই ছিল টিউলিপের স্থায়ী ঠিকানা
** শেখ হাসিনাসহ ২৩ জনের নামে গেজেট প্রকাশ
** শেখ হাসিনাসহ পরিবারের ১০ জনের এনআইডি ‘লক’
** শেখ হাসিনা ও পরিবারের সম্পদ জব্দের আদেশ
** শেখ হাসিনাসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
** শেখ হাসিনা সহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট
** হাসিনার পরিবার বিদেশে, নেতাকর্মীরা বিপদে
** বাগানবাড়ি ‘টিউলিপস টেরিটরি’