সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার আইসিটিবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি জব্দে যুক্তরাষ্ট্রে এমএলআর পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে দুদক। এ লক্ষ্যে মার্কিন কর্তৃপক্ষের সহায়তা পেতে দেশটিতে পাঠানো হচ্ছে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর)। দুদকের একটি ঊর্ধ্বতন সূত্র বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছে। এর আগে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ সেপ্টেম্বর আদালত যুক্তরাষ্ট্রে জয়ের বিভিন্ন সম্পদ—বাড়ি, গাড়ি এবং ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেন। সে নির্দেশনা কার্যকর করতেই এই এমএলএআর পাঠানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।
দুদকের নথি অনুযায়ী, সজীব ওয়াজেদের নামে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া রাজ্যে দুটি বাড়ি রয়েছে। সেগুলো হলো-১০৪১১ পার্কারহাউস ড্রাইভ, গ্রেট ফলস, ভার্জিনিয়া ২২০৬৬। যার মূল্য ৩,৮৭৯,৫৬০ ডলার (প্রায় ৪৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা)। ২৮১৭ বেল ম্যানর কোর্ট, ফলস চার্চ, ভার্জিনিয়া ২২০৪১, যার মালিক সজীব ওয়াজেদ ও তার স্ত্রী ক্রিস্টিন ওয়াজেদ। এর বাজার মূল্য ৯৯৬,৮৭৫ ডলার বা (প্রায় ৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা)। মোট স্থাবর সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৫৩ কোটি ২১ লাখ টাকা।
দুদকের তথ্যমতে, জয়ের নামে বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৮টি বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে। গাড়িগুলোর আনুমানিক মূল্য প্রায় ৪ লাখ ৪২ হাজার ৯২৪ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫ কোটি টাকা)। আদালত ইতোমধ্যেই এ গাড়িগুলো জব্দের অনুমোদন দিয়েছেন। দুদকের নথিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে জয়ের নামে অন্তত ১২টি ব্যাংক হিসাব ও ৬টি কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে রয়েছে গোল্ডেন বেঙ্গল প্রোডাকশন্স এলএলসি, প্রাইম হোল্ডিং এলএলসি ওয়াজেদ ইন অসিরিস ক্যাপিটাল পার্টনার্স এলএলসি, ব্লু হেভেন ভেনচারস এলএলসি, ট্রুপে টেকনোলজিস এলএলসি। ব্যাংক হিসাবগুলোর মধ্যে ৭টি এসব কোম্পানির নামে, ৫টি সজীব ওয়াজেদের ব্যক্তিগত, যার মধ্যে একটি যৌথ হিসাবে খোলা হয়েছে তার প্রাক্তন স্ত্রীর সঙ্গে।
গত ১৪ আগস্ট, সজীব ওয়াজেদের বিরুদ্ধে ৬০ কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করে দুদক। মামলায় বলা হয়, ২০০০ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত তিনি ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে’, ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে আয়করের বাইরে বিপুল অর্থ উপার্জন করেন এবং হুন্ডি ও অন্যান্য অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেন।
দুদক জানিয়েছে, জয়ের বিরুদ্ধে আয়কর রিটার্নে বিদেশি আয় গোপন, অননুমোদিতভাবে বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং সন্দেহজনক লেনদেন পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে আদালতে প্রমাণ দাখিলের জন্য এসব সম্পদ আলামত হিসেবে পেশ করা হবে।