অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ কর কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, জোর করে কর (আয়কর) আদায় করা যাবে না। বরং সবার কাছ থেকে কর আদায় করব। এই জন্য অনলাইন করা হয়েছে। তিনি বলেন, সেবা দিয়ে করযোগ্য সবার কাছ থেকে আয়কর আদায় করতে চাই। কর না দিলে সেবা পাওয়া দুরূহ ব্যাপার। কর দেওয়ার সক্ষমতা অনেকের আছে কিন্তু সবাই কর জালের আওতায় আসে না। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) আগারগাঁও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে ‘অনলাইন ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন’ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান ই-রিটার্ন ও কল সেন্টার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
সঞ্চয়পত্র ও ঋণ নিয়ে দেশ চালানো কঠিন মন্তব্য করে আয়কর আদায় বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, করদাতা যে টাকাটা দেয়, সেটি যেন রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা পড়ে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের কাজ করতে আয়করের প্রয়োজন হয়। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রশাসনসহ সবাই অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু মুখের কথায় তো অংশগ্রহণ হয় না, কর না দিলে সেবা পাওয়া দুরূহ ব্যাপার। দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা কর দেবেন এই টাকাটা বিফলে যাবে না।”
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমার বিষয়ে সালেহউদ্দিন বলেন, জোর করে কর আদায় করা যাবে না। বরং সবার কাছ থেকে কর আদায় করব। এই জন্যই অনলাইনটা করা। কর দেওয়ার সক্ষমতা অনেকের আছে, কিন্তু সবাই কর জালের আওতায় আসে না। টিআইএন অনেকের আছে, ফিল আপ করে না। অতএব সবাইকে সার্ভিস দিতে হবে। মিডলম্যান বা অন্য কোথাও যেন না যায়। করের টাকা যেন রাষ্ট্রীয় কোষাগারেই যায় সেদিকে নজর দিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। কোনো লিকেজ (ছিদ্র) যেন না থাকে। কোনো মিডলম্যানের কাছে বা অন্য কোথাও যেন চলে না যায়।
কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা হলেই ঘুষ বা অনিয়মের সুযোগ থাকে ইঙ্গিত দিয়ে সালেহউদ্দিন বলেন, কর আদায় করতে অনলাইনকে গুরুত্ব দিচ্ছি; কেননা করদাতা যদি ট্যাক্স অফিসারের চেহারা না দেখে, তাহলে একটু স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আর চেহারা দেখা মানেই জানেন তো অনেক কিছুই।
অপরদিক, চাকরিজীবীদের ভবিষ্যৎ তহবিলসহ বিভিন্ন ভাতায় সরকারি কর্মকর্তারা কর ছাড় পেলেও বেসরকারি খাতের কর্মীরা তা পান না উল্লেখ করে প্রশ্ন করা হলে চেয়ারম্যান বলেন, এটা ঠিক যে কর বেশি দেন বেসরকারি খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, কিন্তু করের টাকায় সুবিধা বেশি পান সরকারি ব্যক্তিবর্গরা। আমরা কিছু সংস্কার কাজ হাতে নিয়েছি। ইতোমধ্যেই বৈষম্য দূর করতে কিছু কাজ করছি, সামনে আরও হবে। এর জন্য আপনাদের সহযোগিতা লাগবে।
ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে করদাতাকে সেবা দেওয়া শুরু করেছে জানিয়ে স্বাগত বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ভবিষ্যতে আমরা এনবিআরের সকল কার্যক্রমকে কমপ্রিহেনসিভ অটোমেশন করতে পারব। সোমবার হতে অনলাইন রিটার্ন দাখিল সিস্টেমে করদাতাদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার পাশাপাশি আয়কর সনদ ও টিআইন সনদ ও রিটার্ন নেওয়া যাবে। পেমেন্ট মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস বা অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে করা যাবে। ২০২১ সালে প্রথম অনলাইন রিটার্ন দাখিল চালু হওয়ার পর ৬১ হাজার রিটার্ন জমা পড়লেও পরের বছর তা বেড়ে ২ লাখ ৪৪ হাজার এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হয় ৫ লাখ ২৬ হাজার। আগামী বছর ১ জুলাই থেকে অর্থাৎ করবর্ষের প্রথম থেকেই অনলাইনে রিটার্ন দেয়া যাবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এবার আমরা আশা করছি ব্যক্তিশ্রেণির কর দাতাদের যত ট্যাক্স রিটার্ন পড়বে তার সিংহভাগই অনলাইনে পড়বে। খুব জোরেশোরে কাজ করছি। অনেক দূর এগিয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে কল সেন্টার চালু করতে পারব। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ফোন করলে করদাতারা ই-রিটার্ন সংক্রান্ত যে কোনো অসুবিধায় ফোন দিয়ে তাৎক্ষণিক পরামর্শ পাবেন বলেও জানানো হয় আয়োজনে। এ বছর অনলাইনে ১০ লাখ রিটার্ন জমার লক্ষ্যের কথা জানান অর্থ উপদেষ্টা। পরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ১৫ লাখ রিটার্নের লক্ষ্য ধরছি। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ১৫ লাখ হলে তো ভালোই। আমরা তো চাই ১ কোটি ৪ হাজার করদাতা থাকলে ১ কোটিই অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করুক।