গত বছরের জুলাই আন্দোলনে গুলির আঘাতে অসংখ্য আন্দোলনকারী দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাক্ষ্য দিয়েছেন চিকিৎসক। সোমবার (২৫ আগস্ট) জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালের রেটিনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাকিয়া সুলতানা নীলা ট্রাইব্যুনালে হাজির হন। তিনি জানান, বিক্ষোভ চলাকালে চোখে গুলি লেগে অসংখ্য আন্দোলনকারী তাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের অনেকে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন।
এই চিকিৎসক বলেন, গুলিবিদ্ধ ৮৬৪ জন চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৪৯৩ জন চিরতরে এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন। আর উভয় চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন ১১ জন।
ট্রাইব্যুনালে ডা. জাকিয়া ১৭ জুলাই থেকে ৬ আগস্টের বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রোগীর প্রচুর চাপ ছিল সে সময়। ১৮ ও ১৯ জুলাই ছিল সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন। আমি অপারেশন থিয়েটারে ছিলাম, খবর পেলাম জরুরি বিভাগে উপচে পড়া ভিড়। ভয়াবহ দৃশ্য দেখেছি সেদিন। শতাধিক রোগী রক্তাক্ত চোখ ধরে বসে আছেন। তাদের সবার বয়স ১৪ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে, বলেন এই চিকিৎসক। তিনি আরও বলেন, কেউ এক চোখ ধরে বসে আছেন, কেউ দুই চোখ। গুলিতে চোখ ছিদ্র হয়ে রক্ত ঝরছিল।
অনেক রোগীর কর্নিয়া, স্ক্লেরাল ছিদ্র এবং চোখের অন্যান্য অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি। এই চিকিৎসক আরও সাক্ষ্য দেন যে, অনেক রোগী হয়রানির ভয়ে ভর্তির সময় ইচ্ছা করে ভুল নাম, ফোন নম্বর দিয়েছিলেন। এটি তাদের আত্মরক্ষার কৌশল ছিল, বলেন তিনি।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশ সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে চলমান মামলার সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন ডা. জাকিয়া সুলতানা নীলা। এই মামলায় তিনি ২১তম সাক্ষী। ট্রাইব্যুনাল তার পুরো বক্তব্য রেকর্ড করেছে।