জুলাইয়ে রেমিট্যান্সে ২৯% প্রবৃদ্ধি

চলতি অর্থবছরের শুরুটা রেমিট্যান্স আয়ের ক্ষেত্রে ইতিবাচক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৪৭ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ২৯ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে যেখানে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯১ কোটি ডলার, সেখানে ২০২৫ সালের একই সময়ে আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার।

ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রবাসী আয়ের উচ্চ প্রবৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে এবং মুদ্রাবাজারে ডলারের ওপর চাপ কিছুটা কমেছে। তাঁদের মতে, হুন্ডির মতো অবৈধ পথে অর্থ পাঠানো বন্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ এবং বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে দেওয়া বিভিন্ন প্রণোদনাই এ প্রবৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, গত কয়েক মাসে বিদেশি সব বকেয়া পরিশোধের ফলে দেশের লেনদেন ভারসাম্যে উন্নতি হয়েছে এবং ডলারের ওপর চাপ অনেকটাই কমে গেছে। এতে বৈদেশিক ব্যাংকগুলোর আস্থা ফিরে এসেছে, যা মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফিরিয়েছে। সদ্য শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলার বা ২৭ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে যেসব ব্যাংক আগের মতো প্রতিযোগিতা করে ডলার কিনত, তাদের আয় কমেছে। বিপরীতে, বিস্তৃত নেটওয়ার্ক থাকা ব্যাংকগুলো বেশি রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে পেরেছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে সবচেয়ে বেশি আয় এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে—৫৩ কোটি ডলার। এরপর রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক (২৪ কোটি ডলার), কৃষি ব্যাংক (২৩ কোটি), ব্র্যাক ব্যাংক (১৭ কোটি), জনতা ব্যাংক (১৩ কোটি), ট্রাস্ট ব্যাংক (১২ কোটি) এবং ঢাকা ব্যাংক (১০ কোটি ডলার)।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ। আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই আয় ছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, এক বছরে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার বা ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ। এর আগে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে, যার পরিমাণ ছিল ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার।

প্রবাসী আয় বৃদ্ধির প্রভাবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার এখন অনেকটাই স্থিতিশীল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ বিলিয়ন ডলারে। তবে আইএমএফের বিপিএম৬ পদ্ধতিতে হিসাব করলে এই রিজার্ভের পরিমাণ ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাণিজ্যঘাটতি কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৫ কোটি ডলারে, যা আগের বছরের ২ হাজার ২৪৩ কোটি ডলার থেকে কম। এর আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৩৮ কোটি ডলার। আমদানির তুলনায় রপ্তানি বাড়ায় এই ঘাটতি হ্রাস পেয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!