জুন পর্যন্ত বিদ্যুতে ৬৩ হাজার কোটি টাকার চাহিদা

গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে জুন পর্যন্ত ৬৩ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। চলতি মাস থেকে জুন পর্যন্ত এলএনজি, বিদ্যুৎ ও তেল আমদানি এবং বকেয়া পরিশোধে এই অর্থ প্রয়োজন উল্লেখ করে অর্থ বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির বকেয়ার পরিমাণই প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

চৈত্র মাস শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গরম বাড়ছে। আগামী এপ্রিল ও মে মাসে তাপমাত্রার পারদ ওপরের দিকেই থাকবে। একই সঙ্গে চলছে সেচ মৌসুম। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এবার গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে। বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, এবারের গরমে লোডশেডিং হতে পারে দেড় হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু অর্থ ও ডলার সংকটে জ্বালানি আমদানি বাধাগ্রস্ত হলে লোডশেডিং ৩ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যেতে পারে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ চিত্র

বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের প্রকৃত উৎপাদন সক্ষমতা ২৭ হাজার ১১৫ মেগাওয়াট। গরমে বিদ্যুতের চাহিদা হবে ১৮ হাজার ২৩২ মেগাওয়াট। তবে জ্বালানি সংকট, কেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণ ও অদক্ষতার কারণে চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। গরমে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দিনে প্রয়োজন দেড় লাখ টন ফার্নেস অয়েল ও ১৫ থেকে ১৬ হাজার টন ডিজেল। দৈনিক কয়লার চাহিদা ৪০ হাজার টন। বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে দিনে ১৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ পাচ্ছে গড়ে ১০৫ কোটি ঘনফুট। এপ্রিল থেকে ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে দেওয়া হবে। গত বছর বিদ্যুৎ খাতে গড়ে ১১০ থেকে ১১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস দিয়েছিল পেট্রোবাংলা।

বকেয়ার বোঝা

অর্থ সংকটে কয়লা, ফার্নেস অয়েল ও গ্যাস আমদানি ব্যাহত হওয়ায় গত বছর গরম মৌসুমে বিভিন্ন সময় পায়রা, রামপাল, এস আলমসহ অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ ছিল। এ কারণে লোডশেডিং বেড়ে গিয়েছিল। বাধ্য হয়ে শেখ হাসিনার সরকার তালিকা করে লোডশেডিং দিয়েছিল দেশজুড়ে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বকেয়া বিল ফের বাড়ছে। বিদ্যুৎ, তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোর পাওনা ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। কোম্পানিগুলো দ্রুত পাওনা পরিশোধে এখন অন্তর্বর্তী সরকারকে তাগাদা দিচ্ছে। জানা গেছে, বিদ্যুৎ কেনা বাবদ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি পাওনা জমেছে।

বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপ্পা) সভাপতি কে এম রেজাউল হাসনাত বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারে অর্থ সংকট চলছে, সেটা সবাই জানে। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের হাত-পা বাঁধা। অর্থ না পেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব নয়, যা গরমে প্রভাব ফেলবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরূল ইমাম বলেন, কয়লা, এলএনজি, তেলসহ দেশের জ্বালানি খাত আমদানিনির্ভর। বকেয়ার কারণে গত বছর বিপাকে পড়েছিল এ খাত। সময়মতো অর্থ ছাড় না হলে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি মিলবে না। এতে গরমে দেশে লোডশেডিং বেড়ে যেতে পারে।

জুন পর্যন্ত অর্থ চাহিদা

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, গরমে জ্বালানি চাহিদা মেটাতে ও বকেয়া শোধ করতে অর্থ বিভাগের কাছে বাড়তি টাকা চাওয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, চলমান ও বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য জুন পর্যন্ত ১৪ হাজার ৩০ কোটি টাকা (১১৫ কোটি ডলার) লাগবে। এর মধ্যে ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের (আদানি বাদে) বিল শোধে কমপক্ষে ৯ হাজার ৬৮ কোটি টাকা প্রয়োজন। বাকি টাকা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কয়লা আমদানির জন্য ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়া মার্চ থেকে জুনের মধ্যে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিল পরিশোধে অতিরিক্ত ৭ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা চেয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

চলতি মাস থেকে জুনের মধ্যে ৩৬টি এলএনজি কার্গো আমদানির জন্য জ্বালানি বিভাগ ২০ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা চেয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা এলএনজি আমদানির বকেয়া বিল পরিশোধে প্রয়োজন। একই সময়ে, জ্বালানি তেল আমদানি বিল এবং ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফিন্যান্স করপোরেশন (আইটিএফসি) ঋণ পরিশোধে আরও ২০ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা প্রয়োজন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!