জুনেই আদানির সঙ্গে বৈঠকে বসবে পিডিবি

বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার দাম নির্ধারণ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ মেটাতে ঢাকায় বৈঠকে বসছে ভারতের আদানি পাওয়ার ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। ২২ ও ২৩ জুন এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আদানি পরিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি, যা বাংলাদেশের কিনে নেওয়া বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি খরচে সরাসরি প্রভাব ফেলছে।

পিডিবির হিসাব অনুযায়ী, তাদের নির্ধারিত কয়লার মূল্যের ভিত্তিতে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত আদানি পাওয়ারের কাছে বাংলাদেশের বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৪৮ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। তবে আদানি কর্তৃপক্ষ বলছে, বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৭০ কোটি ডলারেরও বেশি। কয়লার দামের হিসাব পদ্ধতিতে মতভেদ থাকায় এই বড় পার্থক্য তৈরি হয়েছে। মূলত এ বিষয়টির সুরাহা করতেই দুই পক্ষ বৈঠকে বসছে।

পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানান, কয়লার মূল্য নির্ধারণে মতপার্থক্য মেটাতে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) অনুযায়ী, উভয় পক্ষ থেকে চারজন করে প্রতিনিধি আলোচনায় অংশ নেবেন। পিডিবির পক্ষ থেকে আলোচনায় নেতৃত্ব দেবেন প্রতিষ্ঠানটির সদস্য (কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স) আ ন ম ওবায়দুল্লাহ। অপরদিকে, আদানির প্রতিনিধি দলে থাকছেন চারজন আন্তর্জাতিক আইনি বিশেষজ্ঞ—অধ্যাপক লরেন্স বু ও লুসি রিড (আর্বিট্রেশন চেম্বারস, সিঙ্গাপুর) এবং টবি ল্যান্ডাউ ও অধ্যাপক ভি কে রাজা (ডাক্সটন হিল চেম্বারস, সিঙ্গাপুর)।

গত ২৩ মে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ফারজানা মমতাজের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন আদানি পাওয়ারের প্রধান নির্বাহী এসবি খাইলিয়া। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কোম্পানিটির প্রেসিডেন্ট (কমার্শিয়াল) এমআর কৃষ্ণ রাও। সাক্ষাতে তারা দ্রুত বকেয়া পরিশোধের অনুরোধ জানান এবং জানান, বিল পরিশোধে দেরির কারণে পিডিবির ওপর ৭ কোটি ৮৬ লাখ মার্কিন ডলারের মতো সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে, যা প্রতি মাসে প্রায় ৬০ লাখ ডলার করে বাড়ছে। তারা আরও বলেন, চলতি বছরের জুনের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ করা হলে প্রায় ৫ কোটি ডলারের জরিমানা মওকুফ করা সম্ভব। তবে এ পর্যন্ত পিডিবির পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, বাংলাদেশের বেশির ভাগ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আমদানি করা কয়লার দাম নির্ধারণে সাধারণত ইন্দোনেশিয়ার সূচক অনুসরণ করে। কিন্তু আদানি পাওয়ার তাদের কয়লার মূল্য নির্ধারণে ‘ব্লেন্ডেড ইনডেক্স’ ব্যবহার করে, যেখানে ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসলসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সূচকের গড় মূল্য বিবেচনায় নেওয়া হয়। পিডিবির দাবি, এই পদ্ধতির ফলে পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি টন কয়লার দাম ১০ থেকে ১২ ডলার বেশি পড়ছে। এরই প্রভাবে বিদ্যুতের মোট বিলেও বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি হচ্ছে।

পিডিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে করা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে কয়লা কেনায় বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ইন্দোনেশিয়া থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কয়লা কিনে পায়রা কেন্দ্র সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পায়, যার সরাসরি সুবিধা পায় পিডিবি। একইভাবে, রামপাল কেন্দ্রও সারা বছরের জন্য কয়লা কিনতে ছাড়ের শর্তে চুক্তি করেছে। কিন্তু আদানি পাওয়ার নিজস্ব খনি থেকে কয়লা সরবরাহ করে এবং তাদের চুক্তিতে ছাড়ের কোনো ব্যবস্থাই নেই। ফলে আদানির সরবরাহকৃত কয়লার দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লা কেনার প্রকৃত মূল্য অনুযায়ী বিল করে। কিন্তু আদানি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাজারের সূচকের গড় মূল্য হিসাব করে এবং এরপর নিজস্ব ব্যবহৃত কয়লার মান অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করে। এ কারণেই বিলের পরিমাণে পার্থক্য তৈরি হচ্ছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!