জিপিএইচ ইস্পাতের মুনাফা কমে লোকসানে

চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) জিপিএইচ ইস্পাত এক হাজার ৬২৬ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করলেও নিট লোকসান করেছে এক কোটি সাত লাখ টাকা। গত বছরের একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি ৪৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা নিট মুনাফা করেছিল। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটি মোট ৩০ কোটি ৩০ লাখ টাকা নিট মুনাফা করেছে। কাঁচামাল আমদানি, উৎপাদন ব্যয় এবং ঋণের উচ্চ সুদের বোঝা এই প্রান্তিক লোকসানের প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।

২০২৪-২৫ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে জিপিএইচ ইস্পাত এক হাজার ৬২৬ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করলেও এক কোটি সাত লাখ টাকার নিট লোকসান করেছে। ওই সময়ে কাঁচামাল কিনতে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা, প্রশাসনিক ও বিক্রয়-পরিবহন খরচ ছিল ৪১ কোটি টাকা, ব্যাংকঋণের সুদ বাবদ গুনতে হয়েছে ১৫৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা এবং কর পরিশোধে খরচ হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। সব ব্যয় মেটানোর পরও মুনাফায় ফেরা সম্ভব হয়নি। অথচ আগের বছরের একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি ৪৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা নিট মুনাফা করেছিল। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে জিপিএইচ ইস্পাত ৩০ কোটি ৩০ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। এই সময়ে বিক্রি আয় দাঁড়ায় চার হাজার ৪০০ কোটি টাকা। বিশ্লেষণে দেখা যায়, কাঁচামালের আমদানি ব্যয়, উৎপাদন খরচ ও ঋণের উচ্চ সুদের বোঝা প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক চাপে বড় ভূমিকা রেখেছে।

জিপিএইচ ইস্পাত সূত্রে জানা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জিপিএইচ ইস্পাত কয়েক বছর আগে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে কোয়ান্টাম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস প্রযুক্তিনির্ভর একটি আধুনিক স্টিল মিল স্থাপন করে। এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, পুরো এশিয়ার মধ্যেও এ ধরনের প্রথম ইস্পাত কারখানা। এই কারখানা দেশের ইস্পাত শিল্পে প্রযুক্তিগত নতুন ধারা এনেছে।তবে এই কারখানার স্থাপন ও পরিচালনায় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিষ্ঠানটি ৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে, যেখানে তাদের পরিশোধিত মূলধন মাত্র ৪৮৩ কোটি টাকা—অর্থাৎ মূলধনের প্রায় ১২ গুণের বেশি। মাত্র তিন মাস আগেও এই ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা; সেই হিসেবে এই সময়ের মধ্যে ঋণ বেড়েছে ৪৭৮ কোটি টাকা।চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে জিপিএইচ ইস্পাত ৩০ কোটি ৩০ লাখ টাকা নিট মুনাফা করলেও একই সময়ে সুদ বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা—যা মুনাফার প্রায় ১৩ গুণ। সুদের হার বাড়তে থাকায় এ খাতে ব্যয় আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জিপিএইচ ইস্পাতের ব্যবসায়িক লোকসান ও আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিক্রি কমে যাওয়া ও ব্যাংকঋণের সুদ পরিশোধের চাপে কোম্পানিটি লোকসানে পড়েছে। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বছর শেষে লাভে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে এবং লভ্যাংশ দেওয়ারও আশা রাখেন। তিনি আরও বলেন, কয়েক বছরের ব্যবধানে ডলারের বিনিময় হার ৮৫ টাকা থেকে বেড়ে ১২২ টাকায় পৌঁছেছে। এর প্রভাবে আমাদের কার্যকর মূলধন (ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল) উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। পাশাপাশি গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে, কিন্তু বাজারে চাহিদা বা দাম সেই অনুপাতে বাড়েনি। এ কারণেই প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক চাপে রয়েছে।

২০১২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জিপিএইচ ইস্পাতের অনুমোদিত মূলধন এক হাজার কোটি টাকা, আর পরিশোধিত মূলধন ৪৮৩ কোটি টাকা। কোম্পানিটির রিজার্ভে রয়েছে এক হাজার ৯২২ কোটি টাকা। মোট শেয়ারের সংখ্যা ৪৮ কোটি ৩৮ লাখ ৮৩ হাজার ৪৫৬টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকগণ ধারণ করেন ৪১ দশমিক ৫৯ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ১৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং বাকি ৩৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের দখলে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মঙ্গলবার (৬ মে) কোম্পানিটির শেয়ারের সমাপনী দর ছিল ১৯ টাকা ৬০ পয়সা। গত এক বছরে এই শেয়ারের দর ১৯ টাকা ১০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ৩৩ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত ওঠানামা করেছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!