বাংলাদেশ সরকার টু সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে ভারত থেকে চাল আমদানির পরিকল্পনা করছে। এ লক্ষ্যে দেশটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের উদ্যোগ নিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় দুই দফায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। তবে ১৭ জুন (মঙ্গলবার) পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
গত জানুয়ারিতে ভারত থেকে চাল আমদানির লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রথম চিঠি পাঠায় খাদ্য মন্ত্রণালয়। তবে কোনো অগ্রগতি না থাকায় ১৮ মে দ্বিতীয়বারের মতো আরেকটি চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়টি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখতে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের পাশাপাশি প্রয়োজন হলে আন্তর্জাতিক উৎস থেকেও চাল আমদানি করে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের পাশাপাশি সরকার টু সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিও অনুসরণ করা হয়। এই পদ্ধতিতে চাল আমদানির জন্য এরই মধ্যে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) রয়েছে। একইভাবে, সুলভ মূল্যে ভারতের নন-বাসমতী সেদ্ধ চাল আমদানির জন্যও একটি এমওইউ স্বাক্ষর করা যেতে পারে।
খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও সচিবের দায়িত্বে থাকা প্রদীপ কুমার দাস বিষয়টিকে ‘স্পর্শকাতর’ হিসেবে উল্লেখ করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এখনো এমওইউ স্বাক্ষর হয়নি।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে চাল আমদানির প্রক্রিয়া জটিল এবং অনেক সময় সরবরাহের নিশ্চয়তা পাওয়া যায় না। অন্যদিকে, ভারত অন্যতম প্রধান চাল রপ্তানিকারক দেশ এবং সেখান থেকে আমদানিতে পরিবহন খরচ তুলনামূলকভাবে কম। এ কারণেই ভারতের সঙ্গে এমওইউ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে সরকার। এমওইউ স্বাক্ষর হলে জিটুজি পদ্ধতিতে সরবরাহের একটি নির্ভরযোগ্যতা তৈরি হয়, কারণ এ ধরনের চুক্তিতে এক ধরনের দায়বদ্ধতা থাকে। তবে মূল্য বেশি হলে সরকার জিটুজি বাদ দিয়ে উন্মুক্ত দরপত্রের পথেও যেতে পারে।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন ও আদাসহ ছয়টি নিত্যপণ্য ভারত থেকে আমদানির জন্য বার্ষিক কোটা চায়। সে সময় ভারত আলাদাভাবে এসব পণ্যের কোটা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ পর্যন্ত কয়েক দফা চিঠি চালাচালি ও আলোচনার পরও কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ভারত যখন চাল, পেঁয়াজ ও গম রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, তখন বাংলাদেশ বিপাকে পড়ে। তবে বার্ষিক কোটা থাকলে এসব পণ্যের রপ্তানি সামগ্রিকভাবে বন্ধ থাকলেও বাংলাদেশ তা থেকে বাদ থাকবে। বর্তমানে ভারত ভুটান ও মালদ্বীপকে এ ধরনের সুবিধা দিয়ে আসছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে অবস্থান করছেন। এ পরিস্থিতির পর থেকেই বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেয়। ৯ এপ্রিল ভারত পেট্রাপোল ও গেদে স্থলবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে উড়োজাহাজে পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে। এর জবাবে ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশ ভারত থেকে স্থলপথে সুতা আমদানি বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে, ১৭ মে ভারত বেশ কয়েকটি বাংলাদেশি ভোগ্যপণ্যের আমদানি বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়।