চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) থেকে জাল ডেলিভারি চালান ব্যবহার করে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে একটি কন্টেইনার খালাসের চেষ্টা করা হয়। এ সময় বন্দর কর্তৃপক্ষ তিনজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। আটককৃতদের মধ্যে দুজন এনসিটির সদ্য সাবেক অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেকের কর্মচারী। এ ঘটনায় গেট সার্জেন্ট উৎপল ধর বাদী হয়ে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) থেকে শুল্ক না দিয়ে জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে কন্টেইনার বের করে নেওয়ার ঘটনা আগেও বহুবার ঘটেছে বলে জানিয়েছেন বন্দরসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। তবে ৭ জুলাই ড্রাইডক কর্তৃক এনসিটির দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি প্রথম জালিয়াতির ঘটনা, যা ধরা পড়ে। সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটে বুধবার (৯ জুলাই) মধ্যরাতে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে একটি লরি (চট্ট-মেট্রো-ঢ-৮১-০৫৫০) ১ নম্বর গেট দিয়ে বন্দরে প্রবেশ করে। লরির চালক ছিলেন দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহরের সল্টগোলা ক্রসিং এলাকার বাসিন্দা মো. দুলাল, যিনি মামলার ২ নম্বর আসামি। তিনি যে ডেলিভারি চালান দেখান, তা যাচাই করে নিরাপত্তা টিম সেটিকে জাল বলে শনাক্ত করে, কারণ সেটির সঙ্গে রেজিস্টার ও মূল নথির কোনো মিল ছিল না।
পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত গেট সার্জেন্ট মো. মওদুদ আহমেদ ডেলিভারি চালানে থাকা স্বাক্ষরটি জাল বলে নিশ্চিত করেন। এরপর চালক মো. দুলালকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান, ‘এম হক এন্টারপ্রাইজ’-এর জেটি সরকার মো. রহিম (১ নম্বর আসামি) তাকে জাল ডকুমেন্ট সরবরাহ করেন এবং কন্টেইনার খালাসের পুরো প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেন। এদিকে মামলার ৩ ও ৪ নম্বর আসামি—মেহেদী হাসান হৃদয় (২৪) ও সৈয়দ মিজানুর রহমান (৪৮)—দুজনেই এনসিটি ইয়ার্ডে সাইফ পাওয়ারটেকের অধীনে বার্থ অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তারা রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি (আরটিজি) মেশিন ব্যবহার করে যাচাই না করেই কন্টেইনারটি দুলালের লরিতে তুলে দেন। উল্লেখ্য, আরটিজি মেশিন সাধারণত ভারী কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ও স্থানান্তরের কাজে ব্যবহৃত হয়।
বন্দরের নিরাপত্তা টিম কন্টেইনার, লরি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আটক করে বন্দর থানায় হস্তান্তর করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেন, পরস্পর যোগসাজশে জাল কাগজপত্র তৈরি করে প্রতারণার মাধ্যমে কন্টেইনার (নম্বর: CAAU8788963×40) খালাসের চেষ্টা করেছিলেন। কন্টেইনারটি এখনো কাস্টমস কর্তৃক শুল্কায়ন হয়নি, ফলে এর ভিতরে কী রয়েছে তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। বর্তমানে কন্টেইনার ও লরিটি বন্দরের নিরাপত্তা টিমের হেফাজতে রয়েছে। তবে জাল কাগজ তৈরির মূল হোতা সিএন্ডএফ এজেন্ট ‘এম হক এন্টারপ্রাইজ’-এর জেটি সরকার মো. রহিম এখনও পলাতক। তিনি মামলার ১ নম্বর আসামি। নগরীর বারিক বিল্ডিং স্ট্যান্ড রোডের সাবের প্লাজায় এম হক এন্টারপ্রাইজের (লাইসেন্স নম্বর ৩৭৯৯/১৩) কার্যালয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোজাম্মেল হক নামে একজন ব্যবসায়ী।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মুহাম্মদ সুলতান আহসান জানান, জালিয়াতির ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দুজন সাইফ পাওয়ারটেকের কর্মচারী এবং অপরজন একটি লরির চালক।
বন্দর সূত্র জানায়, সম্প্রতি নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব সাইফ পাওয়ারটেকের কাছ থেকে নৌবাহিনীর অধীন ড্রাইডকের কাছে হস্তান্তর করা হলেও, এখনো প্রায় সব দায়িত্বেই সাইফ পাওয়ারটেকের লোকজন রয়েছেন।
এদিকে, ঘটনার পর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের শীর্ষ কর্মকর্তারা বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছে বন্দরসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র। সূত্রটি জানায়, বন্দরের অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সাইফ পাওয়ারটেকের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ১১ বছর ধরে বন্দর সচিবের দায়িত্বে থাকা ওমর ফারুককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
** সাইফ পাওয়ারকে বিদায়ে লাগলো ১৭ বছর
** এনসিটি ছাড়ছে সাইফ পাওয়ারটেক
** সাইফ পাওয়ারটেকের সম্পত্তি নিলামে
** ম্যানেজ করেই বন্দরে কাজ পান ‘সাইফ পাওয়ার’
** রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বন্দরে গাড়ি চালায় সাইফ পাওয়ারটেক
** বন্দরে সাইফ পাওয়ারটেকের সব ‘অনিয়ম-ই-নিয়ম’
** বন্দরের ‘ক্ষমতাধর’ সাইফ পাওয়ারটেক
** সাইফ পাওয়ারটেকের অভিযোগ তদন্ত করবে দুদক
** নৌবাহিনী নিতে পারে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব
** কমলাপুর আইসিডি: ঠিকাদার নিয়োগে শর্ত শিথিল চবকের
** করফাঁকি আর পাচার ৪৬ হাজার, গোপন ১০ হাজার কোটি